দীপ্তেন্দু চক্রবর্তী, প্রবাসী লেখক, টরোন্টো, কানাডা:

কানাডার আইন ব্যবস্থা আর বিচার ব্যবস্থা এক অদ্ভুদ রকমের। পুলিশ কোনো অপরাধীর গায়ে হাত দিতে পারে না। যদিও সামান্য কারণে যদি কোনো নাগরিককে গ্রেপ্তার করে তবে সঙ্গে সঙ্গে তাকে পেছন থেকে হাতকড়ি পরিয়ে জেলে ঢোকায়। বৌ পেটালেও হ্যান্ডকাফ, মদ খেয়ে গাড়ি চালালেও হ্যান্ডকাফ। অবশ্য মদের দেশের সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে যে কাউকে কোনো অপরাধীকে হ্যান্ডকাফ পরানো যাবে না। বিকাশ যাদব মহা আনন্দে পুলিশের বন্দুক ছিনিয়ে গুলি চালিয়েছিল। এ রকমের বহু কেস আছে। এখন আমাদের রাজ্যে মগের মুল্লুক চলছে। স্বাস্থ্য দপ্তর আর প্রাইভেট হাসপাতাল মিলে যা খুশি তাই করে চলেছে। কুলদীপ সামরা এক শিখ টরোন্টোর আদালতে দুজনকে গুলি করে মেরে পালিয়ে যায়। বহু চেষ্টা করেও পুলিশ তার খোঁজ পায় নি। তবে কানাডিয়ান পুলিশ হাল ছাড়ে না কখনো। কয়েক বছর বাদে কুলদীপকে জলন্ধর থেকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু দেশের কোনো মামলায় তাকে তিহার জেলে পাঠানো হয়। কুলদীপ নানা চেষ্টা করে টরোন্টোতে গুলি করার কথা কবুল করে টরোন্টোতে ফিরে আসে টরোন্টো পুলিশের সাথে। এখানে তার যাবজ্জীবনের জেল হয়। কেন ফিরে এলো জানেন? কানাডার জেলখানার জীবন। নিজের ঘর, এসি, টয়লেট নিজের। সকালে রুটি মাখন, জুস, ডিম দিয়ে ব্রেকফাস্ট, তারপর হালকা কাজ ফ্যাক্টরিতে। দুপুরে মাংস, রুটি, স্যালাড, বিকালে চা কফি, হালকা খাবার। টিভি দেখা, তারপর ভালো করে ডিনার । মাসে ওজন মাপা হয়। ডাক্তারি পরীক্ষা। এই জেলের ভেতরে চলে সিগারেট বা ড্র্যাগ। সিগারেট ঠিক আছে আইনে। কাজেই কুলদীপ কোন দুঃখে তিহারে থাকতে যাবে? এদেশে ফাঁসি নেই। ভালো স্বভাবের জন্য অনেকে আগেই ছাড়া পেয়ে যায়। 
তবে পুলিশ এখানে খুব স্বাধীন। অপরাধী মারতে এদের কোনো অনুমতি নিতে হয় না কারো কাছ থেকে। মনে করুন কোনো অপরাধী ছুরি দেখিয়ে কাউকে ভয় দেখাচ্ছে। পুলিশ ওকে একবার সুযোগ দেবে ছুরি ফেলে দেওয়ার জন্য। তার পরের মিনিটেই গুলি করে মেরে দেবে। গতকাল একটা সামান্য কারণে ৭৩ বছরের এক মানুষকে গুলি করে মেরে দিলো। দোকানে মাস্ক না পরে গিয়েছিলো। দোকানির সাথে তর্ক বাধে। তাকে বোধ হয় ঘুষি মারে বা কিছু। পুলিশ যখন ওর বাড়িতে যায় তখন সে একটা বন্দুক বার করে ঘর থেকে। ব্যাস গুলি। এগুলো এড়ানো যায় কিন্তু আমরা দেখেছি বেশ কিছু পুলিশের সামান্য কারণে গুলি করা এমনকি মানসিক রুগীদের। গতমাসে একজন পাকিস্তানিকে ঐভাবে মেরেছে। চারজন পুলিশের বহু বছরের জেল হয়েছে বিনা কারণে গুলি চালানোর জন্য। আমেরিকার পুলিশ খুব খারাপ। কালো মানুষদের সাথে একটা অলিখিত বিবাদ চলে আসছে বহুদিন ধরে। রেসিয়াল সমস্যা।সাবধানে থাকবেন। আমেরিকাতে নভেম্বরে মধ্য তিন লক্ষ মারা যাবে। করোনা আটকানো যাচ্ছে না। এরপর আপনারা। উপায় নেই। কাজে যেতেই হবে আর মানুষের সাথে মিশতেই হবে। যাদের গাড়ি আছে বা যাদের জমানো টাকা আছে দু বছরের জন্য বাইরে বেরোতে হবে না তারা বাঁচবেন। ছেলে মেয়েদের বাড়িতে পড়ান। অপেক্ষা করুন ভ্যাকসিনের জন্য। আমরা বাইরে যাই না। দোকানে গেলেও মাস্ক আর বহু দূরত্ব বজায় রাখি। সবাই তাই করে। রেস্তোরাতে এখন দশফুট দূরে বসে খেতে হয়। জানি না আর কবে দেশে যাওয়া হবে? শুনছি সরকার পরিবর্তন হবেই। মানুষ আর এই সরকারি জালিয়াতি সহ্য করতে পারছে না। কাকেই বা আনবেন? বিশ্বাস করবেন? তবুও আমাদের চেষ্টা করে যেতে হবে। ভালো থাকবেন।

(ছবি সৌজন্যে: প্রতিবেদক)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours