চন্দ্রাবলী বন্ধ্যোপাধ্যায়, ম্যানেজিং এডিটর, দ্য অফনিউজঃ শিশু-কৈশোর-যৌবন-বৃদ্ধ, সব বয়সের মানুষই কম বেশী সবাই “হ্যারিপটার” এই নামটার সাথে পরিচিত।
কিন্তু যার হাত দিয়ে এই অসাধারণ কল্পকাহিনী বেরিয়েছে তাকে আমরা চিনি কজন। তিনি একজন মহিলা কবি। তার নাম জে. কে. রাউলিং। রাউলিং এর পুরো নাম জোয়ান ক্যাথলিন রাউলিং।
১৯৬৫ সালের ৩১ জুলাই ইংল্যান্ডের গ্লুসেস্টারশায়ারের ইয়েটে শহরে জন্মগ্রহণ করেন জে.কে. রাউলিং। তার বাবার নাম পিটার এবং মায়ের নাম অ্যানি। তার বাবা ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার এবং মা ছিলেন গবেষণাগারের টেকনিশিয়ান। ছোটবেলাটা কাটে গ্রাম্য পরিবেশে। রাউলিং এর ছোটো এক বোন ও ছিল.
রাউলিং এর বাবা-মা দুজনই যেহেতু কর্মরত ছিলেন, সেই জন্য তার বাবা-মা তাদের দুই বোনকে মজার মজার সব গল্পের বই কিনে দিতেন। সে সব বই পড়ে রাউলিং এর গল্প লেখার সাধ হয় . যেমনি ভাবা তেমনি কাজ . এরপর সেই সময় থেকেই মজার মজার গল্প লিখতেন তিনি, আর সেই গল্পগুলো লেখা শুরু করেছিলেন তাঁর বোনকে পড়ে শোনানোর জন্য। এভাবেই তার মনের মধ্যে বাসা বাঁধে নামকরা লেখিকা হওয়ার স্বপ্ন।
রাউলিং, এক্সিটার ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশুনা শেষ করার পর, ইংরেজীর শিক্ষিকা হিসেবে কাজ করতে ১৯৯০ সালে পর্তুগালের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন। সেখানে তাঁর পরিচয় হয় পর্তুগিজ সাংবাদিক জর্জ আর্নেটস এর সাথে। অল্পদিনের মধ্যেই তাঁরা বিয়ে করেন এবং ১৯৯৩ সালে জেসিকা নামে তাঁদের একটি মেয়ের জন্ম হয়। জেসিকার জন্মের অল্পকিছুদিনের মধ্যেই জর্জের সাথে রাওলিং এর বিবাহবিচ্ছেদে হয়। জর্জ এর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের পর রাওলিং মেয়েকে নিয়ে স্কটল্যান্ডের এডিনবুরোতে ফিরে এসে তাঁর ছোটবোনের কাচে থাকতে শুরু করেন। স্কটল্যান্ডে ফিরে রাওলিং তাঁর মেয়েকে নিয়ে দারুন আর্থিক অনটনের শিকার হন। মেয়ে এবং নিজের জন্য কোনওভাবেই তিনি যথেষ্ঠ অর্থের যোগাড় করতে না পেরে অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যেই তিনি হ্যারি পটারের প্রথম বইটি লিখতে শুরু করেন
‘হ্যারি পটার’ গল্পের ধারণা রাউলিং এর মাথায় আসে ১৯৯০ সালে। একদিন তিনি ম্যানচেষ্টার থেকে লন্ডনে যাচ্ছিলেন পাতাল রেলে করে। ট্রেনটিতে যাত্রীদের প্রচন্ড ভিড় ছিল। ট্রেনেই দীর্ঘ ৪ ঘন্টা কাটাতে হয়েছে জে.কে. রাউলিংকে। তখন তিনি মনে মনে ভাবছিলেন নতুন কোনো একটি লেখা নিয়ে। হঠাৎই তার মনে পড়ে একটা অনাথ ছেলের কথা। যে ছেলেটি তার এক পিসি ও পিসেমশাইয়ের কাছে মানুষ হচ্ছে।পিসি ও পিসেমশাই দুজনেই ছিলেন খুব নিন্ম মানসিকতার লোক। ছেলেটি উপর অকথ্য অত্যাচার করতো। শত অন্যায় অত্যাচার সহ্য করত সে। কিন্তু সে জানত না যে, তার মধ্যে রয়েছে এক অলৌকিক ক্ষমতা। তিনি তার মনের ক্যানভাসে একে ফেলেন সেই অনাথ ছেলেটির মুখাবয়ব। মোটা ফ্রেমের চশমা পরা, কালো চুলের হ্যারিকে নিয়ে ওই সময় থেকেই লেখা শুরু করেন জে.কে. রাউলিং।
তারপর ১৯৯৫ সালে শেষ করেন হ্যারি পটার সিরিজের প্রথম গল্পটি। ২০০৭ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত সাতটি বইয়ের প্রথম ছয়টি বই সারা পৃথিবীতে ৩২৫ মিলিয়ন কপিরও বেশী বিক্রী হয়েছে এবং ৬৪টিরও অধিক ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে।মোট সম্পদের পরিমান ৬৫০ মিলিয়ন (পঁয়ষট্টি কোটি) পাউন্ড অথবা ৮৫০ মিলিয়ন (পঁচাশি কোটি) মার্কিন ডলারের কাছাকাছি
জে.কে. রাউলিং এবং হ্যারি পটার সিরিজ প্রকাশের পর থেকে অনেক পুরষ্কার পেয়েছে।
এর মধ্যে সেরা চারটি পুরস্কার হল হুইটেকার প্লাটিনাম বুক এওয়ার্ডস (সবগুলো ২০০১ সালে), তিনটি নেসলে স্মার্টিস বুক প্রাইজ (১৯৯৭-১৯৯৯), দুটি স্কটিশ আর্টস কাউন্সিল বুক এওয়ার্ডস (১৯৯৯ ও ২০০১), উদ্বোধনী হুইটব্রেড বর্ষসেরা শিশুতোষ গ্রন্থ পুরষ্কার, (১৯৯৯), ডব্লিউ এইচ স্মিথ বর্ষসেরা বই (২০০৬)। ২০০০ সালে হ্যারি পটার এন্ড দ্য প্রজনার অব আজকাবান শ্রেষ্ঠ উপন্যাস বিভাগে হিউগো পুরষ্কারের জন্য মনীত হয় কিন্তু পায়নি। তবে ২০০১ সালে হ্যারি পটার এন্ড দ্য গবলেট অব ফায়ার বইটি উক্ত পুরষ্কার ছিনিয়ে নেয়। অন্যান্য সম্মাননার মধ্যে রয়েছে কার্নেগি মেডেলের জন্য ১৯৯৭ সালে মনোনয়ন, ১৯৯৮ সালে গার্ডিয়ান চিলড্রেন'স এওয়ার্ড পুরষ্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান, বিভিন্ন স্থানে স্মরনীয় বইয়ের তালিকায় স্থান, আমেরিকান লাইব্রেরী এসোসিয়েশন, নিউ ইয়র্ক টাইমস, শিকাগো পাবলিক লাইব্রেরী ও পাবলিশার্স উইকলি প্রভৃতিতে সম্পাদকের পছন্ধ এবং প্রস্তাবিত শ্রেষ্ঠ বই তালিকায় অবস্থান |
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours