প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান: 

রাতের নিছক তারাভরা আলোক, যেন অবলীলায় অস্তিত্বের আগল ভাঙা মুক্তি-  ফুলকিয়া বইহার আর লবটুলিয়ার জঙ্গল।  আরশিতে মুখোমুখি পরস্পর শ্বাস প্রশ্বাস, বিশ্বাস নাকি অবিশ্বাস!! এলোমেলো যুক্তির বুকেও যে সতর্করা, তা কি মায়াসম্ভ্রম নাকি কুক্ষিগত মতিভ্রম। জাদুবাস্তবে পাতালছায়া জলবিন্দু পাতায় পাতায় যেন আবহমান মিতালি সমীকরণ। তিনি অদ্বিতীয়, অনন্য "আরণ্যক"-এর 'বিভূতিভূষণ'। 

ট্রাংকুইলাইজারের উৎস চত্বর জুড়ে আছে অকারণের প্রতিদ্বন্দ্বী বিষন্নতা৷ স্থির মন্থর আনন্দময় সফলতার কথা ও কাহিনী৷ পৃথিবীর ফুসফুসে ঘনঘন আর্তি ভাবনার। স্বার্থের অঙ্গীকার করে বিহ্বলের এই কি তবে মহাপ্রস্থান ছিল!! কলঙ্কিত চাঁদের মতো উপকরণের মায়া পাঠক কলঙ্ক উজাড়, মায়া উদাস উন্মাদন। 

সময়টা ১৯৩৯। পশ্চিমের মহাযুদ্ধ, অনিবার্যের মেগালোম্যানিয়া৷ সন্ত্রাসের চলচ্ছবি, মানুষের ইতিহাস, প্রাচ্যের ভূখণ্ড, নিভৃতে প্রশান্তির বার্তা। এখানে তো বিস্ময়ের যুদ্ধে তাৎপর্যের শাখা ; অতিরঞ্জন নয়, অভূতপূর্ব সৃষ্টিশীল অনুরণনে স্বতন্ত্র যাত্রা। একমুখী সরলরেখায় স্তরপরম্পরারা৷ শিল্পী হয়ে উঠতেই প্রসার সোজা তিরের আকার। অদ্বৈত মল্লবর্মণ - এর নিবিড় সম্পৃক্ততা৷ বৃত্ত জুড়ে আছে প্রস্তাবনা৷ লবটুলিয়া স্মৃতি, তবে তা স্বীকারোক্তি। 

সত্যচারণের সুখ নয়, ভালোলাগার অবয়বী ভ্রুণ যাপন৷ অংশবিশেষে নয়, অংশী হয়েই প্রস্তাবনা।। আমারো নিজের করে বলতে ইচ্ছা করে, 

আমার পাণ্ডুলিপির খাতায় কাটাকুটি করে লিখেছি তোমায়... 
একটু গুছিয়ে নিচ্ছি.... 
মনের চেতনায় শরীর ধুয়ে নিয়েছি  সাগরে, 
আর ভুল নেই.. 
আমার বলে আঁকড়ে নিয়েছি।। 

অনুভবের শব্দমালা সাজিয়ে মালায় গাঁথা
তোমার নাম;
তোমার চোখের জল...
আমার আকাশভরা  গীতবিতান। 

 উত্তরের ইশারায় খুঁজে পাওয়া-
 পাতায় লেখা অভিমান ;
বারান্দার আধখাওয়া দেওয়ালে, 
 নির্ঝুম দুপুরে চুপ করে তোমায় ভাবা, 
চোখে চোখ রেখে অভিভাবকের মতো সেই তোমার বলা... 
সাবধানে যাবে, কিন্তু!!  
আমার ভালোবাসা...।। 

তোমার গলার স্বর, তোমার বিশ্লেষণ.. 
বাতাসে ঈশ্বরের মতো করে অহরহ আহ্বান;
তোমার উদ্বিগ্নতা, 
ফুলের রেণুর মতো করে আমায় দেখা.. 
যত্নের বুকে তোমার শ্বাস... 
আমার মনের ঘরে  জল,
 কাজল আঁকা স্তুতি... 
ভালোবাসা আমার....। 

অচেনা পাখির মতো মুখ বাড়িয়ে হু-হু আলাপ, 
আমার বুকে যাপন-তোমার শব্দেরা.. ;
অবুঝের মতো আমার অধিকার, অনুভব 
তোমার বুকের ভিতর নদী.. 
মন পালিয়ে বাঁধা ঘাটে 
ফিরে যাওয়া...তোমার।

ঘটনাচক্র হলো আবেগপ্রবণ প্রেমের মতো৷ মুক্ত আকাশতলে রূপ বদলের ইতিহাস৷ ভয়ধরানো নির্জন নৈশপ্রকৃতি। এই আকাশে তাম্রাভ শূন্যতা। প্রকৃতি রাণীর তর্জনীতে আঙুল ছোঁয়া তর্পণ।  বুদ্ধদেব বসুর কথায় " Bibhutibhushan, alone among our unmixed novelists, is a lover of Nature..... Because of this easy access into a non - human, non - temporal World... "

মানুষ ছাড়া কি আদৌ প্রকৃতি সম্পূর্ণতা পায়!! আসক্তি, নৈতিকতার ভূমি ছুঁয়েই তো অঙ্গীকার!!  ওগো!  মানুষের উপর যে বিশ্বাস হারানো পাপ!! জীবনদর্শনই তো প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির স্বাদ। আয়তনের কাল পেরিয়ে এ সাহিত্য যে " anthropocentric by nature " হতে বাধ্য৷ শেরিলের কথকতায় " we are not part of the solution, we 're part of the problem. "যোগ্যতাকে যোজ্যতায় খুঁজে নিতে হবে৷ নির্নয়ের পথে অন্বেষণ। 

পর্ণমোচী উদ্ভিদের মতো আড়ষ্টতা। পথ রোধ হয়ে আছে, আঁকিবুকি স্মৃতিপথে৷ নাভির দিকচক্রবাল ঘূর্ণি নিরীহ উত্তর আধুনিক যেন জারজ ভাগ্য। তাই প্রশ্ন বারেবার, নিস্পৃহতা কতকাল!!!


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

1 comments so far,Add yours

  1. তোমার লেখনী স্রষ্টা আমাকে আপ্লুত করে তুলে সুধী।" অচেনা পাখির মতো মুখ বাড়িয়ে হু - হু আলাপ,
    আমার বুকে যাপন - তোমার শব্দেরা.. ;
    অবুঝের মতো আমার অধিকার, অনুভব
    তোমার বুকের ভিতর নদী..
    মন পালিয়ে বাঁধা ঘাটে
    ফিরে যাওয়া... তোমার।।" অসাধারণ লাইন। সম্পৃক্ত হলাম । এই ভাবেই লিখতে থাকো প্রতি মূহুর্ত।

    ReplyDelete