জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা, দুর্গাপুর:

চিনের ঘাড়ে সব দোষ চাপিয়ে, আমেরিকার নরমেধের দায়ীত্ব ঝেড়ে ফেলা এবং বিশ্বের চরম বিপদের মুখে বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থার, ইতিমধ্যে মার্কিন কংগ্রেস যে গ্র্যান্ট
মঞ্জুর করেছেন, তাকেও আটকে দেওয়ায়, আমেরিকার ভেতরে এবং বাইরে গুরুতর অভিযোগ উঠছে।‘সান সাংবাদিক’ গত ২০শে এপ্রিলের প্রতিবেদনে লিখেছেন “As Mr ‘Total Authority’ keeps his focus firmly on re-election, he risks lives far beyond the United States” ইংগিত স্পষ্ট। মিঃ ট্রাম্পকে ‘মিস্টার সর্বময় কর্তা’ হিসেবে চিহ্নিতই করে ক্ষান্ত হন নাই,উনাকে বিশ্ব বিপদের কারন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
এদিকে নিউ ইয়র্ক টাইমস ডোনাল্ডের চিন সম্পর্কিত অবস্থানকে বৈপিরত্যে ভরা বলে উল্লেখ করেছেন। একদিকে বলা হচ্ছে, ইতিমধ্যে (তখনো পর্য্যন্ত) কোভিটে মৃত্যু ৩৪, হাজার ছাড়িয়ে গেছে, যা এখন  প্রায় ৭৫  হাজার, বেকারী ১৯৩০ এর সংকটকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে তখন মনে করা হচ্ছে, চিনের ঘাড়ে এই রোগের ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ার দায় চাপিয়ে দিতে পারলেই নভেম্বর নির্বাচনের বিপদ থেকে বেড় হয়ে আসা সম্ভব। কাগজটি একই সাথে বলছে, এসব কথাবার্তার মধ্যেও, মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা থেকে চিনকে ছেটে ফেলতে পারছে না। নিউ ইয়র্ক টাইম বলছে চিন সম্পর্ক নীতিটাই যেন এক ধরনের কিংকর্তব্য বিমুঢ় অবস্থা। একদিকে তরোয়াল সানাচ্ছেন অন্যদিকে খোসামোদও চালিয়ে যাচ্ছেন। নিউ ইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে লিখছে “With the death toll from the pandemic already surpassing 34,000 Americans and unemployment soaring to levels not seen since the Great Depression, Republicans increasingly believe that elevating China as an archenemy culpable for the spread of the virus, and harnessing America’s growing animosity toward Beijing, may be the best way to salvage a difficult election.” এর পরেই একই প্রতিবেদনে কিভাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকাতে বসেই, চিন এবং চিনের প্রেসিডেন্টকে একদিকে গালাগাল করছেন অন্যদিকে  খোশামোদ করছেন, তা দেখুন “Even as the president tries to rebut criticism of his slow response to the outbreak by highlighting his January travel restrictions on China, he has repeatedly called Mr. Xi a friend and said “we are dealing in good faith” with the repressive government. He also dropped his periodic references to the disease as “the China virus” after a telephone call with Mr. Xi.”
একদিকে তিনি যখন কোভিট-১৯ নিয়ে চিনের মুন্ডুপাত করছেন, তখন আমেরিকায় মৃত্যু পাপা করে গড়িয়ে চলছে,  তখনো চিন যে করোনা রুখতে যথাসাথ্য সে  কথা স্মরন করিয়ে দিতে ভূলছেন না।  নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখছে “ Though Trump ran for the White House four years ago on a promise to “get tough” on China, he has struck a different posture as president in pursuit of a “big, beautiful” trade deal with the world’s second-largest economy. In recent months, he lavished praise on China’s leader, Xi Jinping, and echoed Beijing’s assertions that it had the virus under control, even as it spread around the world.”
নিউ ইয়র্ক টাইমস, এই উত্যুঙ্গ চিন বিরোধীতার সাথে সাথে যে সুযোগ পেলেই দুর্বলতা দেখানোর বাতিকে ভূগছে, সে কথা উল্লেখ করে, ট্রাম্পের ব্যক্তিগত সততা সম্পর্কেও গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। এই সুত্রেই প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত ব্যবসার স্বার্থের কারনে অতীতে চিনের রাষ্ট্রীয় ব্যঙ্ক থেকে টাকার কর্জ করার ঘটনার কথা উল্লেখ করেছে। টাইমস বলছেঃ
“ The focus also invites deeper scrutiny of Trump’s own business dealings in the country. On Friday, Politico reported Trump borrowed tens of millions of dollars from the state-owned Bank of China for his share in a New York property development.
Democrats, incredulous that Trump would try to claim the upper hand on China, welcomed it as an opportunity to assail his handling of the crisis.”
এসব কথা বলতে হচ্ছে একটা কারনেই,
ভারতের দুটি বাদে প্রায় সবকটি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়ার অধিকাংশ এই মিডিয়া সাম্রাজ্যের সাথে ঝুলে থাকার কারনে এবং আজ বলতে বাধা নেই ভারতীয় উপমহাদেশের উচ্চ মধ্যমবর্গের বৌদ্ধিক সত্বা, বিগত কয়েক দশকের সোভিয়েত ও সমাজতন্ত্রহীনতায় এবং দুর্বল ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের কারনে, মুলতঃ আমেরিকানাইজড হয়ে যাওয়ায় ভারতের ভাব জগতকে
--- চিন-ভারত দ্বন্দ্বকে,  অনেকটা আন্তর্জাতীক অর্থনীতি এবং আমেরিকান নির্বাচন নিরপেক্ষ রাজনীতি হিসেবে দেখাতে সমর্থ হয়েছে।এমনট হতেই পারে, চিনের উপরে বন্দুক ধরে, আমেরিকার মানুষজনের নজর অন্যদিকে ঘুরিয়ে, ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রিপাবলিকান পার্টী, নিজেদের অপদার্থতার অভিযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে পারবে। এমনো হতে পারে এই ঘুরিয়ে দেওয়াতে, বিজেপি-ভারত, তার আভ্যন্তরীন রাজনীতিতে ধর্মীয় অভিমুখের পক্ষে লাভজনক হতেই পারে।
এই উপমহাদেশের মানুষকে যখন এই দ্বন্দ্বকে নির্জলা নিরামিশ
করোনা -১৯ নির্ভর দেখা উচিত হবে না, তেমনি একে কোন স্বাভাবিক বস্তু নিষ্ট দ্বন্দ্ব বলে বিবেচনা করা উচিত হবে না। এ থেকে ‘ভদ্রমোহোদয়গন’ প্রশ্ন তুলতেই পানেন, বিষয়টি যখন উঠেছে, তখন কী চিনের ভূমিকার কী কোন বস্তুনিষ্ট জবাব পাওয়া যাবে না। এই কলমের লেখক নিশ্চিত মানবেন, এই মারন রোগকে যখন কোন দেশের রসায়ানাগারে বা ল্যাবরেটারির উৎপাদ বলে দাবী করা হয়েছে এবং সেই দাবীকে বিশ্বের রাজনৈ্তিক মঞ্চেও উঠিয়ে এনে তা থেকে ফয়দা নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে তা নয়,
----  এর সাথে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জড়িয়ে দিয়ে, অতি কঠিন সময়ে বিশ্ব সংস্থার অনুদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে,  তখন দ্বর্থকভাবে স্পষ্ট হতে হবে যে
তেমন কিছু নয়। অন্যদিকে, বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনীতির দেশ, বিশেষ করে যে রাষ্ট্রে,  মারন রোগে শুধু মৃত্যুর দিক থেকে ক্ষতি নয়, জাতীয় উৎপাদনের  ৩০ভাগ ক্ষয় হয়ে গেছে, বিশ্ব রাজনীতিতে একজনের সুবিধা পাওয়ার কারনে এমন দেশের সম্মানের উপর ঠেস পৌছুনোর বিষয়টিতে গুরুত্ব পেতে হবে। অন্যথায় সম্মিলিত জাতিগোষ্টি ব্যবস্থাই ভেংগে পরতে বাধ্য।
 নিউ ইয়র্ক টাইম খবর করেছে পেট্রিক উইনট্যুরের ( Patrick Wintour) উদ্ধৃতি দিয়ে গত ৩০ শে এপ্রিল আমেরিকার গুপ্তচর বিভাগের এক বিবৃতিতে কোভিট-১৯ এর উৎতপত্তি সম্পর্কে উল্লেখ করে বলেছেন, তারাও বিশ্বের সাইন্স সোসাইটির সাথে একমত হয়েছেন। এটা মনুষ্য সৃষ্ট নয়। এই ভাইরাস কোন ল্যাবরেটারীতে নির্মান সম্ভব নয়।এটা অতীতের উদ্গত অতীতের সব ভাইরাস এর মতোই, কোন পশুর
দেহ থেকে জাম্প করে মানুষের দেহে অনুপ্রবেশ করেছে। সংবাদ অনুযায়ী, গুপ্তচর সংস্থা উল্লেখ করেছে “The office of the director of national intelligence said in a statement on Thursday that it had concluded that the virus was “not manmade or genetically modified”, but said that officials were still examining whether the origins of the pandemic could be traced to contact with infected animals or an accident at a Chinese lab.
“The intelligence community [IC] also concurs with the wide scientific consensus that the Covid-19 virus was not manmade or genetically modified,” said the statement” সংস্থার রিপোর্ট আরো উল্লেখ করেছে, অন্যান্য মহামারীর মতোই, ‘কোন জানোয়ার’ থকে ‘উহানের পশুবাজার থেকে উঠে এসেছে কী নয়।
চিন কিংবা উত্তর কোরিয়ার অথবা ভিয়েতনামের মতো দেশগুলির সাম্যবাদী সরকারগুলির নেতারা সাধারনত এসব বিষয়ে, আমেরিকার মতো হইহই করে না। শুধু এরাই নয় গোর্বাচভের, পূর্ব-পর্য্যন্ত কোন সাম্যবাদী নেতা এতো কথা বলতে শোনা যায় নাই। উনি সোভিয়েত রাষ্ট্রপতি থাকা কালিন, ভারতের সংসদে যখন  ‘লাফিয়ে লাফিয়ে’ ভাষন দিচ্ছিলেন তখনই এই কলমের লেখক,সন্দেহ পোষন করেছিলেন ‘এটা টেকার নয়”।
যাইহোক, ট্রাম্প প্রশাসনের এবারের দাবী হোল
চিন ইচ্ছা করে এই জীবানু আমেরিকায় পাঠিয়ে দিয়েছে কীনা, এই মহামারীকে আটকানোর সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কীনা, সে সম্পর্কে তাদের ‘নিরপেক্ষ তদন্ত’ দরকার।  এই দাবীতে চিনের আপত্তি ছিলো না। কিন্তু এই তদন্তের ‘নিরপেক্ষতার’ প্রশ্নে বর্তমান বিস্ব ব্যবস্থাকে ভেংগে দিয়ে, এক বিশ্ব ‘ফাদ’  তৈ্রী হওয়াতে বিশ্বকে যেমন এক নতুন হহ্বরের মুখে নিয়ে যাওয়াতে যেমন তার আপত্তি, তেমনি প্রান থাকতে জাতীয় আত্মমর্য্যাদা ক্ষুন্ন হতে দেওয়া সম্ভব ছিলো না। পরিস্থিতিটাই এমন, সে চাইলেও চিনের ভেতরে যে আত্মমর্য্যাদাবোধ জেগে উঠছে, তা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পর কদ্যাপী দেখা গেছে। সেটা আমেরিকার বোধসম্পন্ন রাজনীতিক এবং বুদ্ধিজীবিদের অজানা নয়।
চিনকে শুধু ভেতরের ভাবাত্মক সন্তুলনকেই নয়, তাকে সম্ভাব্য চিন-আমেরিকা সংঘাতে তার নিজ পরিস্থিতির কথাও মাথায় রাখতে হচ্ছে। আমেরিকার সাথে যদি তার বানিজ্য সম্পর্ক ভেংগে যায়, তবে তার ক্রম বিস্তৃত যন্ত্রশিল্প উৎপাদনে সংকট দেখা দেওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে, যে দেশে অভুতপূর্ব শিল্পোন্নয়ন সত্বেও, সেখানে নতুন সংকটের পরিনতিকে বার বার ভাবতে হচ্ছে।
তাই চিন একপ্রান্তে  দায়ীত্ব জ্ঞানহীন চরম ‘রাজকীয় উৎপাত’ অন্যপ্রান্তে কোরনার কারনে প্রায় ২৫% উৎপাদন খসে পরার পরিস্থিতিতে যথেষ্ট সতর্কতা মেনে চলতে হচ্ছে। কিন্তু ওসব ‘তদন্ত’ ফেডারেল গুপ্তচরদের কিংবা ন্যাটোর ভারাটেদের হাতে তুলে দিতে রাজী নয়। সংবাদপত্রটি উল্লেখ করেছে “The Chinese ambassador to the UK, Liu Xiaoming, delivered a lengthy rebuttal to the prospect of an international inquiry last week. “You’re talking about independent investigation. It’s up to the WHO. We support the WHO. We believe we should play by international norms and international rules, not by some other countries’ rules. Some other country even sues China at its local court. It’s absurd,”he said in remarks to the Asia Society in London”
এর পর সংবাদপত্রটি কিছু দেশের আন্তর্জাতীক পুলিশগিরির উত্তোরোত্তোর বৃদ্ধির উল্লেখ করে লিখেছেনঃ “This is not the first time that some politicians want to play world police. This is not the era of ‘gunboat diplomacy’ এরপর সংবাদপত্রটি যা উল্লেখ করেছে, তা অনেকটা বাংলাদেশ বুদ্ধিজীবিদের একাংশের, বাংলার  ‘বাবুতন্ত্রকে’  কিছুদিন পূর্বের সেই সতর্কবানীর কথা মনে করিয়ে দেয়। বলা হয়েছিলো, ‘বাংলা দেশ’ এখন সেখানে নেই, যখন গ্রামের গরীব মানুষদের লুট করে শহরের  ‘বাগানবাড়িতে’ বাইজী রাখার দিন ফুরিয়েছে। লেখা হয়েছে “This is not the era when China was still in a semi-colonial and semi-feudal society. This is the third decade of the 21st century. Those people cannot understand it. They think they still live in the old days when they can bully China and the world” এর পরেই লেখা হয়েছে, যদি এটাই মানতে হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সময় মতো ব্যবস্থা না নিয়ে থাকে, তার জন্য এই মন্ত্র আউরানো যায় না, যেন ‘হূ’ চায়নার অনুগতঃ
“If the WHO does not act their way, they stop their support and criticise the WHO to be ‘China-centric’. That’s simply not right” .এসবের বিপরীতে চিন কোভিট মোকাবিলায় আন্তর্জাতীক সহযোগীতাই যে একমাত্র পথ, সে কথাই উল্লেখ করেছে বার বার। সংবাদপত্রটি উল্লেখ করেছে ““So we are calling for international cooperation. That’s the only weapon and only way out to win this battle against the virus. Not by scapegoating, not by playing games, not by politicising the virus, not by spreading a political virus.”
যাইহোক, চিন – আমেরিকা বানিজ্য সংঘাতে, চিনের যে সমস্যা, তার থেকে অনেক বড় সমস্যায় পরবে আমেরিকা নিজে। যে দেশ চিকিৎসা ঔষধ এবং সরঞ্জামের জন্য চিনের উপর নির্ভর করতে হয়, সেই দেশকে যদি মেসিন বিল্ডিং শিল্পে চিনের সাথে বানিজ্য সম্পর্ক কেটে দিতে হয় নিশ্চিত ভাবে গ্লোবালাইজেসন বাটোয়ারায় ‘মধ্যভাগের’ দুর্মূল্যের যন্ত্র আমদানীর দিকে ঢলতে
হবে এতে বিশ্ব শিল্প কাঠামোর ভাঙ্গাভাঙ্গি করতে যাওয়া অবস্বাম্ভাবি হবে। তাই আমেরিকার সমাজ সচেতন বুদ্ধিজীবি এবং ডেমোক্রাটিক পার্টীর তো বটেই অনেক রিপাবলিকানেরাও যথেষ্ট সংকিত; এ এফ পির সংবাদ উল্লেখ করে নিউ ইয়র্ক সংবাদপত্র লিখছেঃ “Many had wondered what would happen when Donald Trump, failed salesman and gameshow host, faced a real crisis. Now they know. The man who pledged to stop “American carnage” in his inaugural address now owns it”
এর পরেই উল্লেখ করা হয়েছে, আরো চারবছরের জন্য আমেরিকাকে উন্মত্ততার হাতে ছেড়ে দেওয়া যায় না – “The world cannot afford another four years of the chaos and carnage personified by Trump. Voting him out in November is the best solution. But what if, fearful of losing amid continuing mayhem, he tries to delay the election?” (চলবে)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours