ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:

ঐতিহাসিক  গ্রান্টটাং রোড ( বর্তমান  ২ নং  জাতীয় সড়ক) এর  ধারে  বর্ধিষ্ণু  গ্রাম  অন্ডাল। পুর্বে  গ্রামটি  মুসলিম  অধ্যুষিত  ছিল।  বর্তমানে  গ্রমের  এক  প্রান্তে পাঁচ ছয়টি  মুসলিম  পরিবার  বাস করে। 
           একটা  সময়  অন্ডাল  গ্রাম  উখরা এস্টেটের  অধীন  ছিল।  উখরার হান্ডা পরিবার  এই  গ্রামের  জন্য  অনেক  জনহিতকর কাজ  করেছেন।  নরসিংহ  হান্ডা  সেচ  ও পানীয়  জলের  জন্য  একটি  বৃহৎ দিঘি   খনন করেন  সেটি ' নরসিং বাঁধ' নামে  পরিচিত। 
           গ্রামে  হিন্দুদের  প্রায়  সব  সম্প্রদায়ের  বাস  থাকলে। গ্রামটি  ব্রাম্ভ্রন  প্রধান।  গ্রামে  ছয়টি  পারিবারিক  দুর্গাপুজা  ছাড়াও  অন্নপূর্ণা  পূজা, বাসন্তী  পুজা  ,রাঢ়বঙ্গের  ঐতিহ্য বাহি  ধর্মরাজের পুজো  এবং  দেবরাজ  ইন্দ্রদেবের  পুজা  ও যমরাজের  পূজা  হয়। 
  গ্রাম্য   দেবী রঙ্কিমাতা কে  কেন্দ্র করে নানা  কিংবদন্তী প্রচলিত আছে। গ্রামের  পূর্ব প্রান্তে  রঙ্কিনী  দেবীর  মন্দির। শিলা মূর্তিতে  তিনি  বিজয়া  দশমী  তিথিতে  পুজিতা  হন।  ছাগ বলি  দেওয়া  হয়। 
              তাঁকে কেন্দ্র করে  দুটি  কিংবদন্তী প্রচলিত। জনশ্রুতি, বহুকাল  আগে  রেল  পুলিশের এক  পদস্হ  আধিকারিক  ওয়াগন  ব্রেকারদের  তাড়া করে   রঙ্কিনী  দেবীর  মন্দিরে  চলে  আসেন  এবং তাঁর গাড়ীর  চাকায়  মন্দির  বলিদানের।  হাড়িকাঠ টি  ভেঙে  গেলে  সেই  রাতেই  স্বপ্নাদিষ্ট  হয়ে  নতুন  হাড়িকাঠ  নির্মাণ  করেন।  আর একটি  কিংবদন্তী প্রচলিত আছে। বহুপুর্বে  চার  পাঁচ  জন  চোর  রঙ্কিনী  দেবীর  পাষান  মুর্তিটি  চুরি করে  পালাতে  গেলে  সাময়িক  অন্ধ হয়ে যায়  এবং  গ্রামবাসীর  হাতে  ধরা পড়ে যায়। 
            এই গ্রামেই শৈশব  কৈশোর  ও যৌবনের  অনেকটা সময়  কেটেছে  কথা  সাহিত্যিক শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়  এর।তাঁর দাদা  মশাই  মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়  ছিলেন  উখরা এস্টেটের  নায়েব  সেই  সুবাদে  অন্ডালের।জমিদারি   পেয়েছিলেন ।বাল্যকালেই  মাতৃহারা  হলে দাদা মশায়  মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়   বীরভূমের  রূপুসপুর  থেকে  নাতি শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়  কে  অন্ডালের  বাড়ীতে  নিয়ে  আসেন। 
          সিয়ারশোল রাজবাড়ির হাইস্কুলে  কাজী নজরুল ইসলামের  সহপাঠী  ও পরম সুহৃদ  ছিলেন।  প্রথম  জীবনে  নজরুল  গল্প  লিখতেন  শৈলজানন্দ  কবিতা।  পরবর্তী সময়ে  নজরুল  হলেন  কবি  শৈলজানন্দ  সাহিত্যিক।  তিনি  কিছুদিন  কয়লা  খনিতে  চাকরী করেন  তাই তাঁর লেখনিতে  কয়লা খনি শ্রমিকদের  জীবন  যন্ত্রনার  ছবি  ফুটে উঠেছে। (চলবে)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours