ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:

দুর্গাপুরের  অতীত ঐতিহ্য  গৌরবময়  এটা  বলার অপেক্ষা রাখে না।  তাই  এই  জনপদের  ভুমিপুত্র  হওয়ায়  নিজে  গর্ববোধ করি।  কিন্তু  নদীকে  বাদ দিয়ে  সভ্যতা গড়ে  ওঠা  কি সম্ভব?  তাই  প্রশ্ন  ওঠাই  স্বাভাবিক  রুক্ষ কাঁকুরে  জমির  মালভূমি  দুর্গাপুরে  নদীর  উৎস  !! এতো  অলীক  কল্পনা।  
             সভ্যতা গড়ে ওঠে  নদীকে  কেন্দ্র করে। বহু প্রাচীন কাল থেকেই    দেশে  দেশে নদীকে  আশ্রয়  করেই  গড়ে  উঠেছে সভ্যতা। পৃথিবীতে  যদি  নদীর  সৃষ্টি  না  হতো  অধরা  থাকতো  সভ্যতা। 
            ভারতবর্ষ  নদীমাতৃক - সহস্র  নদী  দেশের মাটি  শুধু উর্বর  করেনি, জমিকে  করেছে  সুজলা সুফলা  শস্য শ্যামলা।  
             দুর্গাপর  জনপদের রুক্ষমাটিতেও  সৃষ্টি  হয়েছে  কয়েকটি  নদীর। দুর্গাপর  উত্তর  দক্ষিণ  বরাবর দুটি  নদ  অজয় ও দামোদর  দ্বারা  বেষ্টিত। দুটি  নদের উৎস  বিহার। দামোদর  পালামৌ জেলার  ছোটনাগপুরের  খামারপত গিরি পর্বতের  সোনাসাথী  ঝরনা  থেকে  উৎপন্ন  হয়ে  ৪৫০কিঃমিঃ  পথ অতিক্রম  করে  ভাগীরথী নদীতে  মিশেছে। অজয় নদের উৎস  মুঙ্গেরের  জামুই পাহাড়। পশ্চিম  বর্ধমান জেলার  চিত্তরঞ্জন  রেল শহরে।  প্রবেশ করে  পশ্চিম  ও পূর্ব  বর্ধমান  জেলা  অতিক্রম করে  ভাগীরথীতে  মিশেছে। নদের  মোট  দৈর্ঘ্য  ২৮৮ কিঃমিঃ  এর মধ্যে  ১৫২  কিঃমিঃ  দুই  বর্ধমান জেলার ।
            দুর্গাপর  মহকুমার  দুই  পাশ দিয়ে প্রবাহিত নদ দুটির  উৎস  বিহার  হলেও  দুর্গাপর  থেকে  একাধিক  নদীর  সৃষ্টি  হয়েছে। অজয়ের উপনদী।  'কুনুর'। কুনুর  সম্ভবতঃ  পৃথিবীর  একমাত্র  নদী  যার  উৎসস্হলে ও সঙ্গম স্হলে  দুজন  কবির জন্মস্থান। নদীর  উৎস লাসন্নিকটে  ঝাঁঝরা গ্রামের  একটি  ঝরনা থেকে।  এই ঝাঁঝরা গ্রামের  পাশেই  ধবনী  গ্রামে  জন্ম  সাধক কবি নীলকণ্ঠ মুখোপাধ্যায় -এর। নদীর দৈর্ঘ্য  ১১২ কিঃমিঃ। নদীটি  অন্ডাল, ফরিদপুর,কাঁকসা,আউসগ্রাম ও  মঙ্গলকোট থানার  মধ্য দিয়ে  প্রবাহিত। এই  নদীর তীরে অবস্থিত প্রখ্যাত  প্রত্নক্ষেত্র  পান্ডুরাজার  ঢিবি  ও গোস্বামীখন্ড।
            কুনুর  অজয়ের  সাথে  মিলিত  হয়েছে  মঙ্গলকোটের  কোগ্রামে এই  সঙ্গম স্হলে  এক  গভীর  'দহে'র সৃষ্টি  মঙ্গলকাব্য- এ এটিকে ' ভ্রমর দহ' বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অজয় -কুনুরের  সঙ্গমস্হলে কোগ্রামে প্রখ্যাত  পল্লী কবি কুমুদ রঞ্জন  মল্লিকের বাড়ী। এখানকার  পটভূমিতে তিনি  লিখছছিলেন  " বাড়ি  আমার  ভাঙ্গন  ধরা  অজয় নদীর  বাঁকে/ জল  যেখানে  সোহাগ  ভরে  স্হলকে  ঘিরে রাখে। " (চলবে)
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours