সজল বোস, সমাজকর্মী, দুর্গাপুর:

আজকের ভারত উন্নত ভারত, আজকের ভারত পরমাণুর ভারত। আজ আত্মনির্ভর পথে হেঁটে যাওয়া ভারত তার অনেক শক্তি সঞ্চয় করেছে। ভারত তার বৃহত্তম বাণিজ্যের বাজার সাড়া বিশ্বের কাছে। এই মুহূর্তে ভারতের প্রধানমন্ত্রী করোনা মহামারীর প্রশ্নে আন্তর্জাতিক স্তরে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে অনেক পরিচিতি আদায় করেছে এটা অস্বীকার করা যায় না। অন্যদিকে চীন করোনার আঁতুড় ঘর ও সাড়া বিশ্বে এই মহামারীর প্রকোপ ছড়িয়ে দিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে কোন ঠাসা হয়ে। পৃথিবীর বহু দেশ চীনের প্রতি রুষ্ট। ভারতের পাশে আজ পৃথিবীর বহু দেশ বন্ধু হয়ে পাশে আছে। এমতবস্থায় ভারতের অগ্রগতির বিষয়টা সহজ ভাবে স্বীকার করবে না প্রতিবেশী। চীন এবং ভারতের মধ্যে বড় ধরণের সম্মুখ লড়াই হয়েছিল একবারই, ১৯৬২ সালে। ঐ যুদ্ধের পর বিগত দশকগুলোতে এশিয়ার এই দুটি দেশ বিপুল সমরাস্ত্র সম্ভার গড়ে তুলেছে, পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে বৈরিতাও বেড়ে চলেছে। কিন্তু লড়াই পরিবেশ থেকে বিরত থেকেছে।
এই দুই দেশের মধ্যে কোন সীমানা এখনও নির্ধরিত হয়নি। ফলে সীমানা নিয়ে বার বার উত্তেজনা হবে এটাই স্বাভাবিক। 
লাদাখের গালওয়ান ভ্যালিতে ভারত ও চীনের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে সোমবার রাতে দু‌'পক্ষেই বেশ কয়েকজন সেনা হতাহত হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা যেন হঠাৎ বহুগুণ বেড়ে গেছে।
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এবং পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বেধে গেলে পরিস্থিতি কী হবে? ভারত বা চীন- কেউই কি চাই আসলে এরকম একটা যুদ্ধ?
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের প্রাথমিক শর্ত গুলো স্পস্ট হচ্ছে। পৃথিবীর মেরুকরণ হচ্ছে তার হয়তো পদধ্বনি। 
মন পরে ভারতের এক জাতীয় রাষ্ট্রনেতার কথা '' বন্ধু বদল করা যায় কিন্তু প্রতিবেশী নয়।''  
শ্রীনগর-লে জাতীয় মহাসড়াকের পাশে বাংকার নির্মাণ করছে ভারতীয় বাহিনী। এটাই না পসন্দ চীনের। 
গত কয়েক মাস ধরে সীমান্তের তিনটি এলাকাতে চীনা এবং ভারতীয় সৈন্যরা নিজেদের শক্তি জোরদার করেছে। ভারত এবং চীনের মধ্যে যদিও সীমান্ত চিহ্নিতকরণ হয়নি, দু‌'পক্ষের আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা হয়েছিল যে বর্তমানে যে পরিস্থিতি, সেটা লংঘন করা হবে না। কেউই অশান্তির পরিস্থিতির চেষ্টা করবেন না। 
এখন সোমবার রাতে যে ঘটনা ঘটেছে সে সম্পর্কে চীনা এবং ভারতীয়, দুপক্ষের বক্তব্য একেবারে পরস্পরবিরোধী। দু'পক্ষই বলছেন যে অন্য পক্ষের সেনাবাহিনী তাদের আগের অবস্থান থেকে সামনে এগিয়ে এসে ভূমি দখল করেছেন এবং এবং সেকারণেই হাতাহাতি-মারামারি হয়েছে। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে দুপক্ষই তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা ছেড়ে দিতে একেবারেই রাজি নয় এবং প্রয়োজনবোধে তারা হাতাহাতি করবে। তবে গোলাগুলি হয়েছে এমনটা শোনা যায়নি।
এটা কি শুধুই সীমান্ত বিরোধ, নাকি এর পেছনে আরো বড় কিছু আছে? পূর্ব ভারতে স্বতন্ত্র গোর্খা রাজ্যের দাবির পেছনে চীনের ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ।
চীন এবং ভারত, দুটি দেশই গত বছর দশেক ধরে তাদের সীমান্ত এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছে। চীন এটা করেছে তিব্বতে। আর ভারত করেছে দক্ষিণের অরুণাচল প্রদেশে এবং লাদাখ অঞ্চলে। দুটি দেশই এসব জায়গায় রাস্তাঘাট করেছে, বিমান ঘাঁটি বানিয়েছে। রেডার স্টেশন বসিয়েছে। সৈন্য সমাবেশ বৃদ্ধি করেছে। দু'পক্ষই বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধ সরঞ্জাম মোতায়েন করেছে।
গত বছর মেঘালয় রাজ্যে ভারত ও চীনের সামরিক বাহিনী এক যৌথ মহড়া করেছে।
সেনবাহিনী বা সশস্ত্রবাহিনী যা কিছু করে, তার পেছনে একটা রাজনৈতিক-কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট থাকে। বর্তমানে ভারত এবং চীনের মধ্যে যে সম্পর্ক রয়েছে, সেটা বিশ্বজনীন প্রেক্ষাপটে সেটা বেশ বেশ সুখকর নয়। বিশ্ব রাজনীতিতে এই দু্‌ই দেশের অবস্থান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরে। 
আন্তর্জাতিকভাবে চীনের সেই অর্থে কোন মিত্র নেই। তাদের একটি মিত্রদেশ হচ্ছে কেবল  পাকিস্তান। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের সম্পর্ক ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হয়েছে। সামরিক সহযোগিতার ব্যাপারটিও রয়েছে। এই সহযোগিতা গত দুই দশকে অনেক দৃঢ় হয়েছে। ভারত বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কয়েকটি সামরিক জোটের সাথে রয়েছে।
অন্যদিকে আমেরিকার সাথে  সঙ্গে চীনের সম্পর্ক গত কয়েক বছরে বেশ খারাপ  হয়ে গেছে, ভারত-মার্কিন সামরিক সহযোগিতাকে তাই তারা মোটেই পছন্দ করছে না চীন। ফলে চীন-ভারত সম্পর্ক ক্রমশ শত্রুভাবাপন্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই আলোকে দেখতে গেলে এই সীমান্ত বিরোধ তাদের মধ্যকার শত্রুতার একটি স্বাভাবিক কারন।
চীন-ভারতের এই উত্তেজনা 
কাজেই একটা যুদ্ধংদেহী মনোভাব সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেখা যাচ্ছে।
পরিস্থিতি যাই হোক কূটনীতির পাশপাশি সামরিক যুদ্ধ আগমী দিনে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির মধ্যে যে আরও তীব্র হবে সেবিষয়ে সন্দেহ নেই। চীন এই জৈব জীবাণু দিয়ে পৃথিবীর অর্থনীতিকে ভেঙ্গে চুরমার করে নিজের বশ্যতা স্বীকারের যে পরিকল্পনা করছে তাতে যুদ্ধ অনিবার্য নির্ণায়ক ভূমিকা নেবে কি না তা সময় বলবে। তবে পাল্টা অর্থনৈতিক প্রতিঘাতের পথে হাঁটছে চীনের বিপরীতে তা বিলক্ষণ বুঝছে চীন। তাই সীমান্তে উত্তেজনার মধ্যে ডুবিয়ে রেখে কি মনসুবা জাহির করতে চাইছে, এটা এখনও সম্পূর্ণ স্পষ্ট নয়। তাই পৃথিবী ধ্বংস করার খেলায় যে আসল মানবতা আর সুস্থ সামাজিক জীবন ব্যহত হবে তা বলার অপেক্ষা নেই।
যুদ্ধ হয়ে গেলেও সেই কথা বার্তার মধ্য দিয়ে আগামীর সময়সূচী নির্ধরিত হবে।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours