প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান:

স্রোতে হারিয়ে গেলো বুক ছেঁড়া ধন। মমতার কোল পেতে কেবলই কান্নারা তোলপাড় করে। পাপ থেকে বিবিকেই তো মুক্ত করতে চেয়েছিলেন কুন্তী। চাপা কান্নার উৎসবে চোখের জল ধরে রাখা অসম্ভব। বাস্তব সত্যটা জানলে যে হৃদয়ে তোলপাড় করে তা আজ দায় নয়।  সুদর্শনা হতভম্ব হয়ে যায়। অপ্রস্তুত হয়েই তো বিস্ময় আসে। হয়তো বিদ্রুপ ভর্ৎসনা আরো বেশী করে হতাশার অনলে দুর্বলতার ব্যথা বয়ে আনে৷ বেঁচে আছে, তবু ভাঙচুরের কাল্পনিক ছবি। সহনীয় বিদ্রোহের প্রাপ্তি শুধু বিপন্ন বোধ৷

পৃথিবীতে মায়া হলো চোখের উপর দিয়ে একটা অন্তহীন সময়ের মন্থর গতি। সদ্যোদ্ভিন্না যৌনাবতী কুন্তীকে নিয়ে এক নতুন নাটকের মহড়া সাজ৷ নব নাট্যের নির্দেশক  মহর্ষি কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন। নাটকের নায়িকা তো অনেকেই,  মহারাজ কুন্তীভোজ,  হস্তিনাপুরের বিদূর, কুরুবংশের সর্বপ্রধান পিতামহ ভীষ্ম, যুবরাজ পাণ্ডু৷ জল তো একটাই, নায়িকা শুধুই কুন্তী। প্রদীপ্ত ঔজ্জ্বল্য একবার স্বপ্নাচ্ছন্ন করলেও, কুন্তী মাঝে মাঝেই সাধু বেশের আকর্ষণে আকৃষ্ট হতেন৷ কিন্তু কেউ তো বোধের দূত নন, সাম্রাজ্য, রাজনীতির মানচিত্র, পটপরিবর্তন, জরাসন্ধের অঙ্গুলি হেলন - অচেনা পরিবেশে রাষ্ট্রজোটের পালাবদল৷
এবার আনুষ্ঠানিক ক্রিয়াকর্মের বিবাদ বিসংবাদে দীর্ঘশ্বাস। পৃথার বিয়েটা এবার রাজনীতির জ্ঞান প্রখরতা৷ গড়ে পিটে কুন্তী বুদ্ধিমতী, উচ্চভিলাষী,  শিক্ষিতা, রাজনীতির তীক্ষ্মতা মনকে পরিণয় বাঁধে পান্ডুর নরম মন৷ কিন্তু কুন্তীর কলঙ্ক!
এ যে পাণ্ডুকে ঠকানো হয়৷ তবে এইকি পরিণাম কুন্তীর ললাটে! কোনো ঘটনাই যে বিচ্ছিন্ন নয়৷ কুন্তী মনে করছেন যে, এ তো নতুন অধ্যায়!  ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করেছে নিত্য কুন্তীর জীবনে৷ কষ্টিপাথরের নকল বিষ একাই যাচাই করে প্রিয় পাত্রী। তবু সুখ এলো, শিহরণ বিদ্যুত খেলে গেলো।

না, গর্ব করে বলার মতো স্বয়ম্বর হলো না তার। বিবাহোৎসবের আমেজ ছিলো না৷ অভ্যাসগতদের সংখ্যা নগন্য ।  কন্যাপণ ছিলো না। কৃপাপ্রার্থীর মতী অনুগ্রহ লাভের ব্যকুলতা।  উত্তেজনার প্রতীক্ষা ছিলো না৷ কুন্তী কোনদিন বুদ্ধিমান স্বামী চাননি। কাকতালীয় চাওয়া আর ইচ্ছাটা মিলে মিশে গেছে। অবাধ কর্তৃত্বের স্বাধ কার না থাকে!  ভাগ্যের নির্দেশ মেনে স্বামীত্বের বরণ। আত্মবিস্তৃতি ঘটে তাঁর। যে চোখ তাঁকে দেখে,  সে চোখ ভালোবাসার।

কথা দিয়েই আকাশে মেঘ জড়ো করে অলকানন্দ নামতে পারে৷ বুকের ভিতর কেবল বর্ষণ। আদরে আদর দিয়ে তৃষ্ণার্ত ঠোঁট আর অধর স্পর্শ। শরীরে শিহরণ আর প্রেমের গানে উত্তরণ। অঙ্গে অঙ্গে সঙ্গমের প্ররোচনায় পাণ্ডু ভেঙে পড়ে, না সে যে অক্ষম। আশাভঙ্গের ছাই নিয়েই প্রাণপণে লড়াই। শরীর ও মনের যন্ত্রণায় পরাভাবের দুঃখ,  পৌরুষের লজ্জা, ব্যর্থতার অপমান।  আত্মনিপীড়নের ক্ষমতা দেখে শুধুই কান্না আসে, এ তো গলার ফাঁস। মিথ্যা দাম্পত্যের অবসাদ ও জীবনের কেন্দ্রবিন্দুতে পাণ্ডু অচল পাষাণ৷ বাজপাখির মতো  সুখ ছিনিয়ে নিয়ে যে ইচ্ছাপূরণের অনুমোদিত পথ, তা আজ বঞ্চিত
অসহনীয়ের দলে।  এটাই প্রাপ্তি, জীবনে তার।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment: