সজল বোস, সমাজকর্মী, দুর্গাপুর:

এ বাবা রে। ছ্যা ছ্যা। শেষে কিনা সৎমা এক্কেবারে গর্ভবতী। আর অনুঘটকের ভুমিকায় সৎছেলে। এমন কলিযুগে এসব কানে তোলাও পাপ। শুদ্ধবাদী নেটিজেনরা এই হট ইনফো নিয়ে চায়ের কাপে আম্ফান তামাশায় ব্যস্ত থাকতেই পারে। তাতে অবশ্য পরোয়া নেই এই লেটেস্ট জোড়ি নাম্বার ওয়ানের। তাঁদের একটাই কথা, আমরা সুখী নিজেদের পেয়ে। তাতে দুনিয়ার কি? কে কি বললো তাতে আমাদের বয়েই গেল। 
আসলে মানুষ সামাজিক রীতিকে মান্যতা দিয়ে আসছে সেই মানব সভ্যতার বিকাশের প্রথম দিক থেকেই। সেখানে অলিখিত, অঘোষিতভাবে  নির্দিষ্ট একটা নিয়ম, একটা গণ্ডি দিয়ে বেঁধে রেখেছে সম্পর্ক গুলোকে। কিন্তু এযাবৎকালের এমন কিছু ঘটনা সমাজ জীবনের সুর-তাল-ছন্দ কে ভেঙ্গে দিয়ে অন্য সমীকরণ তৈরী করেছে।
আচ্ছা সম্পর্কের কি সত্যিই কোন নিয়ম আছে? যদি থাকে তাহলে সামাজিক কিছু সাম্যতা বজায় রাখতে সুন্দর সম্পর্কের বেষ্টনীতে চেনা জীবনের স্বভাবিক ছন্দ আর আদর সমাদরের, মান সম্মানের বা শ্রদ্ধা ভক্তির বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে সাজানো হয়েছে সামাজিক সম্পর্ক। 
আজ খুব মনে পড়ছে বাংলা চলচিত্রের কালজয়ী এই গানটার কথা গুলো ''বেশ করেছি, প্রেম করেছি করবই তো.....''
নিশ্চয় গানের কথার মধ্যে কিছুটা বুঝতে পারছেন আজকের চলচিত্রে কি ছবি আঁকতে চলেছি! হ্যাঁ প্রেম, কিন্তু এ কেমন প্রেম ! যেখানে স্বামীকে ছেড়ে নিজেরই ১৫ বছরের ছোট সৎ ছেলেকে বিয়ে করলেন মহিলা।
প্রেম মানে না কোনও বাধা মানে, না কোনও ব্যবধান, মানে না কোনও সম্পর্কের বেড়াজাল। কখনও কখনও হয়তো কোনও কোনও প্রেমের সম্পর্ক সমাজের চোখে দৃষ্টিকটু লাগে… কিন্তু প্রেম তো প্রেমই। তাতে তো সবই সম্ভব। প্রেমে সবই বৈধ, অবাধ্যতা আছে, কিন্তু অবৈধতা নেই। তবুও আমরা অবৈধ বলে থাকি। জেনে নেওয়া যাক এমনই এক অবাধ্য প্রেমের গল্প। 
রাশিয়ার ক্রাসোন্দার  ক্রাই এলাকায় বেশ জনপ্রিয় নাম মারিনা ব্লামাশেভা। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশাল ব্যাপ্তি বহু ফলোয়ার রয়েছে তাঁর। বছর ৩৫-এর মারিনা সম্পর্কে নিজের থেকে ১৫ বছরের ছোট ভ্লাদিমিরের সৎ মা। ভ্লাদিমিরের বাবা আরের সাথে  বছর দশেক আগে বিয়ে করেছিলেন এই সুন্দরী নারী। এক দশকের ‘অসুখী’ দাম্পত্যের পর মারিনা বুঝতে পারেন, তিনি কখনও স্বামী  আরে’কে ভালই বাসেননি। তিনি ভালবেসেছেন তার সৎ ছেলে ভ্লাদিমিরকে। ভ্লাদিমিরও তার সৎ মা’কেই নিজের মনটা দিয়ে বসে আছেন। ব্যাস আর কী! তারপর বাবার অজান্তেই শুরু হয়ে যায় সৎ মা এবং ছেলের প্রেম প্রণয়। একে অপরের সঙ্গে শারীরিক-মানসিক সবদিক থেকেই জড়িয়ে যান মারিনা এবং ভ্লাদিমির। এই ভাবেই একে অপরের জীবনের অপরিমেয় শান্তির খোঁজে সঁপে দিয়ে জীবনের ছন্দপতন করে ছিলেন। তবে পথ ছিলো একটাই শক্ত বাঁধন। গিঁট টা যেন না ছাড়ে। সামাজিক ভাবে এটা অবৈধ তাই আরের কাছে এটা ছিলো অপমানের, অসহ্য অসন্তোষ ও বেদনার  তাই পথ থেকে সরে থাকায় শ্রেয় বলে সেই প্রেম এবার গড়াল বিয়ের পিঁড়ি পর্যন্ত। নিজের স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে গত সপ্তাহেই সৎ ছেলেকে বিয়ে করেছেন সোশ্যাল মিডিয়া সেনসেশন সেলিব্রিটি মারিনা। রেজিস্ট্রি অফিসে সই-সাবুদের পর রীতিমতো বিয়ের পোশাকে সেজে রিসেপশনেরও আয়োজন করেছেন মারিনা এবং তাঁর ১৫ বছরের ছোট ‘বর’। বেশ কিছু অতিথিও এসেছিলেন। বিয়ের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় মারিনা লিখছেন,তিনি তার  সত্যিকারের জীবনসঙ্গীকে খুঁজে পেয়েছেন। 
তাদের ইচ্ছে ছিল এবছরের গোঁড়ার দিকেই বিয়েটা সেরে ফেলবেন। কিন্তু করোনা সংকটকালে লকডাউনের জন্য সেটা হয়নি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল, মারিনা এবং ভ্লাদিমিরের এই বিয়ে মারিনার আগের স্বামী তথা ভ্লাদিমিরের বাবাও অগত্যা মেনে নিয়েছেন। অনেকে অবশ্য সৎ সন্তানের সঙ্গে মারিনার এই বিবাহের সম্পর্ক খোলামনে মানতে পারছেন না। সমাজের কাছে যে বার্তা যাবে তাতে পারিবারিক সুন্দর সম্পর্কগুলো নষ্ট হতে পারে। মানসিক বিকৃতি বশবর্তী হয়ে সামাজিক রীতি-নীতি গুলো হাল্কা হয়ে যাবে। বক্র চোখে মা-সন্তানের সুন্দর সম্পর্ক কে কলুষিত করার বিরুদ্ধে সনাতনী মানুষের রক্তচক্ষু ও রোষ থাকবে। ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে সনাতন পন্থীদের তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে ঠিকই কিন্তু কিছু উদারপন্থীদের কাছে এটা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনা। একটা শরীরবৃত্তীয় রসায়ন এর ফলে প্রকৃত বন্যতার বহিঃপ্রকাশ মাত্র, জীবকুলের এটাই স্বভাব তাকে সামাজিক নিয়মের বেড়াজালে বেঁধে রাখার মাঝে একটা কৃত্তিম নিয়ম। নিঃসন্দেহে আকস্মিকতা ও জীবনের এই চরম সত্য কতটা সময়ের ক্ষতি করে বা করবে সেটা হয়তো সময় সন্ধিক্ষণের উদাহরণ হয়ে থাকবে না তার পুনরায় সংঘটিত করার উৎসাহ যোগাবে তা সময় বলবে। কিন্তু তাতে কীই বা যায় আসে… তাদের!
তবে অটুট বন্ধনের সিদ্ধান্তটা হয়তো নিজস্বী হলেও, সমাজ ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য চাই আপনার জাগরিত বিবেক। 

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours