জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদঃ
সকালে একটা গান শুনছিলাম। সলিল চৌধুরীর সুর। এক কালে প্রবাহে এসেছিলো হেমন্ত মুখার্জীর গলায়। কথাগুলি অনেকটা
এরকমঃ "পথ হারাবো বলেই পথে আমি নেমেছি, পথেই হবে দেখা"। যতদুর মনে পরে, সুকান্ত ভট্টাচার্য্যের কথা।
যখন গানের চরিত্রটা ভাবছিলাম, তখন বার বার মনে হচ্ছিলো আজকালকার 'গনসংগীতের' ধারাটিকে। উপরের উল্লেখিত
গানের সাথে যদি ভূপেন হাজারিকার সেই বিখ্যাত সংগীত, 'গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা, দু'চোখের অশ্রু ধারা' কিংবা যদি
সদ্যপ্রয়াত রুমা গুহঠাকুরতার, সেই বিখ্যাত গানগুলিকে সামনে আনা যায়,
---- তবে যারা, ভারতে গনতান্ত্রিক রুপান্তরের স্তরের কথা বোঝেন, তেমন সাম্যবাদীর, নিশ্চিত মানবেন সেগুলিই প্রকৃ্ত অর্থে
'গনসংগীত'। নিশ্চিতভাবে, সলিল চৌধুরির কথা এবং সুরে, হেমন্ত মুখার্জীর 'কোন এক গায়ের বধু'ও সেই গনতান্ত্রিক মঞ্চের
সাথেই
চিহ্নিত হবে।
---- প্রশ্ন ওঠে, আজকাল গনসংগীতের নামে যেগুলি গাওয়া হয়, সেগুলিকে কোন গোত্রে ফেলা হবে? অনেক গান নিশ্চিতভাবে
গাওয়া হচ্ছে, যেগুলি মানুষের মনে গেঁথে যাচ্ছে,কিন্তু বুনিয়াদী বিচারে গনতান্ত্রিক বিপ্লবের গান। কিন্তু অধিকাংশ গান, সুন্দর
এবং শ্রুতি মধুর হলেও, কেন গাওয়ার কিছু সময়ের মধ্যে কেন মুছে যায় সেপ্রশ্নের নিশ্চিত জবাব খুজতে হবে।
নিজে সাহিত্য বুঝি না। যদি সংগীতের কথা উঠে, দাবী করবো আরো বুঝি না। তবে নিশ্চিত একটা কথা মনে এসেছে। কোন
গনসংগীত, যদি শ্রোতার চিত্তে স্থায়ী বাসা না বাধতে পারে, তবে নিশ্চিতভাবে,
----- একদিকে যেমন সমকালীন ভাবশ্রোতের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে পারছে না, তেমনি যে সামাজিক রুপান্তরের ধারার সাথে
সেই সংগীতের পরিচিতি গেথে যাওয়ার কথা, সেই ভাবপ্রবাহে সে মিশে যেতে পারছে না।
---- এখানে প্রথম সমস্যাটা বোধগম্য । নব্বই দশক বা সোভিয়েত ভেংগে যাওয়ার পর থেকে, ভারতের সংসদীয় কাঠামো এবং
স্বয়ংসম্পূর্নতার অর্থনীতি বিদেশী এবং বানিজ্য পুঁজির হাতে হসান্তরিত হওয়া এবং সংস্কৃতির অসভ্যায়নের পর থেকে ক্রমে
--- "গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা, দু'চোখের অশ্রুধারার আবেদন তো নিশ্চিতভাবে কমার কথা। রবীন্দ্রনাথকেই যখন
'গুদামজাত' কারার প্রশ্তাবের পর, শিক্ষিত সম্প্রদায়ের যারা, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে করে খান, তাদের চোখেই 'অশ্রুধারা' দেখা যায়
না, তখন ' গঙ্গা আর পদ্মাকে কি করে দু'চোখের অশ্রুধারা হিসেবে দেখবেন।
----- আজ রবীন্দ্রবধ যখন 'হিন্দুত্বের' নীতির অবস্বম্ভাবী পরিনাম বলে বিবেচিত হয়, এমনিতেই বাংলার 'কথা' বা 'ভাব' সমৃদ্ধ
'সুর' যে নিজের রাজ্যেই হারিয়ে যাওয়ার কারনে, মুম্বাইতে হানা দেওয়ার যোগ্যতা হারাবে তা তো স্বাভাবিক। পরিনামে, যে
'বলিউড' কিংবা 'টলিউড' উঠে যাবে তা তো নয়।
--- বছর খানেক পূর্বে, এককালের ডাক সাইটে বলিউডের সংগীতজ্ঞ কুমার সানুকে শুনছিলাম। 'কথা' বা 'ভাব' বিবর্জিত হয়ে,
যে গান মুম্বাইতে আসছে এবং ক্রম তা উজান টানে বাংলাতেও আসতে শুরু করেছে , সে সব গান মুলতঃ বিদেশী গান এবং
বিদেশের পরিমন্ডলে নির্মিত গান। শুধু গান আসছে তা নয়, কুমার সানু বলছেন, গানের নোটেশান সমেত চলে আসছে।
কোলকাতার অনেক ছায়াছবি যে দক্ষিনর 'পেটাপেটি এবং 'উগ্র-লিপষ্টিকি প্রেম সংগীতের' ভয়াল রুপে,
---- রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকান্ত এবং সত্যজিৎ ও তপন সেনকে হত্যা করছিলো, সে সব কথা তো সবাই জানেন।
প্রশ্ন এখানেই, একটা ভয়ংকর শূ্ন্যতা যখন বাংলার সংগীত বিরাজমান, তখন গনসংগীতের প্রতি আবিষ্ট এতো ভালো গলা এবং
সুর নির্মেতা বিরাজমান থাকলেও
--- বাংলার গনসনীতে কেন একটা জীবন্ত ধারা বেড়িয়ে আসছে না?
এই সুত্র ধরেই আমি নিশ্চিত হয়েছি, ভারতের সংসদীয় ব্যবস্তা উলটে যাওয়ার পর
---- বাংলার ভাবাবেগে 'কথা' হারিয়ে যাওয়ায়, এখানে সাহত্য নিজেই ভাবাবেগ হরিয়ে ফেলায়, সংগতীতের অববাহিকায় বাংলা
যে শুধু সুকান্তের ধারাবাহিকতা হারিয়েছে, তাই নয় - রবীন্দ্র কিংবা নজরুলের উত্তরকালের লেজটাও ধরতে পারছে না।
সেখানেই আবার জাতিয়ভাবসত্বার, আন্তর্জাতী অভিমুখ হারিয়ে ফেলাও সাহিত্য, সংস্কৃতি তো বটেই শিক্ষার মধারাবাহিক
সত্বাটাও হারিয়ে ফেলছে। এখানে সাম্যবাদী আন্দোলনে ভাবাদর্শগত ঐষর্য্য, ক্রমাগত খাটো হতে থাকাটাও বিপদের কারন।
(আগামী সংখ্যায় শেষ হবে।)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours