জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

অন্তত সেরকম ধারনাই তৈরী হচ্ছে বলে মনে হয়  বিদেশে। এ এক অদ্ভুত অবস্থা। ৩৭০ লাগিয়ে, কাশ্মীরকে নাকি, ভারতের সাথে একাত্ম করা হয়েছে। অথচ, সেই ভারতই আইনতঃ কাশ্মীর থেকে বিচ্ছিন্ন। অথচ, সারা বিশ্বের কাছে খোলা। 

এদেশে হয়তো সব খবরই আসছে।কিন্তু সব বিদেশ ঘুরে। যে সব খবর এবং ছবি আসছে, সেগুলিকে তুলে ধরে, আবার বে-আইনীর তকমা লাগানোর ইচ্ছা নেই। ইতিমধ্যে 'ধরো আর জেলে ঢোকাও' আইন,যা কংগ্রেস দলেরও,  হাত তোলার মাধ্যমে পাশ করা হয়েছে, তা নাকি বেহৎ কার্য্যকরী করা হচ্ছে, কাশ্মীরে। যাদের সাথে কদাচিৎ মুখোমুখী হতে হোত,  তাদের একযায়গায় ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে নাকি। ইতিমধ্যে মুফতি মেহেবুবা তনয়া অভিযোগ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে - কাশ্মীরিদের নাকি 'জানোয়ারের মতোই জেল বন্দী করা হচ্ছে। উপত্যাকা ঘুরে আসা একদল সমাজসেবি দাবী করেছেন সারা কাশ্মিরকেই নাকি মুক্ত জেলখানা বানিয়ে ফেলা হয়েছে। 
এই পরিস্থিতি ভারতের জন্য কিছু কিছু বিপদজনক ইংগিত দিতে শুরু করেছে। কশ্মীরে মানবিক  এবং যুদ্ধ আইন লংঘনের উপর অনেক খররি গুগুলসে এসেছে। এসব সংবাদের মধ্যে, সৈন্যবাহিনীর যুদ্ধ আইন লংঘনের অভিযোগও রয়েছে। এসবের মধ্যে আন্তর্জাতীক সংস্থার অভিযোগক দেখা যেতো। সাধারনতঃ মানুষ এগুলিকে বিশ্বাস করতো না 

এখন সরকারের এই নীতি সারা বিশ্বে কাশ্মীর খোলা, কিন্তু ভারতে নয়। কাশ্মীরের অবস্থা এরকমঃ সম্প্রতি আই সি এস কেডার থেকে পদত্যাগ করেছেন, এমন এক অফিসারকে, গ্রেফতার করে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেই 'ধর আর জেলে ঢোকাও আইনে'। তার  বিরুদ্ধে অভিযোগ দাড় করা হয়েছে, তিনি নাকি বি বি সি কে কোন সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। 
কিন্ত অরাজনৈতিক এবং নির্বুদ্ধিতার ফসল ভারতকে বিচ্ছিন্ন করছে, বিশ্বরাজনীতির কুট-নৈ্তিক বিচ্ছিন্নতা বারতে থাকায়। যেখানে পাকিস্থান বিচ্ছিন্ন ছিলো প্রায়, সেখানে , বিশ্ব রাজনীতি আচানক ভারত বিরোধী খাতের সাথে সাথে আন্তর্জাতীক সন্তুলে  পাকিস্থানের জন্য মুক্ত হাওয়ার দরজা খুলে দেওয়াটা নিশ্চিতভাবে সুখের খবর নয়।

প্রথম ধাক্কাটি এলো জাতীসংঘের মহাসচিবের ১১ই আগষ্টের বিবৃতিতে।  সংবাদে বলা হয়েছেঃ "জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা-
ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এমন পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়ার অধিকার কারও নেই। – খবর ডন নিউজ" ।  ৩৭০ কে ঘিরে যে অন্যান্য দিক থেকেও জাতী সংঘে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে, তা বোঝা গেলো, যাখ নারী নির্য্যাতন সংক্রান্ত একটি রিপোর্টে, শিশুরা যে যৌনতার শিকার হচ্ছেন, তার উল্লেখ রয়েছে এবং সেখানে 'আসিফা প্রসংগও নাকি তুলে আনা হয়েছে। 
অন্যপ্রান্তে যদি তুরস্কের মতো দেশ যদি ভারতের বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে, থাকেন তবে এটা নিশ্চিত, মুস্লীম দুনিয়াতে তো বটেই, ভারতের মুস্লিমদের মধ্যে সম্প্রতি বিজেপি যে প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছিলো, সেখানেও ভাংগন শুরু হতে বাধ্য।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান নাকি কাশ্মীর ইস্যুতে  ভারতকে হুংকার দিয়ে বলেছেন ' আগুন নিয়ে খেলা করবেন না" ! (August 7, 2019) । তিনি জানিয়েছেনঃ "  , পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে বিরোধীয় জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলের উদ্বেগজনক ঘটনাগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে তুরস্ক। সুতরাং আগুন নিয়ে খেলা করবেন না। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট, বিশ্বে সাম্প্রদায়ীক হিসেবে চিহ্নিত নয়। তাই তার কথা আন্তর্জাজাতীক গতিপ্রকৃতির হদিস পাওয়া যায়। উনার পরের উল্লেখ আরো তাৎপর্য্যপূর্ন। তিনি নাকি উল্লেখ করেছেন " ভারতীয় সংবিধানে ৩৭০ ধারা সংশোধনের ফলে বিষয়টি পাকিস্তান, চীন ও ভারতের সঙ্গে ত্রিমুখী বিরোধ শুরু হয়।" একই সংবাদ সংস্থা উল্লেখ করেছেঃ "ইতিমধ্যে লাদাখ অঞ্চল নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে পাল্টা-পাল্টি হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে। এদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও কাশ্মীরের জনগণের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন। হিমালয় অঞ্চলটি পাকিস্তান ও ভারতের অংশে রয়েছে।" 
 
বিশ্ব রাজনীতিতেও কাশ্মীরকে নিয়ে পক্ষাপক্ষি নেওয়াটাও ক্রমে একপ্রান্তে যুদ্ধ রাজনীতি, অন্যপ্রান্তে - উপমহাদেশকে ঘিরে বিশ্ব রাজনীতিতে ভাগ হচ্ছে। আমেরিকার মধ্যস্ততার প্রস্তাব ফেসে যাওয়ার পর, আমেরিকা প্রেসিডেন্ট পাকিস্থানমুখীনতার ইংগিত দেওয়ায়, রাসিয়া ১৯৭১ সালের সোভিয়েতের মতোই ভারতের প্রতি সমর্থন জানিয়ে দিয়েছেন।অন্যদিকে চিন সিমান্তে সমুহ সমস্যার কথা  বিবেচনা করে, ইতিমধ্যে যথেষ্ট পরিমানে পাকিস্থানে তার জাতীয় স্বার্থের দিকে ঝুকলেও, সিকিউরিটি কাউন্সিলে একটা সমঝাওতার চেষ্টা করছেন।

অন্যদিকে একটি পোর্টাল, লন্ডনের খবরের উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করেছে, ৫০ জন বৃটিশ এম পি নাকি সংসদে আলোচনা চেয়েছেন। ৩৭০ নিয়ে সারাবিশ্ব তোলপার হলেও, লন্ডন সব থেকে বেশী উত্তপ্ত। সেখানে রোজ বড় বড় বিক্ষোভ হচ্ছে। সে সব বিক্ষোভে, বাংলাদেশী এবং পাকিস্থানী প্রতিবাদকারীরাও বিপুল অংশ নিচ্ছেন বলে, বি বি সি খবর করেছে। 

ভারতের পক্ষে সব থেকে বিপদজনক খবর, আন্তর্জাতীক ক্ষেত্রে এসেছে, জাতীসংঘের সদর দপ্তর থেকে। সেকানে নাকি আজ রাতে, চিনের চেষ্টায়, সিকিউরিটি কাউন্সিল এক গোপন  অধিবেশনে মিলিত হচ্ছে। নিশ্চিত করে বলাযায় কাশ্মীরকে নিয়ে, বিগত ৭০ বছর সিকিউরিটি কাউন্সিল এবং জাতীসংঘে যে বিতর্ক হয়েছে, সেসবের নিরিখে - এই অধিবেশনে ভারতের বেকায়দায় পরার সম্ভাবনাই বেশী।



Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours