জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা, দুর্গাপুরঃ

এই অংশে প্রবেশের পূর্বে, মনে হোল একটা বিষয় স্পষ্ট করে দেওয়া উচিত হবে।এই পর্বের ত্রিশ নম্বর লেখাটি আজ লিখছি। হয়তো এটাই হবে এই পর্বের শেষ লেখার আগের দুটির একটি।   কাজেই মনে হোল,  শেষ লেখায়  পৌছউনোর  একটা স্বীকারোক্তি করে রাখা উচিত হবে। ইতিহাসের  এই জটিল এবং অতি গুরুত্বপূর্ন বিষয়টি লেখার  জ্ঞান এবং যোগ্যতা এই লেখকের থাকার কথা নয়। ঘটনা প্রবাহকে,  বিষয়ে  কিংবা ভাষার সংহতি ঘটানোর কোন যোগ্যতা লেখকের থাকার কথা নয়।
----- কাজেই চাইবো, সহৃদয় পাঠক পাঠিকা, এই লেকাগুলির মধ্যে যেখানে যেখানে ফাঁক রয়ে গেছে, সেগূলিকে বিনা সংকোচে শিখিয়ে দেবেন। প্রয়োজনে যদি কিঞ্চিৎ তর্ক হয়, সেটা লেখার অভিমুখকেই শক্তিশালী করবে।
প্রশ্ন কেউ করতেই পারতেন, বিষয় এবং ভাষায় যার বাঁধুনি
যারে এতো, নড়বড়ে বলে নিজেই মেনেছেন, তার কেন
ইতিহাসের এই জটিল বিষয়ে লিখার সখ হবে?
------ জবাবে বলবো, প্রানের তাগিদে। বিশ্ব ইতিহাসের অপ্রকৃ্তিস্থতাই যে দেশে দেশে জাতীয় অবস্থার বিভিন্নতায়  মিশে  যেতে,  যেভাবে গিরগিটির মতো রং বদলে  সংকটাকীর্ণ বিশ্ব সংকটের ধাক্কায়, এক একটা দেশ এবং জাতি যে সংকটে জড়িয়ে পরছিলো, সেটা বুঝতে পারছিলাম, কিন্ত কেন কিংবা কীভাবে  সংকট  নির্মান করছিলো অথবা পরিনতিই বা কী - এসবকে লেখক কোন  নিদৃষ্ট  সামগ্রিকতায় চিহ্নিত করতে পারছিলেন না।

অথচ বুঝতে পারছিলেন, বিশ্ব পরিস্থিতির গহ্বরে পতিত , দেশ  তার স্বয়ং সম্পূর্ণতা হা্রানোর কারনে,  মেহনতিদের দাসত্বের পর্য্যায়ে টেনে নামাচ্ছে। এসব কিছু লেখকের কাছে বেদনাদায়ক হলেও, এসব কারনে বিপর্য্যস্ত হওয়ার কারন ছিলো না,
---- যখন দেখা গেলো, ঘটনা প্রবাহের পৌনঃপনিক  পরিনাম   যে বিশেষ বিন্দুতে চিহ্নিত হচ্ছে, সেই বিন্দুতেই লেখককে এই অনুসন্ধানে নামতে বাধ্য করেছে।এই বিন্দুটা এখানেই। দাসত্বের অর্থনীতি এবং সামাজিক পরিস্থিতি, শ্রমিক শ্রেনীকে আত্মমর্য্যাদাহীনতায় ঠেলছে। আরো ভয়ংকর, এই আত্মমর্য্যাদাহীনতা শ্রমিকদের আত্মিক হয়ে যাচ্ছে। দাসত্বের মানসিকতায় ছেয়ে যাচ্ছে। আর এটা ঘটছে সারা বিশ্বে। এইভাবে বুঝেছি, জাতিসত্বাগুলির পারস্পরিক সম্পর্ক এবং বিশ্ব সম্পর্কের পারস্পরিকতায়।

এই সুত্রেই মণে হয়েছে, জাতীয়তার সাথে আন্তর্জাতীকতার সম্পর্কগুলিকে খুজে বেড় করা এবং ভারতীয় জাতীয়তা্য় খন্ডিত অবস্থানগুলিকে চিহ্নিত করা । সেকাজটাই  করার চেষ্টা হয়েছে, এই ত্রিশটি লেখায়। আরো দু' তিনটি হয়তো লিখতে হবে।
এই অজ্ঞাত কুলশীল লোকটিকে লিখতে হচ্ছে, অন্য একটা কারনে। প্রথমতঃ যারা এতো দিন অর্থনীতির সাথে সামাজিক সম্পর্কের উপরে  লিখেছেন, কোন কারনে বলা সম্ভব নয়, তারা 'শ্রমের' সাথে একাত্ম হয়ে কদ্যাপি লিখেছেন।
যদি লিখেও থাকেন কিছু কিছু পূর্বে, আমেরিকান মিলিটারীতন্ত্র যেদিন থেকে, বিশ্বে দাসত্ব চাপিয়ে দিয়ে, ইতিহাসের অবসান হয়েছে বলে দাবী করছেন এবং ভারতকে কার্য্যতঃ আত্মনির্ভরতার প্রশ্নে নিস্ব বানিয়ে ছেরেছে, সেদিন থেকে তারা উচ্চমধ্যম বর্গীয়তার দিকে ঝুকতে গিয়ে, ভারত বিরোধীতার সাথে সাথে,
মেহনত  এবং মেহনতিদের ঘৃনার স্থানেই নিয়ে যাচ্ছেন।
অন্যপ্রান্তে, এসব লেখকরা, সাধারনভাবে, জতীয়তার বিকাশে আন্তর্জাতীকতার অবদান, জাতীয়তার উত্তরনের সাথে কিভাবে প্রজাতন্ত্রের রুপ বদল হয়, সে সম্পর্কেও কদ্যাপী লেখার সুযোগ করে নিয়েছিলেন।
----- বিষয়টি তো খুব সোজা হওয়া উচিত ছিলো । ১৭৮৯ ফরাসী বিপ্লবের পর যে প্রজাতন্ত্র এসেছিলো, তার সাথে ইউরোপের বর্তমান প্রজাতন্ত্রের যদি ফরাক থেকে থাকে, তা তো দুই কালের জাতীয়তার রুপান্তর প্রকয়া্র পরিনাম।অনুরুপভাবে, ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের সাথে চিনের প্রজাতন্ত্রের যদি কোন ফাক থাকে, তবে উভয় দেশের জাতীয়তার ফরাক হওয়ার কারনে।

------ এখান থেকেই দ্বিতীয় তত্বটি শক্তি পায়, জাতীয়তা একটা ক্রম বিকশিত ধারা । এর গঠনে প্রগতীবাদীতার উঠা নামা থাকতে পারেই, কিন্তু সামগ্রীকতার বিচারে জাতীয়তার  অভিমুখ  সব সমাই মহামানবিকতার পথে। মেহনত এবং মেহনতীর মুক্তি ব্যতিত, এই 'মহামানবিকতাও' উচ্চবিত্তদের সীময়াস সীমায়ীত।
কাজেই যে ব্যক্তি নিজে শ্রমিক, যার চেতনাজগত কারখানা বা খনিমুখ থেকে নির্মিত হয়েছে, যিনি প্রজন্মান্তরে মেহনত এবং মেহনতীর কাছে দায়বদ্ধ, তিনি তার সীমাবদ্ধতার মধ্যেই জটিল বিষয়টিতে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন।
কাজেই লিখতে লিখতেই তৃতীয় সুত্রটি খুজে পেলাম। বিশ্ব যখন দাসত্বের দিকে গড়িয়ে যাছে, 'অসির সাথে মসি'  যদি মেহনতিদের হাতে না আসে, চিরদাসত্ব অনিবার্য্য।
তাই জীবন রায়ের লিখাতে অবতরন। যেহেতু, ইতিহাসের অভিমুখ সম্পর্কে সাধারন নিয়মগুলি তার হাতে ছিলো, ইস্পাত এবং কয়লার অভিজ্ঞতা এক পাত্রে সমাহিত হয়েছিলও, ইতিহাসের ঘটনা প্রবাহকে
ভাবাদর্শের শৃংখলায় বন্দি করার সুযোগ হয়ে গেছে।
---- এইভাবে লিখতে লিখতেই ঘটনা প্রবাহের বিন্যাস কলমের মুখে এসে গেছে।এতদসত্বেও অনেক ত্রুটী নিশ্চিত থেকে যাবে। বিশেষ করে, ভারতে আধুনিক জাতীয়তার বিষয়ে এখন যখন প্রবেশ করবো, সেখানে মহা ভূল হয়ে যাওয়ারও সম্বাবনাও থেকে যাবেই। ...(চলবে)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours