সাজিয়া আক্তার, ফিচার রাইটার, বাংলাদেশ:

করোনাভাইরাসের এ বৈশ্বিক মহামারী এবার আমাদের চিরায়ত ঈদুল ফিতরের আনন্দকে বিষাদময় করে তুলেছে। এবার এমন এক সময়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর আমাদের সামনে হাজির হয়েছে, যখন এই ঈদের দিনও বিশ্বের নানা প্রান্তে করোনাভাইরাস অসংখ্য মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। বিশ্বের অনেক মানুষ এই ঈদের দিনেও মহামারী ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, হচ্ছেন এবং হবেন।

এ ভাইরাস এতটাই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যে, বিভিন্ন দেশে এখনও লকডাউন, কারফিউ চলছে।ঈদগাহ ময়দানের পরিবর্তে মসজিদে মসজিদে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজ আদায় করার হয়েছে। ঈদের নামাজ যেন মসজিদে গিয়ে জনসমাগম করে আদায় করা না হয় সেজন্য অনেক দেশ কারফিউ জারি করতে বাধ্য হয়েছে। এমন অবস্থায় ঈদ স্বাভাবিকভাবেই আমাদের জন্য বিষাদময়, বা তার স্বকীয় ঐতিহ্যে হাজির হতে পারেনি। এরপরও জীবন থেমে থাকবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, সহসা এ মহামারী দূর হবে না। তাই ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত এ ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করেই আমাদের টিকে থাকতে হবে।

এমন প্রেক্ষাপটের কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি শিথিল করা হয়েছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও ব্যক্তিগত পরিবহনে ঈদে স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এটা ঝুঁকি বাড়ালেও বাস্তবতাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। অন্যদিকে জনস্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের বিজ্ঞানীরাও যেহেতু বলছেন, করোনাভাইরাসের সঙ্গে কৌশলে মিতালী করে শরীরে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাস্ত্র তৈরির কথা, তাই এ বাস্তবতাকে আরও বেশি মেনে নিতে হবে। আর এটা মানতে হবে শরীরে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করার লক্ষ্যেই। তবে এর মানে এই নয় যে, করোনাভাইরাসকে পাত্তা না দিয়ে যত্রতত্র ঘুরে বেড়ানো যাবে। এমনটা কোনোভাবেই করা যাবে না।
বিশ্বব্যাপী যখন করোনাভাইরাস মহামারী পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছিল, তখন সংক্রমণ প্রতিরোধে মক্কা-মদিনাসহ অন্যান্য দেশের মতো আমাদের এখানেও মসজিদ, মন্দির কিংবা গির্জাসহ ধর্মীয় উপাসনালয়ে গিয়ে এবাদত বা উপাসনায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। পরে একপর্যায়ে নিরাপত্তা মেনে চলার শর্তে মসজিদে নামাজ আদায়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। একইভাবে দোকানপাট, শপিংমল খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে শপিংমল তেমন না খুললেও জেলা পর্যায়ে খুলে আবার বন্ধ করতে হয়েছে। এর কারণ ছিল ক্রেতা-বিক্রেতাদের সচেতনতার অভাব। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর দোকানপাট খোলায় উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় তা আবার বন্ধ করতে হয়েছে। ধর্মীয় অনুভূতি বিবেচনায় হয়তো মসজিদের ক্ষেত্রে তেমন কোনো বিধিনিষেধ জারি করা হয়নি।

এরপরও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এ বছর সব ধরনের গণ-জমায়েতের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এখন যেহেতু করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিস্থিতি চলছে, এর ওপর সুপার সাইক্লোন আম্পানে বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কিছু জেলা ব্যাপক আকারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাজেই স্বাভাবিক সময়ের মতো এবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করা সম্ভব হয়নি।

করোনাক্রান্তিতে বিশ্বব্যাপী ঈদ মুবারক শব্দদ্বয়ও নিজের আমেজ হারিয়েছে । ঈদের আনন্দে এসব ভাবনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি এবার আমাদের সামনে আরও একটি বিষয় হাজির হয়েছে। মহামারীর কারণে প্রতিবেশি বা আশেপাশে যারা অসহায় হয়ে পড়েছেন তাদের আরও বেশি করে সহায়তা করা। ঈদ মানে সবাই মিলে খুশিতে থাকা। সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া। এজন্য আশেপাশের সবাইকে যথাসাধ্য ভালো রাখার চেষ্টা করে নিজেকেও সুরক্ষিত রাখতে হবে। আমরা সবাই মিলে যদি ভালোভাবে এ মহামারী কাটিয়ে উঠতে পারি, তাহলে মহামারী শেষে আবার আমরা আগের মতো ঈদ আনন্দে ও স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরে যেতে পারবো। ঈদের দিনে করোনামুক্ত পৃথিবী কামনা হোক সবার প্রধান চাওয়া।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours