ইরানী বিশ্বাস, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, নাট্যকার ও পরিচালক, বাংলাদেশ:

ব্যক্তি থেকে জনজীবন সবখানেই নতুন কিছুর সঙ্গে এ্যাডজাস্টমেন্ট সত্যি খুব কষ্টকর বিষয়। প্রথম যখন আমরা টক মুখে দিই। নিশ্চয়ই তা এ্যাডজাস্ট করতে কষ্ট হয়। কিন্তু দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার মুখে দিলে সেই অনুভুতি হয় না। হঠাৎ চলতি পথে বিষধর সাপ দেখে ফেললে, নিশ্চয়ই ভয়াবহ অবস্থা হয়। তেমনি, প্রথম যখন আমরা করোনার মুখোমুখি হয়েছিলাম, অজানা এই রোগের বিষয়ে আমরা ছিলাম ভীত। অনেকে হয়তো করোনায় নয়, করোনা ভীতিতেই মারা গেছেন। করোনা থেকে মুক্তি পাওয়া স্বজনদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, করোনা পজেটিভ রিপোর্ট পাওয়ার পর কি অনুভুতি হয়েছিল। উত্তরে অধিকাংশই বলেছেন, মনে হয়েছিল পায়ের তলায় মাটি নেই। মাথা ঘুরতে শুরু করেছিল। শ্বাস-প্রশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল। অনেকের হার্টবিট বেড়ে গিয়েছিল। 

করোনা এখন আমাদের পরিচিত, একটি বহুল প্রচলিত শব্দ। দৈনন্দিন জীবনে অন্য পাঁচটা শব্দের মতোই আমরা ব্যবহার করে থাকি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এ যাবৎকাল বিশ্বে যত মহামারী এসেছে তার মধ্যে করোনা হলো দীর্ঘ এবং ব্যাপক বিস্তৃত। করোনা যে হারে বৈশিষ্ট্য বদলাচ্ছে, আগামী কোন দিনেও হয়তো এর টিকা আবিস্কার সম্ভব নয় এই রোগের সমস্ত বৈশিষ্ট্যের প্রতিষেধক সম্বল করে। তাই দৈনন্দিন জীবনে একে মানিয়ে চলতে হবে। গত মার্চ থেকে শুরু হওয়া করোনা, বর্তমানে এর প্রকোপ বেড়েছে। তবে মানুষের মন থেকে ভয় অনেকটা দূর হয়েছে। বৈজ্ঞানিক বা মেডিকেল সাইন্সের ভাষায় নয়, খুব সহজ এবং সাধারন ভাষায় বলছি। ভালবাসা, আবেগ, ঘৃনা, কষ্ট পেলে মানুষের মধ্যে আলাদা আলাদা অনুভুতির জন্ম হয়। এগুলো সবই শরীরের গ্রন্থি থেকে আলাদা ধরনের নিঃসৃত রসের কার্যকারিতার ফলাফল। ধরে নিই আমাদের শরীর একটি রাষ্ট্র। করোনা ভাইরাস একটি ভিনদেশী শত্রুবাহিনী। রাষ্ট্র সুরক্ষার জন্য সেনাবাহিনী তাৎক্ষনিক শত্রু প্রতিহত করতে এগিয়ে যাবেন। ঠিক তেমনি,  সমুহ বিপদ বুঝতে পেরে শরীরে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী জীবানু ধ্বংস করতে শরীর বেশ কিছু সহায়তা গ্রহন করে। তার মধ্যে এন্টিবডি বা প্রতিরক্ষাকারী সংশ্লেষন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন। রক্তের বি-লসিকাকোষ নামক এক বিশেষ ধরনের শ্বেত রক্তকনিকা এন্টিবডি উৎপাদন করে। মেডিকেল সাইন্স এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বর্তমান সময়ে করোনা মোকাবিলার করা হচ্ছে। অনেক সময় ভয়ের কথা শুনলে আমাদের শরীরের পশম অটোমেটিক দাঁড়িয়ে যায়। কষ্ট পেলে চোখে জল চলে আসে। অথবা দীর্ঘদিন ধরে কেউ অসুখে ভুগতে থাকলে তার মধ্যে মানসিক এক প্রকার শক্তি জন্মায়। এগুলো সবই আমাদের শরীরের গ্রন্থি রস নিঃসরণের ফলাফল। আমাদের শরীর এবং মন একে অন্যের পরিপূরক। যে ব্যক্তি মনোবল যত বেশি, তিনি তত তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন। মানসিক শক্তি থেকেও শরীরে এন্টিবডি তৈরি হয়।

অভিযোজন শব্দটির সঙ্গে আমরা সকলেই কমবেশি পরিচিত। এর অর্থ জীব, তার জীবন ধারন করতে, প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে বেঁচে থাকার জন্য শরীরবৃত্তিয়, গঠনগত ও আচরণগত পরিবর্তন করে থাকে। শীত প্রধান দেশের মানুষ নাতিশীতোষ্ণ বা মরু অঞ্চলে গেলে প্রথমে সমস্যা হয়। তারপর ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যায়। সমতলের তুলনায় পাহাড়ী এলাকায় বা নদীভাঙ্গন এলাকার মানুষ কঠিন মানসিকতার হয়ে থাকে। কারন জন্মের পর থেকে প্রতিকুল বা দুর্যোগ প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে শেখে। সময় এসেছে, আমাদেরও এখন অভিযোজন প্রক্রিয়ায় বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হবে। 

দীর্ঘদিন ধরে করোনার কথা শুনতে শুনতে এখন অনেকটা ভীতিহীন হয়ে পড়েছে। কারন মানুষ এখন জানে, করোনা হলে কি কি উপসর্গ দেখা দেবে। এর প্রতিকার বা করনীয় সম্পর্কেও জেনে গেছে। সুতরাং ঘরে বসে থাকার সময় ফুরিয়ে এসেছে। একটু নিয়ম-নীতি মেনে আবার কর্মজীবনে ফিরতে হবে। করোনার প্রধান প্রতিকার হচ্ছে জনবহুল এলাকা এড়িয়ে চলা। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা। মাস্ক ব্যবহার করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর আগে করোনা ভাইরাস নিয়ে তাদের মতামত অনেকবার বদল করেছেন। মাস্ক নিয়ে কয়েকদফা পরিবর্তন এনেছেন। কখনো বলেছেন, শুধুমাত্র সংক্রমিত ব্যক্তি বা তার সহচর্য ব্যক্তিগণ মাস্ক পরবেন। সুস্থ ব্যক্তিদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক নয়। নতুন করে বলেছেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমন ঠেকাতে পাবলিক প্লেসে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। এরই মধ্যে বিশ্বের অনেক দেশ মাস্ক পরা বাধ্যতামুলক করেছে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও পাবলিক প্লেসে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক ঘোষনা করেছে। করোনা এখন আর ভয় নয়। করোনাকে জয় করতে নিজ দায়িত্বে সুরক্ষা বিধি মেনে চলতে হবে।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours