ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:
এরপর গুরু তুলসী দাসজী গোঁসাই এর নির্দেশে অক্ষয় কুমার রায় নিরন্তর সাধনায় মগ্ন রইলেন ।দিন রাত ভিরিঙ্গী মহা শ্মশানে পঞ্চমুন্ডির আসনে বসে সাধনা করতে লাগলেন।
তারপর এলো সেই মহা সন্ধিক্ষন।গোঁসাই দাসজী লক্ষ্য করলেন।তাঁর প্রিয় শিষ্য ধ্যান মগ্ন বিভোর,বাহ্যজ্ঞান লুপ্ত, জীবন সন্ধিক্ষনের এক চরম মূহূর্তে নির্বিকল্প সমাধি লাভ করলেন । শিষ্যর কানে কানে মন্ত্র শোনালেন। ধীরে ধীরে ধ্যান ভাঙ্গলো, চোখ খুললেন অক্ষয়। সাধনায় সিদ্ধিলাভ করলেন তিনি।
এরপর একদিন শ্মশান ভুমিতে এলেন অক্ষয়ের মা কৃতার্থময়ী।গোঁসাই দাসজীর কাছে অনুমতি চাইলেন পুত্রকে সংসারী করতে। গুরুদেবের অনুমতি নিয়ে নিকটস্হ মেজডিহি গ্রামের রাম কুমার ঘটকের বোন ত্রিগুণাসুন্দরীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন।
এরপর গুরু তুলসী দাসজী গোঁসাই আর হিমালয়ে ফিরে যান নি। এই শ্মশান ভূমিতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইহলোক ত্যাগ করার আগে প্রিয় শিষ্যকে নির্দেশ দিয়ে যান তাঁর শ্রাদ্ধে যেন গরীব দুঃখী মানুষদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় । অর্থের ব্যবস্থা তিনিই করে যাবেন।এরপর এক অলৌকিক ঘটনা ঘটে। তাঁর মৃত্যুর পর দাহ করার পর চিতার আগুন নিভে যাওয়ার পর সেখানে শ্মশান যাত্রীরা ৬৫ টি রৌপ্যমুদ্রা পান। সেই অর্থেই তাঁর শ্রাদ্ধাদি সম্পন্ন হয় ।আজও তাঁর সমাধি মন্দির চত্বরে আছে।
অক্ষয় সিদ্ধ সাধক হয়েও গৃহী, ঘোরতর সংসারী।তাঁর তিন কন্যা শ্যামা, যশোদা ও ভবানীর পর পুত্র রবীন্দ্রনাথ।
রবীন্দ্রনাথ প্রাথমিক শিক্ষা ভিরিঙ্গী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শেষ করে সিয়ারশোল হাইস্কুলে ভর্তি হ'ন । তখন জামবন গ্রামের সুধাকৃষ্ণ রায় দুর্গাপুরের ফরিদপুর থানার দারোগা ছিলেন।তাঁর কন্যা জয়াবতীকে পুত্রবধূ নির্বাচন করলেও বিয়ে দেখে যেতে পারলেন না অক্ষয় কুমার রায় এক বছর কালাশৌচের পর জয়াবতীর সাথে রবীন্দ্রনাথ রায়ের বিয়ে হ'ল।
তখনো রবীন্দ্রনাথের লেখা পড়া শেষ হয়নি। তাই মন্দিরের ও মায়ের পুজার দ্বায়িত্ব বর্তাল দুই পিতৃব্য জগদীশ ও অবনীকান্তের উপর। কিন্তু।পাঁচ বছরের মধ্যে দুজনেই দেহ রাখলেন। রবীন্দ্রনাথ মন্দির ও শ্মশান কালী মায়ের পূজা আর্চার দ্বায়িত্ব নিলেন।
রবীন্দ্র নাথ ছিলেন সিদ্ধ পুরুষ। গৃহী হয়েও সন্ন্যাসী। সারাদিন মায়ের মন্দিরে অর্চনার সাথে সাথে বিভিন্ন সামাজিক কাজ করতেন। একদা কুমোর বাঁধের পাড়ে গুরুদেব তুলসী দাসজী গোঁসাই এর নির্দেশে ভিরিঙ্গী গ্রামের মহা শ্মশানে তালপাতার পর্ন কুটিরে মায়ের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সিদ্ধ তান্ত্রিক অক্ষয় কুমার রায়। সেখানে তাঁর পুত্র রবীন্দ্রনাথ রায় পাকা মনো মুগ্ধকর মন্দির নির্মাণ করেন। দীর্ঘ তিরিশ বছর মায়ের পুজো পাঠ। ছাড়াও নানা সমাজসেবা মূলক কাজ করেছেন। বর্তমানে মন্দিরটি। পাঁচ বিঘা জমির উপর নির্মিত। কুমোর বাঁধের পাড়ে কালী মন্দিরের সাথে মহাকাল ভৈরব অবস্থান করছেন। আছে পঞ্চ মুন্ডির আসন। মধ্যে হনুমান মন্দির দক্ষিণ দিকে দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র, ধর্মীয় গ্রন্থাগার ও যাত্রীনিবাস।
ভিরিঙ্গী শ্মশান কালী মায়ের বর্তমান সেবাইত সাধন কুমার রায়, পিতার দেখানো পথেই মায়ের পুজো আর্চার সাথে সাথে সমাজসেবায় নিবেদিত প্রাণ।
প্রতি বছর অগ্রহায়ণ মাসের অমাবস্যায় ভিরিঙ্গী শ্মশানমায়ের। বাৎসরিক পুজায় হাজার হাজার ভক্ত সমাগম ঘটে মন্দির প্রাঙ্গণে।
এই শ্মশান কালী মায়ের পুজায় অংশ নিয়েছেন ও মাকে দর্শন করতে মন্দিরে এসেছেন বহু জ্ঞানী গুণী মানুষ। উল্লেখ যোগ্য ব্যক্তিরা হলেন। স্বামী লোকেশ্বরানন্দ, স্বামী উমানন্দ, স্বামী বিষ্ণু পুরী, স্বামী অচ্যুতা নন্দ সরস্বতী, স্বামী কেশবানন্দ ভারতী, স্বামী স্বরূপানন্দ মহারাজ, সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সব্যসাচী মুখার্জী, ভঃ নিমাই সাধন বসু, ডঃ প্রতাপ চন্দ্র চন্দ্র,ডঃ অম্লান দত্ত, সাহিত্যিক শক্তিপদ রাজগুরু, সাধক কবি নীলকণ্ঠ, ভাই সুশোভন বসু, আবৃত্তিকার দেব দুলাল বন্দোপাধ্যায় সহ আরো বহু গুনীজন। আজ ভিরিঙ্গী শ্মশান কালী মন্দির শুধু এক মন্দির নয়। জীবন্ত কিংবদন্তি, রাঢ় বঙ্গের অন্যতম তীর্থভূমি। তাই প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা ছুটে আসেন একটু শান্তির খোঁজে। (চলবে)
*** যাঁরা ভিরিঙ্গী শ্মশান কালী মায়ের কথা আর ও জানতে চান। অনুগ্রহ করে You Tube এ Durgapur prayas দেখুন তথ্যচিত্র " ভিরিঙ্গী শ্মশান কালী মায়ের কথা "--প্রতিবেদক।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours