শ্বেতা ঘোষ, ফিচার রাইটার, নৈহাটি, উত্তর ২৪ পরগনা:

দৃশ্য একঃ
রোজকার মত সকালে মৌসুমী ডার্লিংয়ের হোয়াটসঅ্যাপ ম্যাসেজ মোবাইলে ফুটে উঠল 'গুড মর্নিং ভালো থেকো।' শৌভিক প্রতি উত্তর দিল 'সুপ্রভাত মাই হার্ট আই লাভ ইউ।' মৌসুমী ভালবাসার মানুষটাকে সঙ্গে সঙ্গে ফোন। 'কাল রাতে শুয়ে শুয়ে ভেবেছি বৈশাখ মাসে আমাদের বিয়েটা দুর্গাপুরের 'আনন্দ পার্ক ভিউ ব্যাংকোয়েট' এ করলে কেমন হয় আমার জানু? আমার ইচ্ছে আমি যেন সেখানেই তোমার সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়ি।' শৌভিক হেসে বলল 'আইডিয়াটা মন্দ নয়। তাছাড়া তুমি যা বলো তা খুব ভেবেই বলো সে কনফিডেন্স আমার আছে।' 'লজ্জা লাগে তুমি কি যে বলো না!  তবে এটা ঠিক জানো সোনা 'আনন্দ পার্ক ভিউ ব্যাংকোয়েট' যে কোনও অনুষ্ঠান বাড়ি আয়োজনের জন্য একেবারে আল্ট্রা মর্ডাণ প্লেস। আমার এক বান্ধবীর বিয়ে মাস খানেক ওখানে হয়েছিল। একেবারে সুপার ডুপার অ্যারেঞ্জমেন্ট। সব যেন হাতের মুঠোয়। ২,৫০০ বর্গ ফুটের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত হলঘর। গা লাগোয়া ৪,০০০ বর্গ ফুটের শেডযুক্ত লন আর ১০,০০০ বর্গ ফুটের উন্মুক্ত ফেন্সিং লন। শুধুই কি তাই অতিথি নিবাস রয়েছে ছয়টি। ডরমেটরির সুবিধাও কিন্তু রয়েছে। আরও বড় ব্যাপার কি জানো গাড়ি পার্কিংয়ের অঢেল জায়গা।
ক্যাটারিংয়ের কথা মনে পরলে সেই সব খাবারের স্বাদ আজও জীবে লেগে রয়েছে। খাবারের কোয়ালিটি ও প্রেজেন্টেশন সো ডিলিশিয়াস মাই ডিয়ার।' শৌভিক হাসতে হাসতে বলল, 'টাকা ফেললে এরকম তো সবখানেই পরিষেবা মেলে। বোঝোই তো ছাড় কড়ি মাখো তেলের যুগ।' না শৌভিক সবটা ঠিক তুমি বললে না বলে মৌসুমী হৃদয় দেওয়া মানুষটিকে বলল 'এখানে কিন্ত রিয়েলি রিজেনেবল প্রাইজ আমি সিওর। তাছাড়া দুর্গাপুরের সিটিসেন্টার বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢিল ছোড়া দূরে আনন্দ পার্ক ভিউ ব্যাংকোয়েট অবস্থিত। যোগাযোগের আদর্শ স্থল একেবারে। সেফটির বিষয়ে পুরো নিশ্চিন্ত। স্পট থেকেই দেখা যায় পুলিশ ফাঁড়ি। আর সবচেয়ে বড় কি জানো এখানে পার্কের একটা আলাদা রোমান্টিক অ্যাম্বিয়েন্স আছে। এই আবহটা কোথায় পাবে গো?' ঠিকই বলেছে মৌসুমী। এই পার্ক মানেই তো ওয়াটার পার্ক আর কত কি রাইডিংয়ের পসরা। শৌভিকের মনে পড়ে বছর দেড় আগে কোনও এক মৃদু বষর্ণ সন্ধ্যায় এই মৌসুমী তার সাধের মোবাইল ফোন পার্কের ভিতরের একটা বসার জায়গায় ভুল করে ফেলে দিয়ে চলে যাচ্ছিল। ঠিক তখনই সেখান দিয়ে একা একা হাঁটছিল সে। তার নজরে আসতেই মৌসুমীকে ডেকে মোবাইলটা ফেরত দেয়। তার সততায় মুগ্ধ হয়ে মৌসুমী তখনই চেয়ে বসে শৌভিকের ফোন নম্বর। সেই শুরু মন দেওয়া নেওয়া। মনে মনে সে ভাবে যে সন্ধিস্থলে ঈশ্বর তাদের জীবনের যাত্রাপথ মিলিয়ে দিয়েছে সেই জায়গা যখন পারিবারিক অনুষ্ঠানের পক্ষে আদর্শ সেখানে হয়েই যাক যদিতং হৃদয়ং তব পর্বের এক পূর্ণ বৃত্ত। ব্যাস শৌভিক ফোনে মৌসুমীকে বলল  'ডান মাই স্যুইট হার্ট বিয়ে আমাদের ওখানেই হবে।'
দৃশ্য দুইঃ
অ্যাপন্টমেন্ট টা আগেই করা ছিল। তাই ঘড়িতে বেলা বারোটা বাজতেই কুন্তল সেনের চেম্বারে প্রবেশ করলেন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এক্সিকিউটিভ রিয়া দত্ত। কুন্তলবাবু আবার কলকাতার এক মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির জয়েন্ট ডিরেক্টর। তিনি তা‍র চেম্বারে বসে রিয়া সেনকে চেয়ারে বসতে বললেন। তারপর বললেন, 'মিস দত্ত আমাদের কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টরের ইচ্ছা এবার আমাদের ইয়ার এন্ডিং কর্পোরেট সেমিনারটা সাউথ বেঙ্গলের কোথাও অ্যারেঞ্জ করা। আপনি সাজেস্ট করুন কোথায় এটা অরগানাইজড করলে প্রতিষ্ঠানের সুনাম বজায় থাকবে।' কপালে চুলের লক্সটা এলিয়ে পড়েছিল। সরু চিক্কন আঙূল দিয়ে লক্সটা হালকা সরিয়ে রিয়া দত্ত  বলল 'আপনাদের কোম্পানি আমাদের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের বহুদিনের ক্লায়েন্ট। আমরা সারা ভারতেই এরকম ইভেন্ট আয়োজন করি আপনি জানেন মিস্টার সেন। আমার মতে দক্ষিণবঙ্গে কর্পোরেট সেমিনার বা মিটিং বা পার্টি আয়োজনের আদর্শ স্থল হল দুর্গাপুরের আনন্দ পার্ক ভিউ ব্যাংকোয়েট। চোখ বুজে ভরসা করতে পারেন। এখানে একটা এক্সক্লুসিভ প্লাস পয়েন্ট আছে। এই আনন্দ পার্ক ভিউ ব্যাংকোয়েটটি রয়েছে দ্য ফেমাস আনন্দ অ্যামিউজমেন্ট অ্যান্ড ওয়াটার পার্কের মধ্যে। সেখানে রয়েছে টয়ট্রেন ওয়াটার পার্ক ও নানান রাইডিং। সঙ্গে ইনসাইড পার্ক রেস্টুরেন্ট। গেস্টদের অফ টাইম কাটানোর এমন ডেস্টিনেশন সাউথ বেঙ্গলে এই একটাই। ওয়েট মিস্টার সেন আমি ওদের সঙ্গে কথা বলি।' রিয়া দত্ত এবার সাউন্ড মোডে দিয়ে ফোনে সংযোগ করলেন পবন কুমার শাহকে। পবনবাবু আবার এই পার্ক ও এই ব্যাংকোয়েটের কর্ণধার। তাঁর ফোন বাজতেই পবনবাবু বলেন 'বলুন রিয়া ম্যাডাম কেমন আছেন? নমস্কার। বলুন কি সেবা করতে পারি। জানেনই তো আপনাদের সেবার জন্য আমি সদা প্রস্তুত।' 'হ্যাঁ আমি জানি আপনাদের সুন্দর পরিষেবা আর সহৃদয় ব্যবহারের কথা। আমাদের এক প্রেস্টিজিয়াস কর্পোরেট ক্লায়েন্ট আপনাদের ওখানে একটা সেমিনার করতে চায়। হাই প্রোফাইল ডেলিগেস্ট জয়েন করবেন। আমাদের সুনাম জড়িয়ে থাকার কথা কিন্তু।' রিয়া দত্তর এই কথা শুনে পবনবাবু বলেন 'আমরা ব্যবসা করি ঠিকই। কিন্তু আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য হল কাস্টমার স্যাটিস্ফেকশন। আপনি বলুন এর আগেও তো আমাদের এখানে কত সেমিনার মিটিং আপনারা আয়োজনের কন্টাক্ট আমাদের দিয়েছেন। আপনার অভিজ্ঞতা আপনিই বলুন।' রিয়া দত্তর উত্তর 'তা ঠিক আপনাদের আয়োজনে একশোতে একশো দিতেই হবে। ওকে আপনাকে সেমিনারের তারিখ আগে জানিয়ে দেব আর অ্যাডভান্স বুক করে নেব কেমন। বাই।' রিয়া দত্তর মোবাইল সাউন্ড মোডে থাকায় ফোনে পবনবাবুর কথাও শুনলেন কুন্তল সেন। সবশেষে তিনি বললেন 'মিস দত্ত আর কোনও কথা থাকতে পারে না। আপনাদের রেট চার্ট পাঠিয়ে দেবেন। অ্যাপ্রুভাল করে দেব।'

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours