সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, লেখক ও সাংবাদিক, কলকাতা:

নাসিকের কৃষক মহা মিছিল থেকে রাজধানীর বুকে জেএনইউ ছাত্র দের  আন্দোলন, ----এমন এক দিকে দেশ এগোচ্ছে যেখানে ছাত্র যুব কৃষক ক্রমশ স্বীকৃত কোনো দলের ছত্রছায়ায় আন্দোলনের পথ ছেড়ে এবার নিজেই রাস্তায় নামা শুরু করেছে, এরপর আক্রান্ত হতে চলেছে সমস্ত শ্রমিক ও চাকুরীজীবী মানুষ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইতিমধ্যেই শুয়ে পড়েছে, এরপর? থমকে দাড়িয়ে গেছে উন্নয়ন। ক্রমশ কমছে অর্থনীতির বৃদ্ধির হার। একটার পর একটা  হাজার হাজার কোটি টাকা লাভ করে এমন দেশীয় লাভজনক সংস্থা বিক্রি করছে দরকার!! মাত্র ২২০ জন কোটিপতি শিল্পপতির জন্য ৭৭ হাজার কোটি টাকার ঋণ মুকুব ঘোষণা করল কেন্দ্রের নির্দেশে স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া। গত চার বছরে সব চাইতে বেশি মানুষ কাজ হারিয়েছে নোট বন্দির ফলে।সবচাইতে বেশি বেকারত্ব বেড়েছে এমন যে গত ৪৫ বছরেও এত বেকারত্ব বাড়ে নি।একই সঙ্গে এত বেশি ঋণ খেলাপির ঋণ মকুব করতে গিয়ে  ব্যাংকগুলোর নাভিশ্বাস ওঠে নি। এরপর সরকার হাত বাড়িয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের জমানো লক্ষ লক্ষ  কোটি টাকার সঞ্চিত তহবিলের দিকে। বাধ্য করা হচ্ছে LIC কে লোকসানি সরকারি ব্যাংক চালাতে,সেখানে টাকা লগ্নি করে এবার LIC কে দুর্বল করা হচ্ছে যাতে বেসরকারি দেশি বিদেশি বীমা সংস্থার পক্ষে ব্যবসা করাটা তুলনামূলকভাবে খুব সুবিধেজনক হয়ে যায়।
ভাবুন একবার, দেশকে শক্তিশালী করার নামে মেক ইন ইন্ডিয়া চালু করার পর , চীনের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার কথা বলার পর দেশের মানুষ যখন অপুষ্টির শিকার সবচেয়ে বেশি এই পৃথিবীতে অন্য সকল দেশের তুলনায়, সেই সময় তিন হাজার কোটি টাকার   সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেলেরমূর্তি তৈরি করা হচ্ছে, যার জন্য হাজার হাজার কোটি টাকার ইস্পাত আনা হলো চীন থেকে। অন্যদিকে শ্রমিক শ্রেণী র  কাজের অধিকার সংকুচিত করতে সমস্ত রকম চাকুরীতে স্থায়ী নিয়োগের নিয়মটি বাতিল করে দিচ্ছে সরকার। মাত্র 3 থেকে 6 মাসের চুক্তিতে সরকার এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে নিয়োগ করা হবে। সরকার কি চাইছে? শ্রমিকের পেটে লাথি মেরে দেশে শিল্পোন্নয়ন হবে? রাম জন্মভূমি নির্মাণ করে দেশের উন্নয়ন হবে? যেখানে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় মিড-ডে-মিল পর্যন্ত টাকার অভাবে ধুঁকছে ছেলেমেয়েরা খেতে পারছে না মাথাপিছু বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে স্কুলে স্কুলে, আর উচ্চ শিক্ষার সমস্ত ভালো ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফি বৃদ্ধি করা হচ্ছে 100 থেকে 300 শতাংশ, এই সবকিছু কার স্বার্থে ?দেশের মানুষের স্বার্থে?
আমি কোনো দলীয় রাজনীতির মধ্যে নেই। কারণ কোনো রাজনৈতিক দলই ধোয়া তুলসী পাতা নয়। কিন্তু যে দল যে পরিমাণ খারাপই হোক, বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর যেভাবে একটার পর একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশের ভেতর থেকে সমস্ত শক্তিকে শুষে  অর্থনীতি এবং গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ গুলিকে দুর্বল করে দিচ্ছে, এরপর দেশ অনিবার্য ভাবি এক চরম নৈরাজ্য হতে চলেছে। কে ডানপন্থী কে বামপন্থী এসব রাজনীতি হিসেবে মানুষের জীবন চলে না। মানুষ এখন আর কোন দলের উপর আস্থা রাখতে পারে না। পারেনা কোন রাজনৈতিক নেতাকে বিশ্বাস করে ভোট দিতে। কারণ ভোট নিয়ে বিধায়ক হবার পর তিনি আবার যে কোন দল এগিয়ে নাম লেখাবেন তার কোন ঠিক নেই। গণতন্ত্র ?না গণতন্ত্রের নামে প্রহসন হচ্ছে? এই প্রহসন কিন্তু শুধুই ভোট রংগের নাটকীয়তায় আটকে থাকবে না, এরপর আক্রান্ত হবে মানুষের হাতে দলগুলি এবং তাদের প্রার্থীরা! সকলেই দেখেছেন খেয়াল করে নিশ্চয়ই যে  রাজ্যের  সাধারণ মানুষ একজন  বিজেপি প্রার্থী কে চরম লাঞ্ছনার করে হেনস্থায় শিকার হতে দেখেও তাতে  ক্ষোভে বিক্ষুব্ধ হলো না। কেউ আক্রান্ত বিধায়ক পদপ্রার্থীর জন্য কথা বললো না। এটা কিন্তু দেশের রাজনীতি সুস্থ তার পক্ষে এবং সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশের কাছে চরম বিপদজনক ইঙ্গিত। চরম সন্ত্রাস, ছাপ্পা ভোট করে রাজনৈতিক দল গুলো ক্ষমতায় আসে, তারপর তাদের চাপে বাঘের মত  মিডিয়া হয়ে যায় মেনি বিড়াল! যারা মুক্তমনা মানুষ তাদের কণ্ঠরোধের জন্য রযlএরপর মানুষ কোথায় যাবে?
উদাসীন সরকার এখন ক্ষমতা মত্ত! তারা বুঝতে পারছে না বিরোধী সংসদীয় রাজনীতিতে চরম থাকাটা আসবে এবার হয়তো মানুষের কাছ থেকে ই। ইতিহাসের শিক্ষা কিন্তু এমনই। বিরোধীরা আত্মসমর্পণ করে, সাধারণ মানুষই পতাকাহীন  জনগোষ্ঠী  হিসেবেই রাষ্ট্রক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। তাকে নৈরাজ্য বাড়ে। কিন্তু একটা পরিবর্তন আসে। সেটা দায়সারা পরিবর্তন নয়, বরং দায়বদ্ধ রাজনৈতিক প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক উন্মেষের নতুন অধ্যায় শুরু করে। চরম অন্ধকার থেকেই শুরু হয় আবার আলোর বিবর্তন। তার আগে সমস্ত দিক থেকেই শীত অবস্থাকে আক্রমণ করে বিপন্নতা কে ছড়িয়ে দেওয়ার একটা প্রচেষ্টা শুরু হয়ে যায় সমাজের মধ্যে থেকে, রাজনৈতিক শক্তি  তখন উন্নয়নের বদলে আত্মঘাতী শক্তি হিসেবে পরিচালিত হতে থাকে।
বামপন্থার  দুর্বল মুহূর্তে জাগরিত হয় মধ্যপন্থার রাজনীতি, আর সেটাও যখন দুর্বল ও দিশাহীন হয়ে যায়, তখনই মাথা ছাড়া দেহ আত্মঘাতী দক্ষিণপন্থী শক্তি। তারা তখন কিছু একটা করবার নেশায় বাকি সমস্ত দিনের ঐতিহ্য, এতদিনের শান্তিতে বেঁচে থাকবার মত কাঠামোটা ভিতর থেকে ভাঙতে থাকে। কিন্তু নতুন করে আর কিছু গড়ে ওঠে না। তেমন কিছু করে তুলবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়,  সমাজে তেমন একটা  আবহাওয়া থাকে না। তখনো ক্ষয়িষ্ণু রাজনৈতিক মূল্যবোধ হলেও যাজরা দেশ ও দেশবাসীর কল্যাণের কথা ভাবে, তারা অর্থের কাছে নিজেদের বিক্রি করে দেয় না। অর্থ নিয়ন্ত্রিত রাজনীতির বিপ্রতীপে এই আদর্শবাদী বিচিত্র মানুষগুলো  গভীর অন্ধকারের মধ্যে প্রদীপ শিখা হয়ে জ্বলতে থাকেন। হয়তো এদেরই আহবানে পথে নামবে মানুষ নতুন করে  নতুন ভারত গড়বে বলে।




Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours