ইন্দ্রাণী সেন, সাংবাদিক, বাঁকুড়া:

"ঘেঁটু গাই ঘেঁটু গাই গৃহস্থ বাড়ি।
খোস পাঁচরা করে দৌড়া দৌড়ী।
আয়রে ঘেঁটু নড়ে হাতির পিঠে চড়ে।
হাতির পিঠে গুরগুড়ি বাজে
তা সইতে ভোঁদড় নাচে ....
যে দেবে মুঠো মুঠো তার হবে হাত ঠুঁটো।
যে দেবে বাটি বাটি তাঁর হবে সাত বেটি।
যে দেবে কড়াই কড়াই তার হবে ধুমসো মড়াই।
পচা গোরের চল খেয়ে বাবুদের ঘরে মোষ পড়ল গুদুম"

 আজ ঘেঁটু সংক্রান্তি। রাঢ় বাংলায় বহুল প্রচলিত লোক উৎসবের মধ্যে অন্যতম এই পুজো।
অনান্য বছরের মত এই বছর ও বাড়ির মা বোনেরা সকাল বেলায় পাটের কাপড় পরে গোবর লেপা খামারে ঘেঁটু পুজো করেছে। কি কি লাগে এই আসুন আমরা জেনে নিই  পাঁচটা গোবর ডেলি সিঁদুর হলুদ ঘেঁটু ফুল কড়ি। ঘেঁটুফুল দিয়ে ঐ গোবর ডেলি সাজানো হয়। তারপর প্রদীপ জেলে ধুপজেলে ঘেঁটু পুজো হয়। প্রসাদটা ও অসাধারণ কাঁচা সিদ্ধ চাল আখের গুড় আর কাঁচা মুসুর ডাল। নৈবেদ্য সাজিয়ে মা কে দিতে হয়। আর থাকে পরিস্কার হলুদ জলে ভেজানো কাপড়ের টুকরো। পুজোর শেষে বাড়ির ছোটরা পুরনো সরা বা খোলা লাঠি দিয়ে ভেঙে জোর ছুট দেয়। তারপর মা ঐ ভাঙা খোলা প্রদীপে ধরে কাজল করে। পুজো শেষে হলুদে ভেজা কাপড়ের টুকরো চোখের পাতায় বুলিয়ে সন্তানের মঙ্গল কামনা করেন। তারপর চোখে কাজলের ফোঁটা আর প্রসাদদিয়ে ঘেঁটু পুজোর প্রথম পর্ব শেষ হয়। এবার সন্ধ্যা নামার আগে ঘরে ঘরে ছোটরা ঘেঁটু গাইতে আসে। গৃহস্থ সাধ্যমত ওদের দিয়ে বিদায় করে। অনেকে বলেন ঘেঁটু হলেন মহাদেবের অনুচর ঘন্টাকর্ন আবার অনেকেই আছেন যারা বলেন ঘেঁটু হলেন খোস পাঁচরার দেবী। মানে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ। ওনার পুজো করলে চর্মরোগ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়। তর্ক তো চলতেই থাকবে কিন্তু আমাদের তাতে কি । উৎসব প্রিয় বাঙালির বারোমাসে তেরো পার্বণে আমাদের গাঁয়ের মানুষ গুলান স্মৃতি হয়ে চির ধারক হয়ে বেঁচে থাক আমাদের ছেলে বেলা।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours