গৌতম দাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার, রাজ্য আবগারি দফতর ও লেখক, কলকাতা:

মৃত্যু কি!
মৃত্যু কি সত্যিই মানুষের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে!  মৃত্যু কি শুধু মানুষের হৃৎসপনদন থেমে গেলেই ঘটে !  শরীরের মৃত্যু হলেই কি মানুষের মৃত্যু হয় ! যদি মস্তিষ্কের মৃত্যু হলেই মানুষের মৃত্যু হয় তাহলে মস্তিষ্কের কাজ কর্মের সঙ্গে একান্ত সম্পর্ক যুক্ত, আমাদের স্মৃতিশক্তি, অনুভূতি বা আমাদের ইন্দ্রিয়গুলি কি কোনো রহস্যময় উপায়ে মৃত্যুর পরও কাজ চালিয়ে যেতে পারে!  মৃত্যুতে প্রকৃতপক্ষে কি ঘটে !  মৃত্যুর পর কি মানুষ মুক্তি পায় !  মৃত্যুর ঠিক পূর্ব মূহুর্তে মানুষ কি আদৌ কিছু বুঝতে পারে !  মৃত্যুর অনুভূতি টা ঠিক কি রকম !  মৃত্যুর পর কি সত্যিই পুনর্জন্ম হয় !  চেষ্টা করেও কি মৃত্যু এগিয়ে বা পেছিয়ে দেওয়া সম্ভব!  মৃত্যুর পর ধমীর্য় পরলৌকিক ক্রিয়ার কি আদৌ কোন প্রভাব বা যুক্তি আছে !   মৃত্যুর পর কি সূক্ষ্ম শরীর বা আত্মার সত্যিই কোনো অস্তিত্ব থাকে!   মৃত্যুর পর কি পাপ-পুণ্যের আদৌ হিসেব হয় !  মৃত্যুর পর নিজের ধর্মের স্বর্গ বা নরকে যেতে পারে মানুষ !   মৃত্যুর পর কি আবার পৃথিবীতে ফিরে আসা যায় অর্থাৎ পুনর্জন্ম বলে কি কিছু হয়!  অপঘাতে মৃত্যু বা স্বাভাবিক মৃত্যু আদৌ কি কোন তফাৎ করে দেয়  পরবর্তীতে!  প্রশ্ন উঠছে বিশ্বাস-অবিশ্বাস থেকে, বিভিন্ন ধর্মীয় শিক্ষা থেকে,  বিষয় গুলো অত্যন্ত মৌলিক ও প্রাসঙ্গিক এবং হাজার হাজার বছর ধরে মানুষকে ভাবাচ্ছে ....         
আমরা মারা গেলে আমাদের কী হয়?
আমরা কেন মারা যাই?
মৃতদের সম্বন্ধে সব সত্য জানা কি আদৌ সম্ভব  হবে কোনো দিন ?
এই মৃত্যু সম্বন্ধে বিভিন্ন ধর্ম  বিভিন্ন উত্তরগুলো দিয়ে থাকে, বিভিন্ন ভবিষ্যদ্‌বাণীও করে থাকে!    আসলে আমরা যতদিন সম্ভব আপ্রাণ বেঁচে থাকার চেষ্টা করি, তা সত্ত্বেও আমরা ভাবি যে মরার পর আমাদের কী হবে! একই ভাবে আমাদের প্রিয়জনরা মারা গেলেও আমরা শোক করি, আর ভাবি মৃত্যুর পর তাদের প্রতি কী ঘটেছে? তারা কি কষ্ট পাচ্ছে? তারা কি আমাদের উপর নজর রাখছে? আমরা কি তাদের সাহায্য করতে পারি? আমরা কি আবারও তাদের দেখতে পাবো কখনো ?           জগতে মানুষের সৃষ্টি করা ধর্মগুলোই আবার এই সমস্ত প্রশ্নের বিভিন্ন উত্তর দিয়ে থাকে। কোনো কোনো ধর্ম শিক্ষা দেয় যে, আপনি যদি সৎভাবে জীবনযাপন করেন, তা হলে স্বর্গে যাবেন কিন্তু আপনি যদি অসৎ ভাবে জীবনযাপন করেন, তা হলে নরকে স্থান হবে বা ইহজীবনে 'পাপ' বেশি হলে আপনাকে কষ্টকর গরম তেলে পোড়ানো হবে, কিছু কিছু ধর্ম আবার শিক্ষা দেয় যে, মৃত্যুতে মানুষ তাদের পূর্বপুরুষদের সঙ্গে বাস করার জন্য আত্মিক রাজ্যে চলে যায়, আবার কিছু ধর্ম এমনও শিক্ষা দেয় যে, মৃতেরা বিচারিত হওয়ার জন্য পাতালপুরীতে চলে যায় এবং এরপর অন্য দেহে পুনর্জন্ম লাভ করে।                                          অর্থাৎ মৃত্যু সম্বন্ধে ধর্মের বিভিন্ন মৌলিক ধারণা রয়েছে, এই ধর্মীয় শিক্ষাগুলোর সবকটারই একটা মোটামুটি মৌলিক ধারণা রয়েছে আর সেটা হচ্ছে, শারীরিক দেহের মৃত্যুর পরও আমাদের দেহের কিছু অংশ বেঁচে থাকে। অতীত ও বর্তমানের প্রায় প্রত্যেক ধর্মের মতানুযায়ী, আমাদের 'আত্মা' দর্শন, শ্রবণ ও চিন্তা করার ক্ষমতা নিয়ে কোনো-না-কোনোভাবে চিরকাল বেঁচে থাকে !!!!  কিন্তু, সেটা কী আদৌ হওয়া সম্ভব!!!!....
বাইবেলে মৃতদের অবস্থা সম্পর্কে স্পষ্ট ব্যাখ্যা হল, একজন ব্যক্তি যখন মারা যান, তখন তিনি অস্তিত্বহীন হয়ে যান। মৃত্যু হচ্ছে জীবনের বিপরীত। মৃতেরা দেখতে, শুনতে বা চিন্তা করতে পারে না। আমাদের দেহের কোনো অংশই মৃত্যুর পর বেঁচে থাকে না। আমাদের মধ্যে কোনো অমর বা পরম আত্মা বলে কিছু নেই... জীবিতরা জানে যে তারা মারা যাবে, এই বিষয়টা বলার পর শলোমন লিখেছিলেন যে, “মৃতেরা কিছুই জানে না।” এরপর তিনি সেই মৌলিক সত্যটাকে এই কথা বলে আরও প্রসারিত করেছিলেন যে, মৃতেরা ভালোবাসতে বা ঘৃণা করতে পারে না এবং “সেই পাতালে কোন কার্য্য কি সঙ্কল্প, কি বিদ্যা কি প্রজ্ঞা কিছুই নাই। ”(পড়ুন, উপদেশক ৯:৫, ৬, ১০.),  একইভাবে গীতা সংহিতা ১৪৬:৪ পদ বলে যে, একজন মানুষ যখন মারা যান, তখন “তাহার সঙ্কল্প সকল নষ্ট হয়।” আমরা মরণশীল এবং আমাদের দেহের মৃত্যুর পর কোনো অংশই বেঁচে থাকে না। আমরা যে-জীবন উপভোগ করছি, তা একটা মোমবাতির শিখার মতো। শিখাটা যখন নিভিয়ে ফেলা হয়, তখন এটা কোনো জায়গায় চলে যায় না। এটা অস্তিত্বহীন হয়ে যায়।            কিছু কিছু প্রশ্নপত্র অবৈজ্ঞানিক হয়, বিজ্ঞানের ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায় অনেক রহস্য !  মৃত্যুও তাই জন্মের থেকেও গভীর রহস্যময় থেকে গেছে আজও...


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours