দীপ্তেন্দু চক্রবর্তী, প্রবাসী লেখক, টরোন্টো, কানাডা:

কানাডার ভ্যাঙ্কুভার শহরটা খুব সুন্দর। এখানেই আমাদের শিখ ভাইয়েরা একশো বছর ধরে আছে। সিং, পরমার, দাড়িওয়াল এখন সাদা কানাডিয়ান। দেখলে চেনা যাবে না। এরকমের পরিশ্রমী জাত আর সৎ জাত  আমি দেখিনি। আমি একবার এদের সাহায্য করেছিলাম একটা গুরুদুয়ারের সমস্যাতে। ওদের এক মিলিয়ন ডলার চলে গিয়েছিলো গুরুদুযারার জমির কেনার পর। ওই জমিতে কোনো বাড়ি করা উপায় ছিল না। সেই টাকাটা আমি অনেক চেষ্টায় ফেরত পাইয়ে দিই। তারপর আমি যখন বিপদে পড়লাম আমার বাড়ি বানাতে গিয়ে ঠকবাজ কন্ট্রাক্টারদের হাতে, তখন সবাই ছুটে এলো আমার বাড়ি বানাতে। এদের কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ ডাক্তার, কেউ শ্রমিক। শনিবার রবিবার এসে তিনমাস ধরে আমার বাড়ি বানিয়ে দিলো। পরে ওদের কাজের টাকা শোধ করি। এই শিখেরা আজ ভ্যাঙ্কুভারের বহু কাঠের কারখানার মালিক, বিশাল ফার্মের মালিক। বেশ কিছু শিখ কানাডার মন্ত্রী। ভ্যাঙ্কুভার থেকে ক্যাল্গেরী শহরে আস্তে গেলে সারাদিন গাড়িতে লেগে যায়। আমি বহুবার এসেছি কারণ ব্যান্ফ বলে একটা ছোট শহর দারুন সুন্দর। সারা বিশ্ব থেকে মানুষ আসে ব্যান্ফ দেখতে। দুই পাশে পাহাড় আর লেক, রাস্তার পাশে জঙ্গল। কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে জঙ্গল ঘেরা যাতে হরিণ, ভাল্লুক, মুশ বা অন্য কোনো জন্তু রাস্তায় ঢুকে না পড়তে পারে। তবুও দেখি হরিণ চাপা পড়ে আছে। রাস্তায় লেক লুইস। সে এক দারুন সুন্দর ছবির মতো জায়গা। লেকের পারে বিশাল হোটেল, তার ভাড়া হাজার ডলার দিনে। তার পাশে আছে বহু শত বছরের একটা গ্লেসিয়ার, বরফের জমি, গড়াচ্ছে বিন্দু বিন্দু করে। বিরাট স্পেশাল বাস তার ওপর দিয়ে পর্যটকদের নিয়ে যায়।
সম্প্রতি এক দুর্ঘটনা ঘটলো। একটা বাস উল্টে গেলো গ্লেসিয়ারের রাস্তায়। চারজন মারা গেছেন তার মধ্য দু জন ভারতীয় পর্যটক। ব্যানফে ইনুইটদের বাস। নেটিভ আদিবাসীরা দারুন শিল্পী। কাঠের কাজ, পাথরের ওপর কাজ বা মূর্ত্তি গড়া, গ্রানাইটের মূর্ত্তি, গয়না, মালা বিক্রি করে। খুব দাম। আমি গেলে কামালুপ বলে একটা ইন্ডিয়ান গ্রামে থাকি। আমার বন্ধু মোহক ইন্ডিয়ান। পিটার লংফুট। ওর কটেজে খুব ভালো কাটে, হরিণ বা মুশের বার বি কিউ।  মুশ হচ্ছে গাধার সাইজ বা আরো বড়। মাথায় বিশাল সিং হরিনের মতো। খুব নিরীহ জন্তু। আমাদের শিকারের পারমিট নিতে হয়। দুটো হরিণ, একটা মুশ, কুড়িটা ফেসান্ট (তিতির) মারতে পারি। হরিণ রান্না করে পিটারের বৌ।অরগান, থাইম, রসুন, টমেটো দিয়ে দুই লিটার লাল ওয়াইন দিয়ে সেদ্ধ হয়। তার সাথে আলু আর নানা রকমের ভেজ সেদ্ধ। প্রচুর ভদকা। ভদকা ছাড়া ইন্ডিয়ানদের জীবন চলে না। আমার হয়েছে মুশকিল। পুঁই শাক খেতে খুব ভালোবাসি। কিন্তু খুব দাম দোকানে।শুধু চিনে দোকানে পাওয়া যায়। গতকাল কিনলাম ৫০০ টাকা কেজি। $৭.০০ ডলার। পুঁইয়ের সাথে লাগবে একফালি কুমড়ো, ১৫০ টাকা, বেগুন একটা ১০০ টাকা , ছোট চিংড়ি তিনশো গ্রাম চারশো টাকা। পুঁই খেতে হাজার টাকা। সেখানে মুরগির কেজি ৩০০ টাকা, ভেড়া ১০০০ টাকা কেজি। ২০২১ এ চলে আসবো দেশে। মুখ্যমন্ত্রী সারা জীবন বিনা পয়সায় রেশন দেবেন, চিকিৎসাও ফ্রি। ভাবা যায়? ভালো থাকবেন। (ক্রমশঃ)

ছবি সৌজন্যে: প্রতিবেদক)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours