ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুরঃ রূপেন্দ্রনাথ এবার কাশীধাম থেকে মাহেশের পথে! গঙ্গানদী বেয়ে তাঁর
বজরা চলেছে গৌড়মন্ডলের দিকে! আত্মজার সন্ধানে, তাঁর আদরের স্বপ্নের
রূপমঞ্জরীর সন্ধানে! ফরাসীডাঙার ( বর্তমান চন্দননগর ) ঘাটে বজরা থেকে
নেমে রওনা দিলেন. মাহেশ গ্রামের উদ্দেেশ্যে যেখানে তাঁর
পিসেশ্বশুরের বাড়ী ! বগলে পুঁটুলিটি নিয়ে আমা কাঁঠালের বাগান পেরিয়ে
এগিয়ে চললেন! যেতে যেতে রূপেন্দ্র ভাবতে লাগলেন, কুসুমমঞ্জরী অকালে
ঝরে গেছে, কিন্তু ব্যর্থ হয়নি তার আত্মদান! একথা মনে করিয়ে
দিয়েছেন মহাসাধক ত্রৈলঙ্গস্বামী! কুসুমমঞ্জরী যাবার আগে রেখে গেছেন
রূপমঞ্জরীকে! সেই মহাসাধকের নির্দ্দেশমতো রূপেন্দ্র কন্যাকে নিয়ে
যাবেন নিজের বাড়ীতে! যেখানে আছেন, বৃদ্ধা জগুপিসিমা, বোন কাত্যায়নী !
তারাই শিশু কন্যাকে আদর যত্নে মানুষ করে তুলবে!
কাশী থেকে ফিরে এলেন রূপেন্দ্র নাথ! রামমোহন বিদ্যাসাগরের বহু পূর্বেই বর্ধমানভুক্তির এক গন্ডগ্রাম সোঁয়াই এ তিনি কুপমন্ডুক সমাজপতিদের বিরূদ্ধে এক নব জাগরনের সূচনা করতে চলেছেন " স্ত্রী শিক্ষার বিস্তার'
বাংলার গ্রামজীবনের মধ্যমনি তখন ব্রাক্ষ্মন-সমাজ, গ্রামে গ্রামে টোল, চতুষ্পাঠী, পাঠশালা থাকলেও সেখানে দেখা যেত না কোন বালিকা, কিশোরী বা যুবতীকে! মেয়েদের অক্ষর পরিচয়? তাহলে সর্বনাশ! তার অকাল বৈধব্য নিশ্চিত! না এটা কোন শাস্ত্রে লেখা নেই! সমাজপতিদের বিধান!
রূপেন্দ্র গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন সেখানে স্ত্রী শিক্ষার জন্য সমাজপতপদের বিরূদ্ধে বিদ্রোহ করে গড়ে তুলবেন " নারী শিক্ষা নিকেতন " তাই তিনি মাহেশের কুসংস্কারাচ্ছন্ন পরিবেশ থেকে নিজ গ্রামে তাকে নিয়ে যাবেন! সেখানে তাঁর পিসীমা, পিসতুতো বোন কাত্যায়নী, ভগ্নিপতী গঙ্গারাম ছাড়া আছেন পরম সুহৃদ আধুনিক মনষ্ক জমিদার ভাদুড়ী মশাই!

গ্রামের সমাজপতিরা বাধা দিলে তিনি যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দেবেন, অক্ষরঞ্জান হ'লে মেয়েদের অকাল বৈধব্য একটি যুক্তিহীন অপপ্রচার!
. মেয়েরা লেখাপড়া শিখলে যদি অকাল বৈধব্য নিশ্চত হতো তাহলে মৈত্রেয়ীর স্বামী যাঞ্জবল্ক দীর্ধজীবি হলেন কি করে? গার্গী, আয়েত্রী, ক্ষনা সকলে ছিলেন না পন্ডিতা কিন্তু তাঁরা তো বাল্য বিধবা নন, বিদর্ভ রাজকন্য শ্রীকৃষ্নের পত্নী রুক্সিনী কৃষ্নকে গোপনে পত্র লিখতেন! ঋকবেদের টীকাকারদের মধ্যে সাতাশজন নারীর নাম পাওয়া যায়! গার্গীর ঋকবেদের টীকা তার প্রমান! বিশ্ববারা ছিলেন মহাপন্ডিতা, কাশীধামের রাজা অলর্কের মা মদালসা ছিলেন অতি শিক্ষিতা মহিলা এবং ব্রক্ষ্মবিদ্যায় পারদর্শিনী!রাজপুত্র অলর্ককে ব্রক্ষ্মবিদ্যার জন্য কোন গুরুর কাছে যেতে হয়নি, রাজঅন্তঃ পুরে মায়ের কাছেই ব্রক্ষ্ম বিদ্যা লাভ করেছিলেন! তাহলে নারীদের শিক্ষালাভের বিরোধিতা কেন? এ প্রশ্ন রূপেন্দ্র করবেন সমাজপতিদের নিকট!
কেউ এগিয়ে না এলে নিজের কন্যার জন্যই নিজ গ্রামে টোল স্হাপন করবেন স্হির করলেন রূপেন্দ্র! এজন্য তাঁকে সমাজচ্যুত হতে হলেও কোন পরোয়া নেই, হয়ত কন্যার বিবাহ হবে না , সে আজীবন কুমারী থাকবে, তাতেও তিনি পিছপা হবেন না! রজক নাপিত বন্ধ হবে হোক, ক্ষারে কাপড় কাচবেন, চুলদাড়ি কাটবেন না , তবুও সঙ্কল্পে তিনি অটল! গঙ্গার ঘাট থেকে তিনি শ্বশুর বাড়ীর পথে চললেন তাঁর কন্যা রূপমঞ্জরীকে নিজের গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে!
(চলবে)
কাশী থেকে ফিরে এলেন রূপেন্দ্র নাথ! রামমোহন বিদ্যাসাগরের বহু পূর্বেই বর্ধমানভুক্তির এক গন্ডগ্রাম সোঁয়াই এ তিনি কুপমন্ডুক সমাজপতিদের বিরূদ্ধে এক নব জাগরনের সূচনা করতে চলেছেন " স্ত্রী শিক্ষার বিস্তার'
বাংলার গ্রামজীবনের মধ্যমনি তখন ব্রাক্ষ্মন-সমাজ, গ্রামে গ্রামে টোল, চতুষ্পাঠী, পাঠশালা থাকলেও সেখানে দেখা যেত না কোন বালিকা, কিশোরী বা যুবতীকে! মেয়েদের অক্ষর পরিচয়? তাহলে সর্বনাশ! তার অকাল বৈধব্য নিশ্চিত! না এটা কোন শাস্ত্রে লেখা নেই! সমাজপতিদের বিধান!
রূপেন্দ্র গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন সেখানে স্ত্রী শিক্ষার জন্য সমাজপতপদের বিরূদ্ধে বিদ্রোহ করে গড়ে তুলবেন " নারী শিক্ষা নিকেতন " তাই তিনি মাহেশের কুসংস্কারাচ্ছন্ন পরিবেশ থেকে নিজ গ্রামে তাকে নিয়ে যাবেন! সেখানে তাঁর পিসীমা, পিসতুতো বোন কাত্যায়নী, ভগ্নিপতী গঙ্গারাম ছাড়া আছেন পরম সুহৃদ আধুনিক মনষ্ক জমিদার ভাদুড়ী মশাই!

গ্রামের সমাজপতিরা বাধা দিলে তিনি যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দেবেন, অক্ষরঞ্জান হ'লে মেয়েদের অকাল বৈধব্য একটি যুক্তিহীন অপপ্রচার!
. মেয়েরা লেখাপড়া শিখলে যদি অকাল বৈধব্য নিশ্চত হতো তাহলে মৈত্রেয়ীর স্বামী যাঞ্জবল্ক দীর্ধজীবি হলেন কি করে? গার্গী, আয়েত্রী, ক্ষনা সকলে ছিলেন না পন্ডিতা কিন্তু তাঁরা তো বাল্য বিধবা নন, বিদর্ভ রাজকন্য শ্রীকৃষ্নের পত্নী রুক্সিনী কৃষ্নকে গোপনে পত্র লিখতেন! ঋকবেদের টীকাকারদের মধ্যে সাতাশজন নারীর নাম পাওয়া যায়! গার্গীর ঋকবেদের টীকা তার প্রমান! বিশ্ববারা ছিলেন মহাপন্ডিতা, কাশীধামের রাজা অলর্কের মা মদালসা ছিলেন অতি শিক্ষিতা মহিলা এবং ব্রক্ষ্মবিদ্যায় পারদর্শিনী!রাজপুত্র অলর্ককে ব্রক্ষ্মবিদ্যার জন্য কোন গুরুর কাছে যেতে হয়নি, রাজঅন্তঃ পুরে মায়ের কাছেই ব্রক্ষ্ম বিদ্যা লাভ করেছিলেন! তাহলে নারীদের শিক্ষালাভের বিরোধিতা কেন? এ প্রশ্ন রূপেন্দ্র করবেন সমাজপতিদের নিকট!
কেউ এগিয়ে না এলে নিজের কন্যার জন্যই নিজ গ্রামে টোল স্হাপন করবেন স্হির করলেন রূপেন্দ্র! এজন্য তাঁকে সমাজচ্যুত হতে হলেও কোন পরোয়া নেই, হয়ত কন্যার বিবাহ হবে না , সে আজীবন কুমারী থাকবে, তাতেও তিনি পিছপা হবেন না! রজক নাপিত বন্ধ হবে হোক, ক্ষারে কাপড় কাচবেন, চুলদাড়ি কাটবেন না , তবুও সঙ্কল্পে তিনি অটল! গঙ্গার ঘাট থেকে তিনি শ্বশুর বাড়ীর পথে চললেন তাঁর কন্যা রূপমঞ্জরীকে নিজের গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে!
(চলবে)
রূপমঞ্জরীর বয়স এখন আড়াই বছর! এখনো হাতেখড়ি হয়নি! তবে
রূপেন্দ্র ঠিক করলেন কোন চতুষ্পাঠী যদি তাঁর কন্যাকে ভর্তি না
নেয়, নিজেই খুলবেন মেয়েদের চতুষ্পাঠী খুলবেন প্রয়োজনে শুধুমাত্র
তাঁর কন্যা একজন ছাত্রী হলেও!
Post A Comment:
0 comments so far,add yours