অপর্ণা ভট্টাচার্য, লেখিকা ও সমাজকর্মী, আসানসোল:

জীবনে একটা সময় আসে যখন পিছন ফিরে তাকাতে ইচ্ছে করে। ছুঁতে ইচ্ছে করে অতীতকে। অতীত যখন বর্তমান ছিল, তখন ছিল  অসংখ্য অপ্রাপ্তির হাহুতাশ, ছিল ভাল না লাগা, কত না বোঝা। সংসারের চাপে, নিত্যদিনের লড়াইয়ে ক্লান্ত মন  যখন নির্ভার হতে চায় তখনি যেন অতীত ফিরে ফিরে আসে। ভীষন ভাবে আমাদের অনুপ্রাণিত অতীতকে ফিরে পেতে চাই।
সত্যিই কি এই চাওয়াটা মনের কোন দোষ?  মনে হয় না। দোষ হল সংসার, সমাজ,  পরিবেশের। এই তিনটি আবার একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি জড়িত। সমাজের স্খলন মানেই পরিবেশের স্খলন। সমাজ ও পরিবেশের প্রভাবে সংসারে নেমে আসে বিবিধ অশান্তি।
 আজকের সমাজ ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক পরিবেশ, পরিস্থিতি এমন এক ভয়ংকর অবস্থায় আমাদের দাঁড় করিয়েছে যে সকলে খুঁজে বেড়াচ্ছি মুক্ত বাতাস।যেখানে দু দন্ড শান্তির নিঃশ্বাস নিতে পারব। আর ঠিক তখনি মন চলে যায় অতীতে।
একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হবার সঙ্গে সঙ্গে মা বাবা আতান্তরে। যদি সে পুত্র সন্তান হয়,জন্মাবার সঙ্গে সঙ্গে দুশ্চিন্তা আজকের দুনিয়ার ইঁদুর দৌড়ে সে সমতা রাখতে পারবে তো?  ভয়ংকর রাজনীতি তাকে গিলে খাবে না তো?  আর যদি কন্যা সন্তান হয়, ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মা বাবার রাতের ঘুম উবে গেল। প্রথম এবং প্রধান চিন্তা কি করে কন্যা খাদকদের হাত থেকে মেয়েকে  রক্ষা করব।
আর ঠিক তখনই তুলনা আসে অতীতের সঙ্গে, আমাদের শৈশব তো এত কঠিন ছিল না! একান্নবর্তী পরিবারে শিশুদের কেউ না কেউ নজরে রাখতেন। ঠাকুমা  ,মা, কাকীমাদের ছত্রছায়ায় কন্যা সন্তান তরতর করে বেড়ে উঠত অবলীলায়। দুর্ঘটনা তখনও ঘটত , তবে তা হাতে গোনা। আমার ছেলে কোথাও কোন অন্যায় করলে পাড়াতুতো কাকা, জ্যঠারাই কান মলে শাসন করে দিতেন। সে অধিকার তাদের ছিল। স্কুল শিক্ষক এবং গৃহ শিক্ষক উভয়ের অধিকার ছিল ছাত্রকে পুত্রসম শাসন করার। বাবা মায়েদের কোনদিন ভাবনাতেও আসত না যে শিক্ষকের বিরোধিতা করা যায়।
আবার এ কথাও সত্য যে শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকদের  মান ও আজ নিম্নগামী। সর্বত্র অনাচার আর ভ্রষ্টাচার। মানুষ তার সাধারণ বোধবুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছে। আত্মসর্বস্বতা আর হীনমন্যতা অজগরের মত গ্রাস করে ফেলেছে বর্তমানকে।
একান্নবর্তী পরিবার নিজের সঙ্গে করে নিয়ে গেল সহনশীলতা, বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, অপরের জন্য স্বার্থ ত্যাগ এমন আরো কত কি। আজ আমরা সকলের দিকেই অবিশ্বাসের চোখে তাকাই। অথবা স্বার্থ ছাড়া কারো সঙ্গে কথা বলার প্রশ্ন ই আসে না। সন্তানের বয়ঃসন্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাকে শেখাই স্কুলে নিজের জিনিস বন্ধুদের দেবে না, নিজের টিফিন নিজে খাবে ইত্যাকার কথা।অর্থাৎ শৈশবেই তার মনে স্বার্থপরতার বীজ রোপণ করে দেওয়া হয়। সেই বীজ পত্র পুস্পে পল্লবিত হয়ে শিশুটিকে  ক্রমশ কোনঠাসা করতে থাকে।
তাইতো মন বারবার পিছন ফিরে তাকায়, ফিরে ফিরে আসে অতীত। ফিরে পেতে চাই সেই সুন্দর সম্পর্ক গুলো। চলো সবাই আরো একটু বেঁধে  বেঁধে থাকার চেষ্টা করি। আরো একবার চেষ্টা করি সনাতন সম্পর্ক গুলো ফিরিয়ে আনার।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours