অরুন্ধুতী সেনগুপ্ত, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:

দিনটা ছিল ২০/৮/২০২০, বিভিন্ন স্থান ঘুরে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ খবর যোগার করেছিলাম, সবাই শুধু মাত্র কানটা এগিয়ে নিয়ে শুনবেন, গোপন খুবই গোপন সংবাদ তো তাই।

গত ১৩ তারিখ থেকেই গিয়েছিলাম, আরি পাততে, রাস্তা ফাঁকা থাকার জন্য খুব সহজেই প্রথমেই গেলাম *জিংপিং* এর বাসায়। কি বলবো জাস্ট নিতে পারবেন না, *করোনা* দের সঙ্গে ওই লোকটা মিটিং করছে!    *কান* টাকে এগিয়ে আনুন দৃষ্টি চারদিকে ঘোরান, বলা যায় না যদি মা করোনা দয়া হয়।                                       ৪৪ বছর বয়স হয়েছে তো! তাই সব কথা শুনতেও পাচ্ছিলাম না। তবে যা বুজলুম করোনারা ভীষণ উদ্বিগ্ন, ক্ষোভে ফেটে পড়ছে, পশ্চিমবঙ্গের এই তুঘলকি শাসনের জন্য। প্রথমে ঠিক করেছিল নবান্নের সামনে ধর্ণায় বসবে, কিন্তু জিংপিং ওদের স্মরণ করাল সেই ঐতিহাসিক মুহুর্তের কথা *আমালার* ছেলে কেলে বদন, বিশ্রী মদন গামলার সহযোগিতার কথা। ওরাও সমস্বরে সমর্থন জানালো। তারপর আপাতত ঠিক করেছে, মুখোমুখি সংঘর্ষ না করে করোনা ভাইরাসগণ অতর্কিতে এই তুঘলকি শাসকদের হামলা করে যোগ্য উত্তর দেবে। ধর্ণা কিন্তু পোস্টপন হয়েছে বাতিল হয়নি। 

আর কি বলবো ঐখান তো দেখলাম মিটিং এ ওই *ওনারা* বর্ণ নির্বিশেষে প্রায় সকল এই আছেন। বর্ণ, ধর্ম সব মিলে একাকার। আমি আপনি মারামারি করে করছি হাহাকার। ওই যে বয়স হয়েছে তো...তাই সবাইকে একটু ঝাপসা দেখলাম।                                                            সবাই একটু দূরত্ব রাখুন কানে চোঙা দিয়ে এগিয়ে দিন।    আরো কিছুক্ষণ থাকার বড় সাধ ছিল জানেন?কিন্তু সময় তো খুবই কম তাই আর কি করি এগিয়ে গেলাম ওই কৈলাশ বরাবর। বাম দিকের রাস্তা ধরে *যম স্যার* এর ঘরে উঁকি দিলাম। ওহঃ কি সাংঘাতিক অবস্থা, কি বলবো.... *চিতু*র অবস্থা দেখে কি খারাপ যে লাগছে!খাওয়া নাওয়া তো ছাড়ুন *যমু-চিতু* হাগুও করতে যাচ্ছে না। চিতুকে চেনেন তো? আসলে *চিত্রগুপ্ত* এর কথা বলছিলাম। আমি সেনগুপ্ত  আর ও গুপ্ত তো তাই চিতু বলি। ওই শেষ ঠিকানায় যখন যাবেন, চিতুকে আমার কথা জিজ্ঞেস করবেন। হলফ করে মাতা বিষ্ণুর নামে দিব্যি কেটে বলতে পারি, মিলিয়ে নেবেন, দেখবেন চিনতে পারবে না। তবুও আপনারা ছাড়বেন না দরকারে fb/wp সব দেখাবেন, ওই আর কি মার্কেটিং পলিসি, চাপটা কিন্তু নেবেন...

কি বিশ্রী গ্যাসের গন্ধ; কত দিন বাঁ হাতের কাজ করেনি কে জানে? আমার মুখে অবশ্যি মাস্কটা ছিল।

সারাংশটা এইরূপ:-

★করোনা নামক আদৌ কিচ্ছু আছে? অর্থাৎ করোনাকে ওইখানে ভিকটিম হিসেবে উপস্থিত করা হয়েছে।

★বিভিন্ন রাষ্ট্র-নেতারা মিলে যৌথভাবে এই করোনা নামক অসুর টিকে উপস্থাপন করেছে? 

★অর্থনীতি, রিসেশন, প্রাকৃতিক ভারসাম্য। নষ্ট, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মনুষত্ব লোপ, গ্লোবাল ওয়ার্ম সহ এইরকম হাজারো সমস্যা নিয়ে সমগ্র বিশ্ব দুশ্চিন্তায় ছিল হয়তো তার সুরাহা করার উদ্দেশ্যেই এই লকডাউন/ভাইরাস এর সৃষ্টি!! 

★পুরো যমলোকে কর্মচারীদের ভিতরে একটা চাপা অসন্তোষ প্রকাশ হচ্ছে, বিগত ৫ মাস ধরে তাদের সমস্ত ছুটি বাতিল হয়েছে, হিসেবে গরমিল হছে যাকে নিয়ে আসার কথা নয় সে চলে আসছে, যাকে নিয়ে যাওয়ার কথা সে নষ্টামী করছে মর্ত্তে। বিচার করার সময় পাওয়া যাচ্ছে না। কি বিশৃঙ্খলতা উফফফফ....

আমি তো চারদিক দেখে ভাবলাম আরো বিস্তারিত অনুসন্ধান বাঞ্চনীয়, কিন্তু ওই যে আবার ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবস, তাই চলে এলাম। মনে সুপ্ত বাসনা ছিল ওই বলিউডের কলাকুশলীদের সাক্ষাৎ করতাম। তা আর হলো না। 

১৫ই অগাস্ট ভারতবর্ষের স্বাধীনতা লাভ হয়েছিল, এই বিষয়ে কিছু প্রশ্ন *নারদের* মনে রয়ে গেছে--

★স্বাধীনতা তুমি কে গা? 

★কোথায় তুমি থাকো?  

★তোমাকে পাবো নিজের করে। কবে অনুভব করবো? 

আজও তো তোমাকে ছুঁতে পারিনি, দাসত্বের শৃঙ্খল সর্বাঙ্গে বহন করেই তো রয়ে গেছি।        

★লোক মুখে শোনা। আমরা স্বাধীন, তাহলে আজও অনুমতি নিতে হয় কেন গা?

আজও প্রতিবাদ করা।  মানা, চোপ গণতন্ত্র চলছে।

★আজও সুরক্ষিত নই আমি, আমি শিশু, আমি বালিকা, আমি যুবতী, আমি বৃদ্ধা, আমার সুরক্ষা নেই আজও।

★আমি প্রতিবাদী যুবক, আমি নির্ভীক পুরুষ, আমি আপোষ এর সাথে মাথা নত না করা বৃদ্ধ, আমার সুরক্ষা কোথায়...                                  

★যাকে জাতির পিতা বলে চিনেছিলাম তার মুখ-মুখোষ খুলে গেছে...

★যে দিন মেয়েরা, মাঝরাতে একা বাইরে বের হতে পারবে, সেদিন হবে আমাদের দেশ স্বাধীন। 

★যেদিন প্রতিটি পুরুষ সুভাষ চন্দ্র বসু হতে পারবে, সেদিন হবে আমার দেশ স্বাধীন।            

আজও তো পারি না, আমি একা নিরাপদে চলতে। 

আজও তো *বরুণ দাস* রা খুন হয় যায়। 

তাহলে কি আমি পরাধীন? 

কাশ্মীর নিয়ে আমি কি করবো? 

আমার বাড়িতেই আমি সুরক্ষিত না।                  

এই গুলো নিয়েই কথা বলার ছিল আমার আর নারদের *শিবু* র সাথে। দেখি বাপের বাড়ি আসা অনিশ্চয়তা নিয়ে বিরাট ঝামেলা *পার্বতী* র সাথে, তাই গাঁজা টেনে উনি ল্যাদ খাচ্ছেন। তাই মনের দুঃখে চলেই এলাম। ওহঃ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতেই তো ভুলেই গেলাম ওই  *যমালয়ে* বিশু ওফ্হো আপনারা শর্ট টার্মটা বোঝেন না *বিশ্বকর্মা* ওঁর কথা বলছি, মালটাকে বাপ-ভাই তুলে কি গালিগালাজটাই না দিচ্ছিল ভাই কি বলবো!! ভালোই হলো আমিও শিখলাম মর্ত্যতে তো সবাই মা-বোন তুলে গালি দেয়, যদিও আমি বেশ ভদ্র কিন্তু এবার থেকে আমিও যমলোক এর মতন বলবো।              

যাইহোক সবাই কান ফুটন্ত গঙ্গা জল দেবেন আর চোখে মধু লাগিয়ে শুয়ে পড়বেন কেমন? পরে আবার দেখা হচ্ছে অন্য কোনো খবরে। দেখুন পুরোটাই আমার কানে শোনা শুধু শুধু। আমাকে মর্ত্য-লোকের কোচকচানিতে জড়াবেন না। মন খুলে পড়ুন প্রাণখুলে হাসুন বিন্দাস বাঁচুন।

(লেখাটি রম্যরচনার উদ্দেশ্যে লেখা। এখানে কোনও স্থান বা কোনও ব্যক্তি বা কোনও মানস চরিত্রকে আঘাত করার জন্য লেখা হয়নি। তবু নিছক এই রম্যরচনা পড়ে কেউ কষ্ট পেলে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours