তানজিন তিপিয়া, লেখক ও রন্ধন বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ:

“গান্ধীজী” শান্তি সম্প্রীতির অভিন্ন নামকরণ। তিনি এমন যোদ্ধা যিনি যুদ্ধ করেন নি। যুদ্ধ করতেও মন্ত্রণা দেন নি। দিয়েছেন সান্ত্বনা, পৃথিবীর এই মহাগোলকে ঘটিয়ে গেছেন শান্তিপূর্ণ জীবনযুদ্ধ। রেখে গেছেন অসহিংস আন্দোলনের প্রতীকী। গান্ধীর জীবনধারা জানলে কেউই শ্রদ্ধা না করে পারে না।
তাঁর শোকে ভোজপুরিতে গীত লিখেছিলেন রাসুল মিয়া, তিনি ভগবান রাম আর গান্ধীকে নিয়ে লিখতেন যা সুভাষ চন্দ্র কুশওয়াহা উনার পত্রিকা লোক রং এ প্রকাশ করেন।
আমার গান্ধীকে কে গুলি মারলো?
তিন তিনটে গুলি মারলো? 
আজিই তো স্বাধীনতা পেয়েছিলাম
আজিই গুলি মেরে দিলো। 
“ঈশ্বর আল্লাহ্‌ তোরিই নাম সবায়কে সম্মতি দে ভগবান” এমন শব্দচায়ন একজন ধর্ম ভীরু ব্যক্তি দ্বারাই সম্ভব। যিনি বাস্তবে ধর্মকে বাস্তবায়ন করেছেন নিজ জীবন শৈলী দ্বারা। বাক্যটির মাধ্যমেই প্রকাশ পায় যে তিনি  ঈশ্বরে বিশ্বাসী এবং সকল আস্থায় শ্রদ্ধাশীল।
অনেকে ব্যাঙ্গ করে উনায় মুসলিম বলতেন। একদা উনায় এক চিঠিতে লিখেছিলেন একজন- তোমার নাম মহাত্মা গান্ধী থেকে পাল্টে  মোহাম্মাদ গান্ধী রাখা উচিৎ। সাথে ছিল কিছু গালি যেগুলো তিনি ভাগাভাগি করেননি। ঘটনাটি ঘটে ৭ এপ্রিল ১৯৪৭। বাপু উনার প্রার্থনা সভায় বলেন-
চিঠি প্রেরণকারীদের মধ্যে একজন লিখলো তোমার নাম মোহাম্মাদ গান্ধী কেন না বলা যায়? চিঠিতে বড় সুন্দর গালিও দিয়েছে যেগুলো এখানে বলা জরুরি নয়। গালি দেওয়া মানুষগুলোর জবাব যদি না দেয়া যায়, তো তারা এক বার, দুই বার , তিন বার বা একাধিক বার গালি দিয়ে ক্লান্ত হয়ে যাবে। ক্লান্ত হয়ে হয়তো চুপ হয়ে যাবে অথবা আরো  রাগের বশে বশীভূত হয়ে মেরে ফেলবে।
আর তাই ঘটে, আসলেই এক ব্যক্তি রাগের আঘাতে গান্ধীকে হত্যা করে বসে। সন্দেহ হতেই তো পারে কারণ তিনি সবায়কে একই মর্যাদা দিয়েই দেখতেন। অথচ গান্ধীর অন্তিম শব্দাবলী ছিল- “হে রাম”।
তাহলে একটু বুঝুন যদি একটু বিস্তারিত ব্যাখ্যা করি। একজন প্রকৃত হিন্দু ধর্মাবলম্বী হিন্দু ধর্মের বিধি বিধানে নিজেকে আচ্ছন্ন করে অসাধারণ চরিত্রিক বৈশিষ্টের অধিকারী হয়ে সকলকে একত্রে নিয়ে পথ চলার প্রয়াস করে গেছেন। মানুষের প্রতি এই মায়া ধর্মই উনাকে দিয়েছে। উনার এই গুণাবলীকে কেন্দ্র করেই প্রতি হিংসা কাজ করেছে এক দলভুক্ত লোকেদের মাঝে। তারা উনার মতাদর্শের ঘোর বিরোধী। তারা আচ্ছন্ন গান্ধীকে নিয়ে। তারা গোপনে ঔত পেতে  সঠিক সময়ে বাপু’র রুহ’কে তাঁর শরীর থেকে আলাদা করেছে ঠিকই কিন্তু উনার আদর্শ ৭২ টি বছর পেরিয়েও হত্যা করতে পারেনি। উনার অপরাধ শুধু এটাই যে তিনি গড়ে ছিলেন একতার একত্রীকরণ। সকল ধর্মের ভিন্ন আস্থার মানুষকে নিয়ে অহিংসার উদাহরণ গড়তে, পৃথিবীর অন্তরে শান্তির বাসভবন গড়তে। বাপু উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, সকল ধর্ম সঠিকতর উপায়ে পালিত হলে কোন অধর্ম অসুর হয়ে স্থান করে নিতে পারবে না। 
যে ধর্ম আমাদের শেখায় অহিংসা পরম ধর্ম। সে ধর্ম কীভাবেই বা মন্দ করায়?
অহংকারী হয়ে জীবন আমরা গড়ি। নিজ স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার আমরা করি। আর সর্ব দোষ ঠেলে দেই ধর্মের উপর।
জনহিতের বিপরীত যে জন,
সে কি করে গায় কীর্তন? 
কেন আমরা আজ ভাবছি না?
আস্থার তো হাত পা নেই, বাকযন্ত্র নেই ধর্ম কীভাবে অপরাধ করায়?
কেন আমরা অপরাধীর ধর্ম দেখে ধর্মকে ধিৎকার দেই?
তার মাঝে অধর্ম জায়গা করে নিয়েছে বলেই তো সে আজ অমানুষ, অপরাধী। হ্যাঁ তবে এই ধর্মচারণে আছে আধ্যাত্মিক তেজস রশ্মি। যে রশ্মির সন্ধান একবার পেয়ে বসলে পৃথিবীর  শখ, সুখ ও সমৃদ্ধি পাওয়ার আকাঙ্খা শূন্য হয়ে রয়। পার্থিব লোভ অকার্যকর। ধর্ম কীভাবে পারে কারো ক্ষতি করতে?  ধর্ম তো পবিত্র  গ্রন্থ, কিতাবেই সীমাবদ্ধ। এই গ্রন্থগুলো বানী শুধু মুখস্ত ও উচ্চারণ করলেই নয় বাস্তব জীবনে প্রয়োগ আবশ্যক।                 
                গান্ধী তাঁর জলজ্যান্ত প্রমাণ,
                অহিংসার জীবন্ত ফরমান।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours