সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজ:
আজ থেকে ৫৬+ বছর আগে কোনও এক আলতো সকালে এই অমৃত সুধাময়ী ভদ্রমহিলা তাঁর ওম-জঠর থেকে ছিন্ন করে আমাকে প্রথম পৃথিবীর শক্ত অভিযোজন শিখিয়ে ছিলেন। ওম পরশের অনন্ত সোহাগ, মূহুর্তে বিবর্তন ঘটে যায় আমার জীবনের প্রথম লড়াই করে বাঁচতে চাই নব বাসভূমির এই বিশ্বে। সহসা যেন নব্য গ্রহান্তরের অভিঘাতে আমি তখন বিহ্বল ও একাকী। খিদে ভয় ও বাঁচার দিশেহারা আর্তনাদে আমি শুরু করে দিই চিল চিৎকার। ওঁয়া ওঁয়া ওঁয়া করে।
আর তখনই দীর্ঘ ক্লান্ত অবসন্ন যন্ত্রণা জর্জরিত নিজস্ব শরীরটাকে হেলায় তুড়ি মেরে আমাকে কোলে তুলে নিলেন। প্রথম মাতৃত্ব স্বাদের অফুরাণ আবেশে। মুখে তখন তাঁর একরাশ হাসি। সে হাসির সুধায় যে ম্লান লিওনার্দোর মোনালিসা। জীবনে প্রথমবারের মতো কাউকে এগিয়ে দিলেন মধুময় তামরস ন্যায় দুগ্ধবতী স্বর্গীয় বুক বৃন্ত। আমার ঠোঁটে। আমি তখন চোখ বুঝে বিশ্বাস করেছিলাম তাঁকে। এটাই যে আমার বেঁচে থাকার একমাত্র একক। একমাত্র প্রাপ্য প্রসাদ। চুক চুক করে সেকি ক্ষুদা নিবারণ আমার।
সেই আমার প্রথম শিক্ষা বিশ্ব দর্শনের। সেই আমার প্রথম দীক্ষা জীবন দর্শনের। তাই তিনি যে আমার প্রথম নিশ্বাসের সর্বপ্রথম পৃথিবীময় দীক্ষা দাত্রী। আমার কথা বলার প্রেরণা যে এই পবিত্রতমা মহিলাই। আমার প্রথম অআকখ হিজিবিজি দাগের পথ প্রদর্শক যে এই অপার স্নেহময়ী নারীই। হ্যাঁ স্লেটে চক হাতে ধরিয়ে প্রথম তুমিই আমাকে বলেছিলে এই ভাবে দাগ টান। আমি না পারলে তুমি আমার হাত ধরে শেখানোর চেষ্টা করেছিলে বারবার। আর বলেছিলে, এই ভাবে দাগ টানতে হয়। আজ শিক্ষক দিবসে তাই তো তোমার কথা খুব মনে পড়ছে। আমার প্রথম জীবন শিক্ষিকা গো। তোমার শেখানো সেই টেনে দেওয়া দাগ আমি যে আজও ঠিকমতো সম্পূর্ণ করতে পারলাম না গো। আমাকে ক্ষমা করো মা আমার। যেখানেই থাকো ভালো থেকো। শত কোটি প্রণাম তোমায়...
Post A Comment:
0 comments so far,add yours