vromon kahini
সীমন্তী দাস, লেখিকা,দুর্গাপুর: বিস্তৃত জলরাশি এতো বড় আকাশ মনটাকে ও কেমন উদাস করে দেয়।কত জটিলতার মধ্যেই তো কেটে গেল জীবনের একটা বড় সময়।ঠিক ভুল ন‍্যায়,অন‍্যায়।এই বিস্তৃত জলরাশিতো সবাই কে আপন করেছে বিনা শর্তে। চলেছি পঞ্চমুখানী।ছোট বড় ৫টি নদী এখানে মিলেছে সাগরে।হঠাৎ "সে যে চলে গেল ,বলে গেলোনা-----"গানটা মাথায় ঘুরতে লেগেছে, চোখ বেয়ে জল নামছে,ধুর ছাই পাগল মনটা কেন যে বাধা মানেনা।ভাগ‍্যিস আশেপাশে কেউ নেই। ঘোর কাটলো, মা তাতান দাদার বিবিমিষা হয়েছে।উহাকে উত্তম রুপে তৈল মর্দন করিতে হইবে।মিটিমিটি চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে বালক।রবি ঠাকুরের ইউরোপ ভ্রমণের সময় সমুদ্র যাত্রার ক্লান্তি কাটানোর বর্ণনা তার খুব পছন্দের।এখানে সেটা মনে পরেছে।তাই ঐ ভাষা।গর্বিত হলাম মায়ের মত কিছু সে পেয়েছে।ভয়ংকর কল্পনা শক্তি।। বঙ্গোপসাগরের খাড়িতে বসেই সে ভারত মহাসাগর,একমাস টানা জাহাজে ইউরোপ ভ্রমণ কল্পনা করছে। পঞ্চমুখীতে যে ৫ জন মিলিত হয়েছেন তারা হলেন পদ্মা, মেঘনা, ভৈরব,মধুমতি, হুগলী।
জল,জল,আর জল।উত্তল ঢেউ।জলের রঙের তারতম্য চোখে পরে।পরন্ত সোনালী রোদের আলোয় কি যে শোভা।আমার ভাষা নেই।বালি হাস,কিছু পরিযায়ী পাখি।মাছের ছোট্ট ডিঙি গুলো পাশাপাশি যাচ্ছে।মাছ উঠবে সন্ধ্যায়।হঠাৎই ও ভাই মাছ আছে বলে দাদার দল চিৎকার জুড়লো।মাথা নাড়িয়ে চলে গেল ডিঙি।ফটো সুটের হিড়িক পরে গেল।লঞ্চের পাল তোলা যায় কিনা এমন প্রশ্ন ও এলো।তারপর যুগলে শুয়ে বসে নানা ভঙ্গিতে ছবি তোলার পর্ব। দূরে লাইন করে গোটা দশেক তেল বোঝাই জাহাজ চলেছে। প্রকৃতি কি অপরুপা ।নিজের আনন্দেই নিজেকে সাজায়।কে দেখলো না দেখলো বয়েই গেল। মুগ্ধতা কাটলো যখন দেখলাম লঞ্চ যেন একটু পাড় ঘেঁষে চলছে।কোনো কোনো জায়গা নেট দিয়ে ঘেরা।বাঘ যাতে বসতিতে ঢুকে না পরে তার ই ব‍্যবস্থা।মাঝে মাঝে ই দেখছি লাল কাপড় বাধা।জানলাম কিছু দিন আগেই এখান থেকে মানুষ উঠিয়েছে বাঘে।গা টা কেমন শিরশির করে উঠলো। জীবনযুদ্ধে হেরে যাওয়া মানুষের পাশে লাল নিশান। সামনে সুধন‍্যখালি।এখানে নামবো আমরা।আগে ভাগে নেমে পরেছি।হঠাৎই কানে এলো মাই পেক।মাই পেক।পেছনে ফিরে দেখি কন্যা তার দুই বন্ধু কে টেনে ধরেছে।তাদের পরো পরো অবস্থা। কি হলো রে বাবা? মেয়ে কাছে আসতেই বললাম অমন পেক পেক করে চ‍্যাচাচ্ছিলি কেন?আমি কোথায় চ‍্যাচালাম।আর মা ওটা পেক না স্পেকস।চশমা। চশমা? চোখ থেকে খুলে কাদাতে পরে গেছে। মানে?আরে ওরাও তো পরেই যেতো যদি না ধরতাম। চশমা খুলে গেল? আরে লাস্ট তিনঘন্টা নো নেটওয়ার্ক ছিলো তো।এখানে নেট পেয়েই ও সার্চ করতে গিয়েই তো**** কি সার্চ করছিস তোরা? তোরা বলবে না মা।আমাদের দুটো মোবাইল তোমার ব‍্যাগে। 
এতো সুন্দর প্রকৃতির মধ্যে ওতে কি আছে রে ? জানিনা।আমি খুব এনজয় করছি উইদাউট মোবাইল। নাচতে নাচতে সে এগিয়ে গেল বন্ধুদের সাথে। নেটওয়ার্ক না থাকলে একটা বারো তেরোর কিশোরীর মন খারাপ হয়ে যায়।আমার ও ঐ বয়সে মনখারাপ হতো যখন বন্ধুরা সাইকেলের ঘন্টি বাজিয়ে চলে যেতো আর আমি দিদিমণি মায়ের মুখের সামনে বসে গ্রামার করতাম। মনখারাপের কি খারাপ ভালো বিচার হয়?কে জানে? কত প্রশ্নের ই তো আজও উত্তর জানা হলোনা।বাকী জীবনটায় তাই আর প্রশ্নের উত্তর না খুঁজে এগিয়ে যাওয়া অসীমের পানে। (ক্রমশ)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours