প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান:

শুভ নববর্ষ আজ...

সংক্রান্তি পেরিয়ে আয়োজনের সংসারে অনুপ্রবেশ, ১৪২৭। মহামারি যখন মায়ের বুক থেকে সন্তান কেড়ে খাচ্ছে, তখন আরো এক মা নিজের পাঁচ সন্তানকে খাবারের অভাবে গঙ্গায় ফেলে দিচ্ছে,  আর আমরা বলছি, হ্যাঁ আজ " পয়লা বৈশাখ " ; তবে কি রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, "দুঃখের তিমিরে যদি জ্বলে তব মঙ্গল আলোক ", " If the light of your grace "(Anthology - I), তবে কি " দুঃখের যজ্ঞ অনল জ্বলনে জন্মে যে প্রেম ", এ কি তবে সেই প্রতীক্ষার, নাকি সবটুকু মায়ার খেলা। দুঃ খ নাকি অনাহুত নববর্ষের জীবনে, তবে কেন আজ চোখের জলে ভিজে যাচ্ছি আমরা! যে হাতে ফুল আর ধূপের গন্ধ দিয়ে নতুনের শুভারম্ভ হতো, সেখানে অনাহারে আচ্ছাদনের তাগিদ আমার ভারতবর্ষ। না,  আমি বলছি না অবাধ রাজনীতি, আমি বলছি না খাদ্য বিক্রি, আমি বলছি না ধর্মের গোঁড়ামি, আমি বলছি না বিশ্বযুদ্ধ,  আমি মানুষের কথা বলছি। সংকল্প কি করতে পারি আমরা,বলুন তো!  চোখের  জলে আজ বলছি, " দয়া করো, দয়া করো প্রভু। "

আসুন, আজ আর আবেগের সমুদ্রে পা না কেটে জেনেনি ইতিহাসের ধারায় প্রেক্ষিত বিচার৷ সাধারণ ভাবে মুঘলদের থেকে উদ্ভূত তত্ত্বসম্পাদনকারীর মতে, বাঙ্গলা দিনপঞ্জি উদ্ভবের কৃতিত্ব আরোপিত হয় রাজা শশাঙ্কের উপর। পরবর্তীকালে সম্রাট আকবর এটিকে রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে  পরিবর্তিত করে৷ খাজনা আদায়ের সুষ্ঠতা প্রণয়নের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন৷ রাজকীয়তাকে সাথে নিয়ে ফতেহউল্লাহ সিরাজি নতুন বাংলা সনের বিনির্মাণ করেন।  তবে এই গণনা আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় থেকেই ধরা হয়৷ প্রথমে ছিলো ফসলি সন এবং পরে "বঙ্গাব্দ " নামে পরিচিত হয়৷
আকবরের সময়কালে এই দিনটি খাজনা,মাশুল, শুল্ক পরিশোধ করতে বাধ্য হতো। আর আপ্যায়নের খাতায় থাকতো মিষ্টান্ন। ঠিক যেমন জীর্ণতা ভুলে নতুনের শুভারম্ভ,  অনুরূপে পুরাতনের খাতা বন্ধ করেই নতুনের আবর্তন জুড়েই " নতুন খাতা।"

এবার একটু এগিয়ে যেতেই দেখি বৈশাখ, জৈষ্ঠ্যমাস,  আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র,  আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ন,  পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন ও চৈত্র। আচ্ছা পূর্বে এই নাম গুলি ছিলো কি!  তারিখ - এ - এলাহীর কিন্তু অন্য কথা বলে ; বারো মাসের নাম বললে আসে - কারবাদিন, আর্দি, বিসুয়া, কোর্দাদ, তীর, আমার্দাদ, শাহরিয়ার,  আবান, আজুর, বাহাম ও ইস্কান্দার মিজ। পরবর্তীকালে বারোটি নক্ষত্রের নাম থেকে এই পরিবর্তন। বিশাখা থেকে বৈশাখ, জায়ীস্থা থেকে জৈষ্ঠ্য,  শার থেকে আষাঢ়,  শ্রাবণী থেকে শ্রাবণ,   ভদ্রপদ থেকে ভাদ্র,  আশ্বায়িনী থেকে আশ্বিন,  কার্তিকা থেকে কার্তিক,আগ্রায়হন থেকে অগ্রহায়ণ,  পউস্যা থেকে পৌষ,  ফাল্গুনী থেকে ফাল্গুন এবং চিত্রা থেকে চৈত্র৷

আধুনিক ইতিহাস বলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের
বিজয় কামনা করেই সে বছর এই বৈশাখ পালন করা হয়। পরে আবার ১৯৩৮ সালেও এইরূপ কাজের হিসাব পাওয়া যায়৷ সনাতন রীতিতে নববর্ষ হলো বয়োজ্যেষ্ঠদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেই এই দিন শুরু হয়৷ মিষ্টান্ন আর আশীর্বাদের সাথে দিনাতিপাত ; ক্রমে সময় পাল্টেছে ; আজ ধোয়ামোছা ঘরে বেশ একটা নতুন সাজ ; ইতিহাস বলে  যায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বিলুপ্তির পর পুণ্যাহ উৎসব  বিলুপ্ত হয়। অবশ্য এর পিছনে কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স এর ভূমিকা এখানে কম নয়।

বর্তমান পরিস্থিতি যেখানে গ্রাসাচ্ছদনের মুখে দাবানলের মতো মৃত্যুর মিছিলে সঙ্গী সেখানে সাদা পাঞ্জাবি শান্তি নয়,  হয়ত এবার শান্ত হতে চায়৷ বিভেদ নয়, এবার সুস্থ হতে চায়৷ দুইবেলা দুই মুঠো অন্নের খিদে যেখানে তরকারি, সেখানে উৎসব কেবল আয়োজনের নাম। তবু বলে যাই, "দুয়ারে দাও মোরে রাখিয়া নিত্য কল্যাণ কাজে। "

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment: