অরিন্দম সাহা, ফিচার রাইটার ও শিল্পোদ্যোগী, মুম্বাই:

কারও ছোড়দা বা কারও কাছে শুধুই দাদা, যিনি শক্তির উপাসকও বটে। স্কুল জীবন ছিল আমহার্ষ্ট স্ট্রীটে। ঐ ৪৫ নং বাড়িতে পড়তে যেতাম ভৌতবিজ্ঞান। কিন্তু পড়ার থেকেও চোখ ঘুরতো এক দামাল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের দিকে। পুরো নাম সোমেন্দ্র নাথ মিত্র। 

আজ সেই বর্ণময় সফল রাজনৈতিক জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটলো। থেকে গেলো তার কাজ ও স্মৃতি। যে গুটিকয়েক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্য আমাকে তৃপ্তি দিয়েছে তার মধ্যে উনার নাম অবিস্মরণীয়। 

আমার রাজনীতির প্রথম পাঠ উনার ভগ্নীপুত্র সুদীপ্ত বোস/ বুড়োদার হাত ধরে। উপলক্ষ্য পাড়ার সদ্য বিদায়ী পৌরপিতা তরুন সাহা - তৎকালীন কং: প্রার্থীর প্রথম নির্বাচন। সময়ের ফেরে আজ দুজনেই আমার প্রতিবেশী। তারপর বেশকিছুবার ওনার সান্নিধ্যে এসেছি। 

একবার ওনার অভিন্নহৃদয় বন্ধু রীতেশ দত্তের সাথে দিল্লী গেলাম। উনিও ছিলেন। সেদিন বিমানবন্দরে দেখেছিলাম কত অপরিচিত মানুষ এসে আলাপ করে যাচ্ছে। অবলীলায় দিচ্ছিলেন সাহায্যের প্রতিশ্রুতি। আমার বেশ কিছু কাজের মধ্যে সেবার দেখা হলো সোনিয়া গান্ধীর সাথেও।

আরও একটা মূহুর্ত চমকে দিয়েছিলো। সেই দিল্লীতেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর বাড়িতে এক কথোপকথন। তার কদিন আগেই উনি তৃণমূলে পা রেখেছিলেন বহু কংগ্রেস কর্মীদের চমকে দিয়ে। আমার সঙ্গে থাকা রীতেশ বাবুর কাছে উনার সটান প্রশ্ন ছিলো “সোমেনবাবু কিউ চলা গিয়া?”  প্রশ্নটা যেনো বুলেটের মত বেরিয়েছিলো অনেক আক্ষেপসহ। ঠিক অনুরূপ প্রশ্ন শুনেছিলাম এক বিকেলে- আহমেদ প্যাটেলের বাড়ীর একতলার অফিসেও। চুড়ান্ত অবাক হয়েছিলেন উনার আর এক গুনগ্রাহী আমার প্রণম্য অধীর চৌধুরীও। বলেছিলেন ‘সোমেনদা’ উনার জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। 
উনি ফিরেও এসেছিলেন কংগ্রেসে। ২০১৪ র উত্তর কলকাতার লোকসভার প্রার্থী হয়ে। শীবাজী সিংহ রায় (বর্তমাতে বিজেপিতে, উ: কলকাতার দায়িত্বে), Amit Ghosh / সান্টুদার হাত ধরে আমি সামলেছিলাম ৫ নং ওয়ার্ডের কাজকর্ম। দেখেছিলাম কি বিপুল জনপ্রিয়তা। বেলগাছিয়া মোড়ে আমি একটা সভার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। অধীরদাকে অনুরোধ করেছিলাম আসতে। সম্ভবত উনি তখন প্রদেশ সভাপতি। সেদিন সকালে বহরমপুরের এক কর্মী সভা সামলে এসেছিলেন। দেখেছিলাম দুই বর্ষীয়ান জননেতার উষ্ণতার বহ্রিপ্রকাশ। সেদিনের মঞ্চে থাকা অনেক কং বিধায়কই আজ তৃণমূলে- যেমন শাওনী সিংহ রায়, সমর মুখার্জি। রাজনীতির অমোঘ সত্য - সব জনপ্রিয়তা ভোটবাক্সে পৌছায় না। সেদিন ২০১৪ তেও হয়নি। ভোটগণনা কেন্দ্র থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছিলাম নগন্য মানুষের আশীর্বাদ পেয়ে। 

যারা বড় হয় তারা মানুষকে আপন করতে জানে। Social Quotient তাদের মধ্যে চুড়ান্ত ভাবে বিরাজমান। সেসময়ে দেখেছিলাম পুরনো সহকর্মীদের উনি কতটা সম্মান দেন। এ.কে. পয়েন্টের দপ্তর, ৪৫ নং, বিধান ভবন... সবার ছিলো অবারিত দ্বার। 

আজ সেই দরজা গুরুত্ব হারালো। সময়ের নিয়মেই তিনি চলে গেলেন। 

বেশ কিছু প্রশ্ন আর করা হোলো না। প্রগতীশীল ইন্দিরা কংগ্রেসের, তৃণমূল ইত্যাদির অভিজ্ঞতা প্রাপ্ত প্রাজ্ঞ মানুষটিকে জিজ্ঞাস্য ছিলো, -কি সেই আকর্ষণ যা তাকে শতাব্দী প্রাচীন দলে বারবার ফিরিয়ে এনেছিলো? বা, সেই প্রাসঙ্গিক কথাটা- কাঁটাতার টপকে আসা নিপীরীত মানুষদের নাগরিকত্বের দাবি ঘিরে, তাঁর ‘মনের’ প্রকৃত অবস্থানটা কি? তাঁর জন্মও যে ওপারে- যশোরে। ট্রেডমার্ক সাদা জুতো পায়ে আজ তিনি এতটাই দুরে যে, সেখানে এসব মূল্যহীন। সততই অবান্তর।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours