সজল বোস, সমাজকর্মী, দুর্গাপুর:

*দুনিয়া মে একই নাড়া,* 

 *সবসে প্যায়ারা দেশ হামরা।* 

সব নাগরিকের কাছে তার নিজের দেশ সব চেয়ে প্রিয়। তাই কবির কথায় বলি এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি। সত্যিই তাই। এমন একটি দেশ তার  বাসিন্দা সংখ্যা মাত্র তিন।

কি ভাবছেন পাহাড়, পর্বত, মাটি গাছ পালা দিয়ে এমন ভূখণ্ড কোথায়? না ভুল করছেন এখানে মাটি নেই সমুদ্র জলের উপর কংক্রীট দিয়ে গোলাকার বিমের উপর তৈরী সুউচ্চ লোহার ও ঢালাই এর একটি ভূখণ্ড।

সবচেয়ে ছোট রাষ্ট্র বলতে আমরা ভ্যাটিকান সিটিকেই জানি। এর চেয়েও ছোট দেশ আছে? কি ভাবছেন, তা আবার হয় নাকি? হ্যাঁ এমনই এক দেশের কথা বলতে আমার খুব ভালো লাগছে। পৃথিবীর অতি ক্ষুদ্রতম  এই দেশের নাম প্রিন্সিপ্যালিটি অফ সিল্যান্ড। যদিও সরকারী ভাবে এর কোন স্বীকৃতি নেই তবুও দেশটির নিজস্ব পতাকা, পাসপোর্ট, মুদ্রা সবই আছে। আছে দেশের  রাজধানীও আছে। রাজধানীর নাম এইচ এম ফোর্ট। মুদ্রার নাম সিল্যান্ড ডলার। এই দেশের অবস্থান ব্রিটেনের সাফল্ক সমুদ্রের ধারে। ক্ষুদ্রতম এই দেশের আয়তন পাঁচশো পঞ্চাশ স্কোয়ার মিটার।   দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত বর্তমানে অব্যবহৃত একটি সমুদ্র বন্দর। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান সেনারা যেকোন সময় ইংল্যান্ড আক্রমণ করতে পারে এমনই আশঙ্কা থেকেই ব্রিটিশ সেনা ইংল্যান্ড উপকূলে দূর্গ বানানোর পরিকল্পনা করে। আর সমুদ্রের উপর তাদের বেশ কিছু বন্দর ও দুর্গ তৈরী করে সেনাবাহিনী থাকার জন্য ও আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য। পরবর্তী সময়ে প্রায় সবগুলিই ধ্বংস করে দেয় নিজেরাই। আবার কিছু বন্দর রয়ে যায়। ২রা সেপ্টেম্বর ১৯৬৭ সালে ব্রিটিশ নাগরিক মেজর প্যাডজ রয় বেটস ও তাঁর পরিবার এই দ্বীপের স্বত্বাধিকারী হন। তারপর তারাই এটিকে নিজেদের স্বাধীন অনুরাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করেন। পৃথিবীর কোন দেশে এখনও সিল্যান্ডকে স্বীকৃতি না দিলেও আজ পর্যন্ত বিরোধিতাও করেনি। মজার কথা হল  জনসংখ্যার তিনজনই বেটস পরিবারের সদস্য। তারাই দেশের রাজা, রানী ও রাজপুত্র।

 রাফস টাওয়ারের সামরিক দুর্গে আন্তর্জাতিক জলে অবস্থিত। দেশের জাতীয় লক্ষ্যটি হ'ল সমুদ্র থেকে মুক্তি, স্বাধীনতা যা বছরের পর বছর ধরে স্বাধীনতার জন্য তার স্থায়ী সংগ্রামকে প্রতিফলিত করে। ১৯৬৭ সাল থেকে সিলল্যান্ড একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। বেটস পরিবার ছোট্ট রাজ্যকে বংশগত রাজকীয় শাসক হিসাবে শাসন করে, প্রতিটি সদস্য তার বা তার নিজের রাজকীয় পদবি দিয়ে থাকে। সিলল্যান্ড তার নিজস্ব সংবিধানক আছে আর সেটাই দেশ শাসনের জন্য সংরক্ষিত, যা একটি উপস্থাপিকা এবং সাতটি নিবন্ধ নিয়ে গঠিত। স্বাধীনতার ঘোষণার পরে, প্রতিষ্ঠাতা বেটস পরিবার সিলল্যান্ড পতাকা উত্তোলন করে, এর অধীনে বসবাসকারী সকলকে স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এছাড়াও আইডি কার্ড এবং অঞ্চলটির কিছু অংশ কিনে মালিক হওয়ার সুযোগ দেয়। কিন্তু বসবাসের সুযোগ নেই বা আপনি যেতেও পারবেন না। নামেই মালিক হতে পারেন ওই কয়েক স্কয়ার ফুট বা ইঞ্চির। আরও কিছু  অন্যান্য সরকারী সিল্যান্ড পণ্যগুলিও তাদের ওয়েবসাইটে বিক্রয়ের জন্য উপলব্ধ রয়েছে।

বর্তমানে দেশের বাসিন্দা মাত্র ৫০ জন (২০১৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী)।

বেইটেস এর কথা অনুসারে স্থানটি জলদস্যুদের বেতার সম্প্রচার কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করা হতো। বেইটস তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেন। তার উদ্দেশ্য ছিল সেখানে নিজস্ব স্টেশন স্থাপন করা। ১৯৭৫ সালে তিনি সিল্যান্ডকে একটি জাতিরাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টাও করেন। আর একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের যা যা দরকার তা রয়েছে এই দেশের। তখন তিনি একটি শাসনতন্ত্র এবং একটি রাষ্ট্রের অন্যসব প্রতীকও প্রণয়ন করেন। বয়োবৃদ্ধকালে বেইটস মূল ভূখণ্ড এসেক্সে ফিরে যান এবং ছেলে মাইকেলকে নিজের স্থলাভিষিক্ত করেন। তিনি মারা যান ২০১২ সালের অক্টোবরে ৯১ বছর বয়সে। এর পর থেকে বেইটসের প্রতিনিধি তার ছেলে ওই দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের ইলেকট্রিক হাউস বা জেনারেটর রুম, একটি চপার ও রয়েছে পরিবহনের জন্য, যদিও খাবার ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী ইংলন্ডের উপকূলবর্তী অঞ্চল থেকেই আসে। এই ভাবেই চলছে সিল্যান্ড এর রোজনামচা। 


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours