দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

“সাল ২০১৩। একটু উদ্বিগ্নমনা! দিন পাঁচেকের নাট্যউৎসব। দর্শক হবে তো? চিন্তা তো থাকবেই, কারণ হিন্দি নাটক। তাও আবার শান্তিনিকেতনে!  কিন্তু অবাক কাণ্ড! শুধু লিপিকার হল ঘর নয়, সিঁড়ি পর্যন্ত দর্শক বসে আছেন। পিন ড্রপ সাইলেন্স বলতে যা বোঝায়। হাসি ফুটে উঠলো উষাদি মুখে। সেই হাসি তাঁর ঠোঁটে ঝুলে রইলো টানা পাঁচদিন। এমন নাট্যপ্রেমী ছিলেন উষা গঙ্গোপাধ্যায় (৭৫)। আর শান্তিনিকেতনের সঙ্গে ছিল তাঁর নাড়ির টান”।– কথাগুলি স্বগোক্তির মত বলে গেলেন বিশ্বভারতীর সঙ্গীত ভবনের নাট্যবিভাগের প্রাক্তন অতিথি অধ্যাপক সলিল সরকার। তখন এই নাট্য উৎসবের ‘ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টার’ ছিলেন সলিলবাবু নিজেই। তাঁর কথায়, মহাশ্বেতাদেবীর রুঁদালী ছিল অনবদ্য। শিহরণ জাগানো অভিনয়। তার আগে অবশ্য, শান্তিনিকেতনে দেবাশীষ মজুমদারের চণ্ডালিনী অভিনয় করেন। যা মূলতঃ চণ্ডালিকা থেকে নেওয়া।  সেই সময় তদানীন্তন উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তের আহ্বানে বিশ্বভারতীর সংযোজক অধ্যাপক হিসেবে প্রায় দুবছর কাজ করেন। কিছুদিন পাঠভবনে গুরু নাটকের প্রোডাকসনের জন্য কাজ করেন। যদিও তা সম্পূর্ন হয় নি। সঙ্গীতভবনে ক্লাস নেন।  বৃহস্পতিবার অমৃতলোকে যাত্রা করলেন তিনি।

জানা গেছে, শান্তিনিকেতনে মহিলাদের নিয়ে আন্তর্জাতিক নাট্যউৎসব করেন।
ঊষা পাণ্ডের অভিবক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য কমল গঙ্গোপাধ্যায়ের সাথে বিয়ে হয়। কোলকাতায় একটি হিন্দি কলেজের অধ্যাপিকা ছিলেন তিনি। মূলত ধ্রুপদী নৃত্য শিল্পী ছিলে তিনি। তারপর নাটকে আসেন। প্রথমে হিন্দি নাটক করতেন। রঙ্গ কর্মী নামে একটি থিয়েটারের দল খোলেন। সেখানে রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত তৃপ্তিমিত্রের পরিচালনায় নাটকগুলো হতো। রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের পরিচালনায় হিন্দি নাটক পরিচয়ে এবং তৃপ্তি মিত্রের পরিচালনায়  ‘গুড়িয়া ঘরে’ অভিনয় করেন উষা গঙ্গোপাধ্যায়। তারপর নিজেই মহাভোজ, কোর্ট মার্শাল, রুদালী মঞ্চস্থ করেন।
বামপন্থী চিন্তা ধারার মানুষ ছিলেন, খুব সোচ্চারে কথা বলতে পারতেন। শান্তিনিকেতনে অনেকের সাথে যোগাযোগ রাখতেন। প্রিন্স আনোয়ার রোডে এক্সপেরিম্যান্টাল থিয়েটারের কাজ করেন বাম সরকারের দেওয়া ঘরে।  বাংলাদেশের ডিরেক্টরদের নিয়ে কাজ করেছেন। বহুমুখী প্রতিভাধর ছিলেন। অনেকেই জানে না, তিনি একজন ভালো ধ্রুপদী নৃত্যশিল্পী ছিলেন।

প্রাক্তন উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত বলেন,  ২০১৩ সালের সেই নাট্য উৎসবে অনেক বিখ্যাত দল এসেছিল। আমি প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টায় হাজির হয়ে যেতাম লিপিকায়। খুব ভালো লাগার অনুষ্ঠান। আফগানিস্তান থেকে একটি দল এসে কাবুলিওয়ালা করেছিল। উনি স্কলার –ইন – রেসিডেন্স হিসেবে উষা গঙ্গোপাধ্যায় খুব সম্মানীয় পদে ছিলেন। প্রতিভাধর ছিলেন। উনাকে আহ্বান করে আনার ব্যাপারে অনেকেই আমার প্রশংসা করেছিলেন। আমি খুব মর্মাহত উনার মৃত্যু সংবাদ শুনে।

বিশ্বভারতীর কর্মীমণ্ডলের তদানীন্তন সেক্রেটারী সৌগত সামন্ত বলেন, ঊষাদির সাথে আমার বরাবর যোগাযোগ ছিল। এইতো দু’দিন আগে কথা হয়। লকডাউন শেষ হলে আমাকে দেখা করতে বলেন। ২০১৩ সালে কর্মী মণ্ডলের সেক্রেটারি ছিলাম। তখন আমার দায়িত্ব ছিল নাট্যউৎসবে। সেই সব স্মৃতি মনে পড়তেই মন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment: