শ্বেতা ঘোষ, ফিচার রাইটার, নৈহাটি, উ: ২৪ পরগনা:

রাজ্য জুড়ে চলছে লকডাউন। আরোপ সরকারি বিধিনিষেধ। লাগাম দেওয়ার চেষ্টা বেসরকারি স্কুলগুলিকে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। চলছে অবাধে স্কুল ফিইজ সংগ্রহ। প্রত্যক্ষ বা সরাসরি। নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখানোই যেন দস্তুর কিছু ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষায়তনের। এরকমই এক ঘটনার সাক্ষী দুর্গাপুরের এক স্কুলের অভিভাবকেরা বলে অভিযোগ। যদিও এহেন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষ।
বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশ, দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের নাম 'দুর্গাপুর পাবলিক স্কুল'। স্থানীয় বিধাননগর এলাকায় অবস্থিত এই স্কুলের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগের আঙুল তুলেছেন একাংশ অভিভাবকবৃন্দ। তাঁদের অভিযোগ, রাজ্য সরকারের সাম্প্রতিক বিধিনিষেধ উপেক্ষা করেই ওই স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁদের কাছ থেকে ফিইজ সংগ্রহ করছে।
কি সেই অভিযোগের বিষয়বস্তু? ওই অভিভাবকেরা জানান, স্কুলের তরফে এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হয়েছে যে নির্দিষ্ট একটি দিনের মধ্যে স্কুল ফিইজ জমা করতে হবে তাঁদেরকে। যে নির্দিষ্ট করা দিনটি লকডাউন সময় কালের মধ্যে থাকায় অভিভাবকরা পড়েছেন চরম অস্বস্তিতে। তাঁরা বলেন, 'একেতে লকডাউনের বিরম্বনায় নাজেহাল। তার মধ্যে গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো দুর্গাপুর পাবলিক স্কুল থেকে স্কুল ফিইজের চাহিদার ফিরিস্তি। অনেকে বাধ্য হয়েছেন তা জমা করতে। অনেকে ফিইজ জমা দিয়ে উঠতে পারেননি সমস্যার কারণে।' তাঁদের ক্ষোভের সুরে বক্তব্য, এই স্কুলের কর্তৃপক্ষ কিভাবে রাজ্য সরকারের নির্দেশ উপেক্ষা করছেন সেটাই অবাক। একটা স্কুল শুধুমাত্র অর্থ সংগ্রহের তাগিদে লকডাউনের সময়ে জারি করা সরকারি নোটিশ লঙ্ঘন করে তাহলে কি নজির সৃষ্টি হয় সমাজে ও পড়ুয়াদের মনে তা সহজেই অনুমেয় বলে তাঁরা জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য গত ২২ এপ্রিল রাজ্য সরকারের তরফে মুখ্য সচিব মনীশ জৈন এক নির্দেশিকা জারি করেন পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত বেসরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে। নির্দেশিকাতে পরিস্কার জানানো হয়েছে যে লকডাউন চলাকালীন কোনও স্কুলের তরফে কোনও রকম খাতে কোনও ফিইজ অভিভাবকদের কাছ থেকে সংগ্রহ বা আদায় করা যাবে না। সম্প্রতি মারণ করোনা প্রাদুর্ভাবের মোকাবেলায় রাজ্য জুড়ে চলছে লকডাউন। বাংলার সমস্ত স্কুলকে কঠোর ভাবে এই লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে। আর এই লকডাউনের ফলে রাজ্যবাসী আপাতত গৃহবন্দি। ফলে অভিভাবকদের একটা বিরাট অংশ আর্থিক ভাবে সংকটের মুখোমুখি। মূলতঃ অভিভাবকদের এই অসহনীয় পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করেই যে রাজ্য সরকারের এমন নির্দেশনামার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এহেন নির্দেশিকা সংশ্লিষ্ট সর্বস্তরে প্রচারিত হওয়ার পড়েও কিভাবে এই স্কুলের তরফে ফিইজ আদায়ের উদ্দেশ্যে এসএমএস অভিভাবকদের কাছে পাঠানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে তা আক্ষরিক অর্থেই বিস্ময়ের।
তবে যে স্কুলের বিরুদ্ধে এই অভিযোগের নিশানা সেই দুর্গাপুর পাবলিক স্কুল কর্তৃপক্ষ কিন্তু এইসব মানতে নারাজ। স্কুলের তরফে সাফ জানানো হয়েছে, তাঁদের স্কুলের বিষয়ে মিথ্যাচার রটানো হচ্ছে স্কুলের সুনাম নষ্টের উদ্দেশ্যে। স্কুল প্রিন্সিপাল সোমা রায় বলেন, 'আমরা স্কুলের ফিইজ সংগ্রহ করার জন্য স্কুলের তরফে কোনও অভিভাবকেই কোনও নির্দেশ বা এসএমএস পাঠাইনি। এই অভিযোগের সঙ্গে বাস্তবতার কোনও মিল নেই। বরং আমরা অনেক অভিভাবকদের জানিয়েছি আপনাদের কোনও অসুবিধা হলে বলবেন লকডাউনের মধ্যে। আমরা সাধ্যমত আপনাদের পাশে থাকবো।' তাঁর আরও মন্তব্য, আসলে আমাদের স্কুলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার এই মিথ্যাচার প্রচার করা হচ্ছে উদ্দেশ্যে প্রণোদিত ভাবে।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours