সুব্রত দাম, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ম্যাক্সিকোর শুষ্কভুমির নীচে লুকিয়ে আছে পৃথিবীর আর এক রহস্যময় জগত্‍। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা,গভীর এবং বিস্ময়কর গুহাগুলির মধ্যে একটি। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত এই গুহার রহস্য সবার কাছে অজানাই ছিল। সেই সময়কার অধিবাসীরা গুহার ভেতর চলাফেরার জন্য একটি রাস্তা তৈরি করেন এবং তারা গুহাটির নামকরণ করেন 'লেচুগুইল্লা"।  

এখনো পর্যন্ত প্রায় ২০০ কিলোমিটার গুহাপথ নথিভুক্ত করা হয়েছে। প্রথমদিকে কেউই গুহাটির আকার সম্পর্কে কোনো ধারনা করতে পারেনি। কিন্তু এই গুহার সুবিশাল আকারই এর সবচেয়ে বড়ো রহস্য নয়। আবিষ্কারের কয়েক বছরের মধ্যেই এটি পৃথিবীর সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর গুহা হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। এই গুহার অভ্যন্তরে রয়েছে পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর নির্মাণ শিল্পশৈলী।

এই গুহাটির দেওয়াল ফুলের মতো ক্রিস্টালে সমৃদ্ধ। ক্রিস্টালগুলো অধিকাংশই জিপসামের তৈরি। আর এই জিপসাম হলো একটি খনিজ লবন যা চুনাপাথর থেকে তৈরি হয়। আসলে সালফিউরিক অ্যাসিডে যখন চুনাপাথর দ্রবীভূত হয় তখন তৈরি হয় এই জিপসাম। গুহাটিতে জিপসামের এই সাজসজ্জা মাইলের পর মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত। গুহার ভেতরে প্রবেশ করলেই আপনাদের চোখে পড়বে বড় বড় প্রাসাদের মত অসংখ্য পিলার। যে গুলোর এক একটির উচ্চতা প্রায় ১৫ ফুট।

এই গুহারই আর একটি কক্ষের জলাশয়ে মুক্তার মতো বস্তু পাওয়া যায়। এদেরকে বলে “cave pearls” বা গুহা মুক্তা। আর যে কক্ষটিতে এই কেইভ পার্ল আছে, সে কক্ষটির নাম দেওয়া হয়েছে পার্লসিয়ান গালফ।  

এবার স্বাভাবিক ভাবেই আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগবে তাহলে কি ভাবে তৈরী হয় এই গুহা মুক্তা? চলুন জেনে নিই সেই মুক্তা রহস্য। আমরা প্রত্যেকেই জানি যে ঝিনুকের ভিতরে যখন কোনো বালির দানা ঢুকে যায় তখন সেই বালির দানার চারপাশে মিউকাস জাতীয় পদার্থ জমা হতে থাকে। একসময় স্তরে স্তরে সেই মিউকাস জমা হয়ে সময়ের পরিক্রমায় সেই স্তরগুলো ধীরে ধীরে কঠিন হয়ে মুক্তার রূপ নেয়।

আর এই কেইভ পার্ল বা গুহা মুক্তার বেলায় গুহার ছাদ থেকে চুইয়ে চুইয়ে যে জল নীচের জলাশয়ে পড়ে, তাতে অন্যান্য খনিজ লবণের সাথে থাকে খুব সামান্য পরিমাণের ক্যালসিয়াম। অনেক বছর ধরে সেই ক্যালসিয়াম জমা হতে হতে তৈরি হয় পাথরের ছোট ছোট টুকরো। সেই টুকরো গুলোর উপর আবারও ক্যালসিয়াম পড়ে জমা হয় এবং কালের আবর্তে তা রূপ নেয় মসৃণ গোলাকার মুক্তায়!

তবে, শুধু লেচুগুইল্লা গুহাই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন গুহায়-ই পাওয়া যায় এই মুক্তা। তবে সেই মুক্তা  সংখ্যায় তেমন বেশী হয় না। সবচেয়ে বেশী গুহা মুক্তা পাওয়া গেছে মেক্সিকোর “Gruta de las Canicas” বা Cave of the Marbles গুহায়। প্রায় ২০ কোটির মতো কেইভ পার্ল দেখা গেছে এই গুহাটির মেঝেতে, যা কিনা কোনো কোনো স্থানে এক মিটার বা তার চেয়েও বেশী গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত! তবে এতো মুক্তা তৈরি হওয়ার কৌশল সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি।

গুহা মুক্তা সাধারণত গোলাকার হয়। তবে এরা অনিয়মিত, সিলিন্ডার, কিউব, ষড়ভুজ কিংবা ডিমের মতো আকৃতিরও হয়। মাঝে মাঝে কয়েকটি মুক্তা একসাথে জোড়া হয়ে আঙুরের গোছার আকৃতি ধারণ করে।

বেশীরভাগ মুক্তাই এক সেন্টিমিটারের চেয়ে কম প্রশস্ত হয়। তবে বড় গুহা মুক্তার ব্যাস কুড়ি সেন্টিমিটারও হতে পারে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গুহা, ভিয়েতনামের Hung Son Doong-এ অবশ্য বেসবল আকারের গুহা মুক্তাও পাওয়া গেছে।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours