কাজল ভট্টাচার্য, সিনিয়র জার্নালিস্ট, কলকাতা:
কলকাতা হাইকোর্টে জোর ধাক্কা খেল সিবিআই।
দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ মঞ্জুরী দিলো রাজ্য গোয়েন্দা প্রধান রাজীব কুমারের আগাম জামিনের আবেদনে।
রাজীব কুমারের আইনজীবীর আবেদনে সাড়া দিয়ে, ডিভিশন বেঞ্চও মনে করে, রাজ্য গোয়েন্দা প্রধানকে হেপাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের দরকার নেই।
14 সেপ্টেম্বর কলকাতা হাইকোর্টের এক নির্দেশের পরেই টানটান খেলা শুরু হয়েছিল সিবিআই, রাজীব কুমারের মধ্যে। বিচারপতি মধুমিতা মিত্র সেদিন রাজীব কুমারের গ্রেপ্তার হওয়ার হাত থেকে বাঁচার রক্ষাকবচ তুলে নেন। তারপর থেকেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়িয়েছেন রাজীব কুমারকে। আর রাজীব কুমারের আইনজীবী মরীয়া চেষ্টা চালিয়ে গেছিলেন আগাম জামিন পাওয়ার চেষ্টায়।
বারাসত আদালত ঘুরে সেই মামলা দায়ের হয় আলিপুর আদালতে। বিচারক জানিয়ে দেন, রাজীব কুমারকে গ্রেপ্তারের জন্য কোনও সরকারি অনুমতির দরকার নেই। এরপর হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন রাজীব কুমারের আইনজীবী।
লাগাতার চারদিন রুদ্ধদ্বার এজলাসে শুনানি চলে। শেষপর্যন্ত মঙ্গলবার বিচারপতি সহিদুল্লা মুন্সির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, রাজীব কুমারকে হেপাজতে নেওয়ার দরকার নেই। পঞ্চাশ হাজার টাকার বন্ড আর দুই জামিনদারের বিনিময়ে তাঁর আগাম জামিনের আবেদনে সিলমোহর দেয় হাইকোর্ট।
এদিকে সিবিআইয়ের অভিযোগ, রাজীব কুমারকে মোট আটবার তলব করা হয়। তিনি হাজির হয়েছিলেন মাত্র দুবার। সিবিআইয়ের বিরোধিতা করে রাজীব কুমারের পক্ষে জানানো হয়, সারদা তদন্তে পুরোমাত্রায় সহযোগিতা করেছেন রাজীব কুমার। এর আগে তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল শিলংয়ে। জেরা করা হয় চল্লিশ ঘণ্টা।
কিন্তু সেই জেরায় মুখ খুলতে চাননি প্রাক্তন নগরপাল, পাল্টা অভিযোগ সিবিআইয়ের। অধিকাংশ প্রশ্নের জবাব নানা অজুহাতে তিনি এড়িয়ে গেছিলেন। কারণ রাজীব কুমার জানতেন, হাইকোর্টের রক্ষাকবচ থাকার দরুন তাঁকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। ঠিক এই পরিস্থিতিতেই রাজীব কুমারকে ফের জেরা করতে চাইছিলেন সিবিআই। কিন্তু নোটিশ পাঠিয়েও তাঁকে আনা যায়নি। বাস্তবে রাজ্য গোয়েন্দা প্রধান ঠিক কোথায় আছেন, তার কোনও সন্ধান করে উঠতে পারেননি তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা। এ ব্যাপারে কোনও সদুত্তর মেলেনি নবান্নের তরফেও।
সিবিআই রাজীব কুমারের আগাম জামিনের কড়া বিরোধিতা করলেও, হাইকোর্টের নির্দেশে আপাতত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ব্যাকফুটে। শর্ত আরোপ করে ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, রাজীব কুমারকে তলব করতে হলে আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে নোটিস করতে হবে। দরকার পড়লে রাজ্য গোয়েন্দা প্রধানের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অধিকার দেওয়া হলো তদন্তকারী সংস্থাকে।
ওদিকে রাজীব কুমারকে নির্দেশ দেওয়া হয়, তিনি যেন কলকাতা ছেড়ে অন্যত্র না যান। সহযোগিতা করেন সিবিআই তদন্তে।
আজ কলকাতা হাইকোর্টের রায় ঘোষণা হতেই হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে যান এই মামলায় সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার তথাগত বর্ধন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সংস্থার এক এসপি পদমর্যাদার অফিসার। ওয়াকিবহাল মহলের অনুমান, এবার শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে সিবিআই। তবে তার আগে দফায়- দফায় চলবে সংস্থার লিগ্যাল সেলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours