সজল বোস, সমাজকর্মী, দুর্গাপুর:

অনেক বাবা দেখেছি, কেউ ধর্মের নামে বিষ ছড়াচ্ছেন, কেউ প্রসাধনী বিক্রি করছে, কেউ মানুষের বিবেক কে নিয়ে খেলা করছে, কেউ সেবার নামে লুঠ করছে। আবার কেউ সত্যিই সৎ উপদেশ দিচ্ছেন, শান্তির কথা বলছেন। কিন্তু আজ এমন এক বাবার কথা বলবো যা বাংলা সাংবাদ মাধ্যমে হয়তো প্রথম আলোচিত বিষয় যিনি গোটা একটা নদীকে পরিস্কারের দায়িত্ব নিয়েছেন। পরিবেশ কে সুরক্ষিত করতেই আজকে দিনে আমাদের সমাজের কাছে তিনি আইকন হবেন এটা নিঃশঙ্কচে সকলেই মানবেন। এমন একটি মানুষ সম্পর্কে লিখতে আমার নিজের গর্ব হচ্ছে। তিনি *ইকো বাবা* নামে পরিচিত পাঞ্জাবের অন্যতম খ্যাতনামা পরিবেশবিদ বলবীর সিং সিচেওয়ালের জন্ম: 2 ফেব্রুয়ারি 1962 (বয়স 58 বছর), জলন্ধর। আসুন আজ পরিচিত হই এই মানুষটির সাথে। 
2000 সালে, বলবীর সিং সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে পাঞ্জাবের দোবা অঞ্চলে বিয়াসের 160 কিলোমিটার দীর্ঘ উপনদী - কালী বিন নদী কে ঘরোয়া এবং শিল্প বর্জ্য ফেলে হত্যা করছে, তার বিষয়ে কিছু করা উচিত। রাজ্যের অনেকের কাছে এই নদীটিকে পবিত্র বলে বিবেচনা করা হয়, সেখানে যে সমস্ত বর্জ্য ফেলে দেওয়া হচ্ছিল সে কারণে এটি একটি ড্রেন হিসাবে রূপান্তরিত হয়। নদীর কিছু অংশ এমনকি শুকিয়ে গিয়েছিল, ফলে পার্শ্ববর্তী চাষ ও খামারগুলিতে প্রচুর জলের সমস্যা দেখা দিয়েছিলো।
তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় স্থানীয় মানুষকে নদী পরিষ্কার করার গুরুত্ব, আর স্বেচ্ছাসেবীদের আহ্বান জানিয়ে তাদের নামের  তালিকাভুক্তকরণ করেন এবং 24 টিরও বেশি গ্রামের বাসিন্দাদের সাফাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য অবদানের সহায়তায় অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে জনজাগরণ শুরু করেছিলেন।
এর পরে, বলবীর সিং পাঞ্জাব সরকারের সহায়তায় একটি ভূগর্ভস্থ নিকাশী সিস্টেমের মডেল তৈরি করেছিলেন। এটি একটি স্বল্প খরচের মডেল যা পুকুর থেকে নিকাশী জল সংগ্রহ করে এবং প্রাকৃতিক উপায়ে আচরণ করে যাতে এটি কৃষিকাজ এবং সেচের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে।
 বছরের পর বছর ধরে তাঁর এই কাজটি দেশ-বিদেশের অনেকে প্রশংসিত হয়েছেন। পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে কাজ করা ছাড়াও বলবীর সিং বিভিন্ন জায়গায় স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে, তিনি তাঁর নির্দেশনায় সান্ত অবতার সিং যাদগরী প্রযুক্তিগত গবেষণা কেন্দ্রে তৈরি একটি মেশিনের সাথে কঠিন বর্জ্য নিরাময়ের একটি সমাধান নিয়ে এসেছিলেন। মেশিনটি আবর্জনা থেকে পলিথিন, গ্লাস এবং লোহার মতো ভারী কণাকে আলাদা করতে সহায়তা করতে পারে। এটি সস্তা উত্পাদন করা যেতে পারে এবং আরও উন্নতির জন্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।
বলবীর সিং সেচেওয়াল 30 শে মার্চ, 2017 ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি এর কাছ থেকে পদ্মশ্রী পুরষ্কার পেয়েছেন।
জানিনা তার কাজের সম্মান পেলেন কিন্তু দেশ বা দেশের সরকার কি এই ভাবনা সারা দেশে লাগু করলেন? যেখানে আগামী 2021সালের মধ্যে ভারতে প্রায় কয়েক কোটি মানুষের তীব্র জলের সমস্যা হবে, সেখানে কি উদাসীন থাকা যায়! যদি সম্মানের যথাযথ মর্যদা দিতেই হয় তাহলে সরকারকে আজ ভাবতেই হবে, পরিকল্পনা নিতেই হবে দেশের সব রাজ্যের সব জেলায়, সব তপশীল, মহকুমা, ব্লক, গ্রাম শহর জুড়ে এই কর্মযোগ্য শুরু করতেই হবে। বৃষ্টির জল ধরের রাখার উদ্দ্যোগ গৃহিত হলেও তার সঠিক প্রয়োগ না হওয়ার ফলে চূড়ান্ত সফলতা পাওয়া সম্ভব নয়।
আর কালবিলম্ব নয় পরিবেশ কে সুরক্ষিত রাখতে জাতীয় বাজেটে ব্যয় বৃদ্ধি করতেই হবে। সামাজিক সংগঠন ও রাষ্টীয় পরিকাঠামো গড়ে তুলতে পারলে তবেই ইকো বাবার প্রতি সঠিক সম্মান প্রদর্শন করা ও মানুষের  জীবনের ও প্রকৃতির দান জন্য জল সংরক্ষণ করে আগামী সুন্দর পরিবেশ ও সমাজ গঠন করা যাবে। আসুন মিলে মিশে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ। 

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours