জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা, দুর্গাপুর:

নভেম্বর ভোটে  ডোনাল্ডের চিন-উৎপটাং অকার্য্যকর হবে। বিজেপির ভারতকেও ফাঁসাবে।
অংশ এগারো।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউসে এক সাক্ষাতকারে, রয়টারকে যখন জানালেন যে চিন কিছুতেই, আগামি নভেম্বরে নির্বাচনে,বর্তমান প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত দেখতে চান না, তখন চিনকে নিয়ে আমেরিকার উদ্বেগ বোঝা যায়। অন্যদিকে সি এন এন একটা প্রতিবেদনে উল্লেখ করছেন, ডোনাল্ডের সর্তে যখন চিনের তার অর্থনৈ্তিক স্বয়ংসম্পূর্নতাকে তার সর্বদিক থেকে ছেড়ে দিতে হয়, তখন ট্রাম্পের পূনঃ নির্বাচনে তার কোন স্বার্থই থাকতে পারে না।
যাইহোক,
বিষয়ে প্রবেশের পূর্বে, ডোনাল্ড – চিন দ্বন্দ্বে ভারত সরকারের বাইরেও, ভারতের উচ্চ মধ্যমবর্গও যেভাবে জড়িয়ে পরছেন, সেই স্পর্শকাতর বিষয়টিতে কিছু বলে নেওয়া উচিত হবে বলে মনে হচ্ছে।
সোভিয়েত ভেংগে যাওয়ায় এককেন্দ্রিক বিশ্ব যুগ, বিশেষ করে গ্লোবালাইজেসনের পর, ভেতরে এবং খোদ আমেরিকায়, ভদ্দরলোক পেশা হিসেবে বিপুল সংখ্যক প্রযুক্তি করনিকের পদ নির্মান হওয়ার পর
-------- ভারতের উচ্চ মধ্যেমবর্গের বিপুল অংশে, আমেরিকান মিলিটারীতন্ত্রকে দেবত্ব প্রদানের ব্যাধী প্রকট হয়ে উঠেছিলো। সে সময়ে বাংলাদেশ, চিন ও পাকিস্থান সমেত এসিয়া থেকে বিপুল সংখ্যায় অতি সংখ্যক প্রতিভাকে উঠিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু ভারতীয়এন আর আই অংশের মধ্যে এই দেবত্ব প্রদানের ঝোক, ক্রমেই  উচ্চ মার্গে পৌছেছে।এদের অনেকের মধ্যেই এদেশের বাতাসের সাথে,  ধূলো-বালি আর জলেও  এ্যালার্জী বোধ হতে লাগলো। এর প্রভাব দেশের উচ্চ থেকে মধ্যবিত্তদের মধ্যেও সঞ্চালিত।
উনারা দেশ থেকে যা তুলে নেন, তার কিঞ্চিত ফিরিয়ে দেন।অবস্য দেশের আত্মীয়  স্মজনদের যে টাকা  আসে,  যাকে বলা যায় remittance – তার উপর পাওয়া  ট্যাক্স সরকারের বানিজ্য ঘাটতি মেটাতে, ফলদায়ী ভূমিকা নেয়। অবস্য, বিজেপির  ভারতকে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে গাটছড়া বেধে চলতে হয়, তবে রেমিটেন্স বন্ধ হয়ে যাওয়া যে বিপুল বানিজ্যঘাটতি বাড়বে, তার ক্ষতিপুরন আদায় করতেই হবে।
 অর্থনৈতিক উৎপাদন ব্যবস্থার বিশ্ব বন্ঠনটাই এমন, যে দেশের সব উৎপাদ রপ্তানী করেও, ঘাটতি পুরণ অসম্ভব। কাজেই, এই কাঁচা শ্রম রপ্তানী খুবই ফলপ্রদ ভূমিকা নিচ্ছে। প্রযুক্তি কেরানীদের যখন দলে দলে ইউরোপ এবং আমেরিকায় মিছিল চলছে
----সে সময়ে সোভিয়েত ভাংগার পর থেকে, আরব দেশগুলিতে, গৃহকর্মের কাজে
বিপুল সংখ্যায় মহিলা পাঠানো হচ্ছে। এই সুত্রেও ভারতের রাজস্য ঘাটতি পুরন হয়।
যাইহোক একটা কথা আজ মানতে হবে, ভারতীয় এন আর আইদের  তুলনায়, তাইওয়ান কিংবা আমেরিকায় বসবাসকারি, চিনাদের মাতৃভূমীর প্রতি নিজেদেরত্যাগকে যতটা মিলিয়ে দেখতে চেয়েছে, ভারতের ক্ষেত্রে কদ্যাপি দেখা গেছে। 
সেই বন্ধুদের জন্য ‘সুসংবাদ’টি রেখেই,
--- আজকের লেখাটা  এগিয়ে দেওয়া যেতে পারে। নভেম্বরের আমেরিকার নির্বাচনের ফলাফল যেদিকেই যাক না কেন, করোনার কারনে অর্থনৈতিক উৎপাদন কাঠামোয় সম্ভাব্য প্রযুক্তিগত বিস্ফোরন এবং উৎপাদন প্রক্রীয়ার বিশ্ব কাঠামোর সম্ভাব্য পরিবর্তনের কারনে, যারা আমেরিকা কিংবা ইউরোপে কাঁচা শ্রম বিক্রী করেন, তাদের অনেককেই নতুন আশ্রয়ের সন্ধানে ঠেলবে। আমেরিকার নির্বাচনকে ঘিরে যে দুই প্রতিপক্ষ, নির্বাচনী মঞ্চ নির্মান করেছেন, সেখান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মঞ্চ সরাসরি এসিয়ার আমেরিকা বসবাসকারিই নয়, সাধারনভাবে নিজ দেশে বসবাসকারীদের মধ্যেও একটা বিভাজন রেখা তোলা হয়েছে। সে বিচারে বর্তমান প্রশাসনের 
--- চিন বিরোধী অবস্থানকে আমেরিকার নভেম্বর নির্বাচনে কাজে লাগানোকে
সমর্থন করুন না কেন, নতুন সুযোগে তো দুরের কথা,ডেমোক্রাটিক পার্থী,  যো বিদনের বিপরীতে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন দিতে গিয়ে, নিজেদের বিপদের পথকেই প্রসস্ত করবেন। বিরোধীরা অন্তন্ত প্রকাশ্যভাবে, আভ্যন্তরীন অর্থনীতি কিংবা জাতীয় সংস্কৃতি অপবিত্র করার তকমা, এসিয়দের ঘারে চাপানোটাকে নির্বাচনী রাজনীতির অংশ করেন নাই। 
    ট্রাম্প তার চিন বিরোধীতার নীতিকে, এসিয়ার জনচাপের মুখে, আমেরিকান সংস্কৃতির বিপন্নতার শ্লোগান উঠিয়ে, ডেমক্রাটিক পার্থীকে একপ্রান্তে চিন এর সাথে অন্যপ্রান্তে আমেরিকার জনজাতি সংস্কৃতি বিপন্যতার সাথে বিধতে চেষ্টা করছেন। সি এন এন একটি প্রতিবেদনে লিখেছেনঃ 
“Singling out Beijing plays into another Trump campaign play -- the idea that a foreign force is threatening US life and culture. In 2016 Mexicans played that role. Now it's China's turn, raising concerns about a backlash against Americans of Asian origin.” বিশেষভাবে লক্ষনিয় সি এন এন প্রতিবেদন ‘আমেরিকার সংস্কৃতির প্রশ্ন’ উঠিয়ে, ডোনাল্ড যে চিনকেই বিঁধার চেষ্টা করছেন বলে থেমে যান নাই।
এখানে যখন  ‘এসিয়ান অরিজিন’ শব্দবন্ধনীর ব্যবহার করছেন, তখন সেটা আর চিন-আমেরিয়ান বানিজ্য বিরোধের গন্ডীর মধ্যে দাঁড়িয়ে করছেন না।  করোনা উত্তরকালে বিশ্ব অর্থনীতির পূনঃর্গঠন  এবং সেই অর্থে আমেরিকায় প্রযুক্তি কেরানী,  আমদানীর প্রশ্নেই বিপদজনক ইংগিত রাখা হয়েছে। আগে উল্লেখ করেছি, করোনা উত্তর কালে, আমেরিকা ‘রোবট’ উৎপাদন কাঠামোর দিকেই যাচ্ছে এবং সেই ব্যবস্থায় ইতিমধ্যে ভারতকেও ছিপবদ্ধ করেছে।
1. ডোনাল্ড প্রশাসন, ইতিমধ্যেই যে এক শ্রেনীর  ভিষার অধিকারী ভারতীয়দের ভারতত্যাগের হুকুম দিয়েছেন, তাকেও এসবে অর্থনীতি সংস্কার প্রস্তাবের সাথগে যুক্ত করে দেখা উচিত হবে। এই প্রসংগেই, আমেরিকায় করনো প্রসংগে সংখ্যালগু কৃষ্ণাজ্ঞ এবং অন্যান্যদের প্রতি দ্বিচারীতার অভিযোগকে যুক্ত করেই দেখতে হবে। আমেরিকার প্রায় প্রতিটি প্রদেশেই এই ‘অনাচারের’ অভিযোগে বিক্ষোভ হচ্ছে।আলজিজিরা নিউস লিখছেঃ “Protests sweep California as governor promises changes to lockdown, 
কেউ চাক কিংবা না চাক কোভিড ১৯ শে আমেরিকার নভেম্বর নির্বাচনের সাথে জড়িয়ে যেতে বাধ্য। এমন কি সম্ববতঃ আমেরিকা মিলিটারীতন্ত্রকে যদি বিশ্বপুঁজির নেতৃ্ত্বে থাকতে হয়, ইতিমধ্যে তৈ্রী হয়ে থাকা নরম মাটি হিসেবে এবং চিনের সাথে গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে চলতে থাকা আমেরিকার বানিজ্য যুদ্ধের অংগ হিসেবে, ডোনাল্ডকে সেটা চিহ্নিত করতেই হোত।
তবু সমাজ বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে অভিযোগ যাই থাক না কেন, সেটা আমেরিকার হোক কিংবা ন্যাটো দেশগুলির কিংবা ব্যক্তিগতভাবে আপনি কিংবা এই কলমের লেখক হো যুক্তি তর্ক বিজ্ঞান এবং সাথে সাথে মানবিক মানদন্ডে বিচার করে নিতেই হবে।
--- এই সুত্রে মানতেই হয়, আজকের বিশ্ব বা ভারতীয় রাজনীতিতে প্রতিটি ব্যক্তি কিংবা দেশে দেশে মানুষ ‘প্রবঞ্চিত’ হচ্ছেন এবং  হতে থাকবেন।ব্যক্তি তো বটেই যখন এক একটি বিশাল দেশের হাতেও যখন খবরে প্রবেশের সুযোগ নেই, বায়ূ মন্ডলের শব্দপথ, যখন একটি বিশেষ দেশের হাতে তখন এই প্রবঞ্চনা মেনেও নিতে হবে।এটা সাধারনভাবে বোঝাও সম্ভব নয়, বিশ্বপুজির নিয়ামক হিসেবে মিলিটারি তন্ত্রের রাজনৈতিক অবস্থান,  আর সাধারন আমেরিকানদের অবস্থান ভিন্নতর/ 
সত্যি বলতে কী,  যখন ডোনাল্ড যখন কোভিড-১৯কে কেবল  ‘চাইনিজ ভাইরাস’ বলে চিহ্নিত করে ক্ষান্ত থাকেন নাই, তখন যেভাবে ভারতের মধ্যমবর্গীয় শিক্ষিতরা হই হই করে চিন বিরোধীতা চলছিলো, তাদের যুক্তিহীনতার যখন বিরোধ করছিলাম, তখন নিজের মধ্যেই এই মধ্যমবর্গীয় দোলাচলের প্রভাবে কোভিড – ১৯ এর মতোই যেন সংক্রামিত হয়ে যাচ্ছিলাম। 
যদিও এটা ফেসে গেছে, যে  ল্যাবোরেটারীতে ভাইরাস নির্মানের ‘তত্ব’ খোদ আমেরিকান গোয়েন্দা দপ্তরকে দিয়ে প্রমান করানো সম্ভব হয় নাই, তবু যদি এই প্রচারকে ডোলাল্ড সাহেব দেশে দেশে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার লাইনকেই নভেম্বর নির্বাচনের প্রথম মঞ্চ হিসেবে গ্রহন করে থাকেন, তার পেছেনে তার গ্লোবালাইজেসন উত্তর বিশ্ব ব্যবস্থার পরিকল্পনাই কাজ করছে, সে সম্পর্কে আগামি পোস্টে আরো বিস্তৃত আলোচনার ইচ্ছা আছে।
দ্বিতীয় অংশ
------ যদিও বিরোধী দল তো ধারে কাছেও নেই এই প্রচারের এবং এমন কী রিপাবলিকান পার্টরো দু’এক জন ব্যাতিরেকে, আজ যখন সারা আমেরিকায় মারনযজ্ঞ চলছে, তখন রিপাব্লিকান দলেরো অধিকাংশ এই ব্যক্তির সাথে নেই। কিন্তু এতদসত্বেও যদি এই প্রচার, বিশ্ব জনমতের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়ে থাকে, তা বিশ্বমস্তত্বকে বিপুলভাবে চিন থেকেও সমাজতন্ত্র থেকো দূরে ঠেলেছে।      ---- আগেই উল্লেখ করেছি, এসব যুক্তি, চিনের যুক্তির কাছে একেবারে হাস্যস্কর মনে হওয়া সত্বেও, এই লেখক নিজেও অনেক সময়, ভারতীয় উচ্চ-মধ্যমবর্গের সমর্থনপুষ্ট আমেরিকার প্রচারের কাছে কখনো কখনো মন দোলাচলে গেছে। মনে হয়েছে, “কী জানি?” অথচ  চিন বার বার বলেছে, চিনের মতো এক বিশাল মানুষের দেশের সরকারের মনে এরকম মারন যজ্ঞে্র ‘ভূত যদিও বা চাপতো’, এতো বড় অমানবিকতার পথে পা বাড়ানোই সম্ভব নয়।ইতিহাসেরো তো একটা চাপ থাকে। --- যুক্তি দিয়ে যদি দেখা যায়, এতে চিনের যা ক্ষতি হবে, হোয়াইট হাউসে একটা আনবিক বোমা ফেলে দেওয়া অনেক সোজা।
মজার কথা হোল, ডোনাল্ড যখন ডেমোক্রাটদের চিনের সমিকরন টেনে নভেম্বর নির্বাচনের মঞ্চ নির্মান করছেন, যেমন ভারতে কংগ্রেস দল প্রথমে সোভিয়েত এবং পরে চিনের সাথে কমিউনিষ্টদের যোগসাজের অভিযোগ তুলতো, নিজেই ভেতরকার প্রচন্ড চাপের মুখে, চিনের সাথেই একটা কাজ চালিয়ে যাওয়ার সম্পর্ক খুজে চলেছেন। এদিকে ‘সান’  কাগজ প্রশাসনিক নেতৃত্বের চরম অব্যবস্থার কারনে গর আমেরিকানরা যে তাকে শুধু পাগলা রাজা হিসেবে নয়, আমেরিকার পাগলা এবং শেষ রাজা তৃ্তীয়  চার্লস এর সাথে তুলনা করেছেন।
শুধু ডেমক্রাটিকরাই নয়, সাধারন মানুষই তাকে, সময় থাকতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্টকেই দায়ী করেছেন। ‘সান’ সংবাদ পত্র উল্লেখ করেছে “ It’s worth recalling that old King George became mentally ill, since Trumpism is clearly dangerous for your health. It’s beyond reasonable dispute that his coronavirus posturing, preening, prevarication and paranoia fatally hindered the early US response.”
মার্কিন কংগ্রেসের অধ্যক্ষ, যখন ডোনাল্ডকে বিঁধে বল্লেন, বিষয়কে গুরুত্ব না দেওয়ার কারনেই আজকের এই অবস্থা, কার্য্যতঃ বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার অভিমতেরই
প্রতিচ্ছবি। সংস্থার প্রধান উল্লেখ করেছেন, জানুয়ারী মাসের প্রথমেই, যখন চিনের বাইরে মোট রোগীর সংখ্যা ৮১ অতিক্রম করে নাই, তখনই ‘হু’ বিশ্বকে সতর্ক করে দিয়েছিলো। তখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিয়ে, এখন সংস্থাকে দায়ী
করা অনুচিত। এইভাবে আমেরিকার জনমতকে প্রতিধ্বনীত করেই ‘সান’ লিখছে’
“The president’s denial at the beginning was deadly,” Nancy Pelosi, the House Speaker, said last month. “As the president fiddles, people are dying.” She repeated the charge last week, claiming Trump was still causing “unnecessary death and disaster”. 
 (ক্রমশঃ)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours