সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজঃ
ফেসবুকে আচমকাই একটা নোটিফিকেশন। আমার এক পরিচিতার।
নোটিফিকেশন খুলতেই চোখটা আটকে গেল উনার ওয়ালে। কি অদ্ভুত একটা আবেদন নজরে এলো। আসলে অদ্ভুত বলতে এহেন পোস্ট আমি ফেসবুকে আগে কখনও দেখিনি।
পোস্টে লেখা ছিল, “যদি কোনও আগ্রহী পশুপ্রেমী আমার সঙ্গে অন্তত সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ২ টো অব্দি পশুদের সেবায় কাজ করতে চান তবে প্লিজ কন্টাক্ট করুন। খুব খুব প্রয়োজন অবলাগুলোর জন্য। টাকা দেবার সামর্থ নেই আমার। তাও যদি কারও মনে হয় যে রাস্তার পশুদের পাশে থাকবেন, প্লিজ ইনবক্সে যোগাযোগ করুন।”
পোস্টটা পড়ে মনটা কেমন জানি হয়ে গেল।
আমরা কত কিছুই না আবেদন করি ফেসবুকে। তাই বলে রাস্তার স্থায়ী বাসিন্দা প্রায় অবহেলিত অবলা শ্রেণির সেবার জন্য এমন আর্তি। আমরা ভাবতেই পাড়ি, দূর ঘরের খেয়ে কে মোষ তাড়াতে যাবে। তাও আবার ফকটায় দৈনিক তিন ঘন্টা দৌড়? পাগল! মাথা খারাপ হয়েছে নাকি? হ্যাঁ উনার মাথাটা হয়তো খারাপই অনেকে বলতেই পারেন। নয়তো প্রায় একই ধরণে পশুপ্রেমের আবেদন কোনও এক মিডিয়ার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তিনি করবেনই বা কেন? ব্যাস, যা প্রত্যাশিত তাই হল মূহুর্তে। মিডিয়া গ্রুপে এই ধরণের আবেদন কেন? উঠল রে রে প্রতিবাদ। আসলে আমরা কেউ বুঝতেই পারলাম না উনি এক একান্ত নীরব সেবিকা। রাস্তার সারমেয়দের এক মনুষ্যরূপী দেবী। উনার এই পোস্ট বা আবেদন আমাদের সমাজের বহুল অংশের কাছে তাই কেমন কেমন বেমানান লাগবেই। বছর তেতাল্লিশের অবন্তিকা রায়। পূর্বে হলদিয়াতে থাকলেও পরিবারের ব্যবসার সুবাদে তিনি বর্তমানে দুর্গাপুরের বাসিন্দা। এই বয়সেই তিনি প্রায় চিররুগ্ন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে হামেশাই তিনি গৃহবন্দির সামিল। কিন্তু নিজের শারীরিক অসুস্থতাকে থোড়াই পরোয়া। প্রতিদিনই তাঁকে যে দৌড়াতে হয়। কোথায় কিসের জন্য দৌড়ান বলুন তো নিজের শরীরকে অবজ্ঞা করে? আসলে প্রতিদিন শিল্পশহরের কিছু কিছু এলাকায় রাস্তার কুকুরেরা তাঁর জন্য যে অপেক্ষা করেই থাকে। তিনি এসে তাদের খাবার দেন গায়ে হাত বুলিয়ে দেন তবেই তো দুই পক্ষের মানসিক শান্তি। এই তো মাস খানেক আগের কথা। এলাকার ইস্পাত নগরীর এক পিতা পুত্র বাড়ির সামনে একটি কুকুরের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। পুলিশ অভিযোগ পেয়েও ঠুঁটো জগন্নাথ। মুখ পোড়া জ্বলন্ত কুকুরটিও রাস্তায় শুয়ে কাতড়াচ্ছে। গোটা সমাজের একাংশের সে কি বিপ্লবীয়ানা! কিন্তু কুকুরটির সেবায় বেলায় বিপ্লবীদের অধিকাংশের অবস্থান ছিল ‘তোমার দেখা নাই রে’। আর তখনই অকুস্থলে ছুটে এসে সেই কুকুরটি সেবায় নীরব মগ্ন ছিলেন এই অবন্তিকা রায়। অবশ্যই এই আর্ত কুকুরের শুশ্রষার তাঁর সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন হাতে গোনা জনা কয়েক। কুকুরটি এখন সুস্থ। মাত্র সেদিনের ঘটনা। শহরের এলআইসি বিল্ডিংয়ের সামনে অন্য একটি কুকুরের শরীরে কেউ বা কারা দিলেন গরম জল ঢেলে। উফ কি বীরত্বের কাজই না করেছিলেন কেউ বা কারা সম্প্রদায়। সেই খবর কানে আসতে অবন্তিকা রায় বসে থাকতে পারেননি ঘরে। নিজের অসুস্থতাকে শিকেয় তুলে দে দৌড়। পরম যত্নে দিনের পর দিন তিনি পরিচর্যা করে তাকে সুস্থ করে তুলেছেন। কি আজব বলুন তো। আমরা, হ্যাঁ আমরা সমাজের এক বৃহত্তর অংশের তথাকথিত সুস্থ মস্তিষ্কের ভদ্র সভ্যজন কুকুরের জ্বালাতনে বিরক্ত হয়ে কি শাস্তিটাই না দিই ওই অবলাদের! যেখানে পুলিশ সব জেনেও চুপ। পশু বিল্পবীরা মিডিয়ার খবরে নিজে মুখটা দেখেই কেমন যেন শান্ত হয়ে যান। কিছু এনজিও আবার ঘোলা জলে মাছ ধরার লক্ষ্যে ওই কুকুরের সেবার নিরিখে অনুদান খুঁজতেই ব্যস্ত। আর ঠিক উলটো স্রোতে সাঁতার দিয়ে এই অদ্ভুতুরে ভদ্রমহিলা নিজের গাঁটের খরচ করে কুকুরদের ঘরে নিয়ে এসে সারমেয় সেবায় মগ্ন থাকেন দিন রাত, প্রতিদিন। আসলে আমাদের অনেকের তাচ্ছিল্যের মানসিকতায় এই ককুর প্রেমে পাগল (?) ভদ্রমহিলার কাছে যে মিডিয়াও পৌঁছায় না। কারণ উনি প্রচার সর্বস্ব কাজের জানা পৃথিবী থেকে অন্য গ্রহেই বিচরণ করতে বেশি ভালবাসেন। মাত্র দুই তিন আগেকার কথা। ফোন করেছিলাম তাঁকে। আমার জানা এক অসুস্থ কুকুরের বাচ্চার চিকিৎসার উদ্দেশ্যে। জানি উনি না করবেন না সেই ভরসায়। তিনি জানালেন, ‘আমার কিছু ধমনী সরু হয়ে যাচ্ছে। সবে কেমো নিয়েছি। এবার একটা কুকুরকে কেমো দিতে যাচ্ছি।’ যিনি সবে কেমো নিয়েছেন তিনি কিনা চললেন কুকুরকে কেমো দিতে। আসলে দুর্গাপুর থানার অন্তর্গত একটি কুকুর যে ক্যান্সারে আক্রান্ত। তাই সেই এক কুকুর অন্ত প্রান যে নিজের টাকা ব্যয় করে কেমোর ওষুধ কিনে কুকুরটাকে কেমো দিলেন। তাঁর ভাষায়, কে টাকা দেবে বলুন তো? যেটুকু সামর্থ তাই দিয়ে নিজের জন্য ও কুকুরের জন্য কেমোর ওষুধ কিনেছি। কুকুরেরও তো বাঁচার ইচ্ছে হয়। সেটা আর কে বোঝে বলুন। তাই নিজের কাজ নিজে করে যাই রাস্তার কুকুরকে ভালবেসে। কথা বলতে গিয়ে একরাশ কষ্ট বেরিয়ে এল উনার গলা থেকে। তিনি বললেন, ‘সেই অর্থে আমার কোনও জায়গা নেই যেখানে কুকুরদের রেখে রেখে আমি তাদের সেবা করতে পারি। আমি খুব ইচ্ছে কুকুরদের জন্য একটা হোম করার। কিন্তু সামর্থ্য কৈ?’ হয়তো এটাই জীবন। বলতেই পারেন আমাদের এগিয়ে যাবার ডিজিটাল হাল হকিকৎ। তবু বড্ড বাঁচতে ইচ্ছে করে উনারও। আমাদেরও। রাস্তার কুকুরদেও। কিন্তু কতটুকু ফিরে তাকানোর অবসর পাই সরণীর ওই অবলাদের অভিমুখে? উলটে তারা আমাদের উষ্মার শিকার হয় নীরবে। আর নিভৃতে পরম সহিষ্ণুতার পরশ ছড়িয়ে দিয়ে চলেছেন রাস্তার সারমেয়দের এই প্রচারবিমুখ ঈশ্বর। এই ঈশ্বর যে নিজেই কেমো গ্রহণের বেড থেকে উঠেই শুধুই ছুতে চলেছেন এক অসহায় অবজ্ঞার কুকুরকে কেমোর ইনঞ্জেকশন দিতে... (যোগাযোগ-৯৫৯৩৪৭৪৭১২, ৭৫৮৬৮০১১৮৮)
আমরা কত কিছুই না আবেদন করি ফেসবুকে। তাই বলে রাস্তার স্থায়ী বাসিন্দা প্রায় অবহেলিত অবলা শ্রেণির সেবার জন্য এমন আর্তি। আমরা ভাবতেই পাড়ি, দূর ঘরের খেয়ে কে মোষ তাড়াতে যাবে। তাও আবার ফকটায় দৈনিক তিন ঘন্টা দৌড়? পাগল! মাথা খারাপ হয়েছে নাকি? হ্যাঁ উনার মাথাটা হয়তো খারাপই অনেকে বলতেই পারেন। নয়তো প্রায় একই ধরণে পশুপ্রেমের আবেদন কোনও এক মিডিয়ার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তিনি করবেনই বা কেন? ব্যাস, যা প্রত্যাশিত তাই হল মূহুর্তে। মিডিয়া গ্রুপে এই ধরণের আবেদন কেন? উঠল রে রে প্রতিবাদ। আসলে আমরা কেউ বুঝতেই পারলাম না উনি এক একান্ত নীরব সেবিকা। রাস্তার সারমেয়দের এক মনুষ্যরূপী দেবী। উনার এই পোস্ট বা আবেদন আমাদের সমাজের বহুল অংশের কাছে তাই কেমন কেমন বেমানান লাগবেই। বছর তেতাল্লিশের অবন্তিকা রায়। পূর্বে হলদিয়াতে থাকলেও পরিবারের ব্যবসার সুবাদে তিনি বর্তমানে দুর্গাপুরের বাসিন্দা। এই বয়সেই তিনি প্রায় চিররুগ্ন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে হামেশাই তিনি গৃহবন্দির সামিল। কিন্তু নিজের শারীরিক অসুস্থতাকে থোড়াই পরোয়া। প্রতিদিনই তাঁকে যে দৌড়াতে হয়। কোথায় কিসের জন্য দৌড়ান বলুন তো নিজের শরীরকে অবজ্ঞা করে? আসলে প্রতিদিন শিল্পশহরের কিছু কিছু এলাকায় রাস্তার কুকুরেরা তাঁর জন্য যে অপেক্ষা করেই থাকে। তিনি এসে তাদের খাবার দেন গায়ে হাত বুলিয়ে দেন তবেই তো দুই পক্ষের মানসিক শান্তি। এই তো মাস খানেক আগের কথা। এলাকার ইস্পাত নগরীর এক পিতা পুত্র বাড়ির সামনে একটি কুকুরের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। পুলিশ অভিযোগ পেয়েও ঠুঁটো জগন্নাথ। মুখ পোড়া জ্বলন্ত কুকুরটিও রাস্তায় শুয়ে কাতড়াচ্ছে। গোটা সমাজের একাংশের সে কি বিপ্লবীয়ানা! কিন্তু কুকুরটির সেবায় বেলায় বিপ্লবীদের অধিকাংশের অবস্থান ছিল ‘তোমার দেখা নাই রে’। আর তখনই অকুস্থলে ছুটে এসে সেই কুকুরটি সেবায় নীরব মগ্ন ছিলেন এই অবন্তিকা রায়। অবশ্যই এই আর্ত কুকুরের শুশ্রষার তাঁর সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন হাতে গোনা জনা কয়েক। কুকুরটি এখন সুস্থ। মাত্র সেদিনের ঘটনা। শহরের এলআইসি বিল্ডিংয়ের সামনে অন্য একটি কুকুরের শরীরে কেউ বা কারা দিলেন গরম জল ঢেলে। উফ কি বীরত্বের কাজই না করেছিলেন কেউ বা কারা সম্প্রদায়। সেই খবর কানে আসতে অবন্তিকা রায় বসে থাকতে পারেননি ঘরে। নিজের অসুস্থতাকে শিকেয় তুলে দে দৌড়। পরম যত্নে দিনের পর দিন তিনি পরিচর্যা করে তাকে সুস্থ করে তুলেছেন। কি আজব বলুন তো। আমরা, হ্যাঁ আমরা সমাজের এক বৃহত্তর অংশের তথাকথিত সুস্থ মস্তিষ্কের ভদ্র সভ্যজন কুকুরের জ্বালাতনে বিরক্ত হয়ে কি শাস্তিটাই না দিই ওই অবলাদের! যেখানে পুলিশ সব জেনেও চুপ। পশু বিল্পবীরা মিডিয়ার খবরে নিজে মুখটা দেখেই কেমন যেন শান্ত হয়ে যান। কিছু এনজিও আবার ঘোলা জলে মাছ ধরার লক্ষ্যে ওই কুকুরের সেবার নিরিখে অনুদান খুঁজতেই ব্যস্ত। আর ঠিক উলটো স্রোতে সাঁতার দিয়ে এই অদ্ভুতুরে ভদ্রমহিলা নিজের গাঁটের খরচ করে কুকুরদের ঘরে নিয়ে এসে সারমেয় সেবায় মগ্ন থাকেন দিন রাত, প্রতিদিন। আসলে আমাদের অনেকের তাচ্ছিল্যের মানসিকতায় এই ককুর প্রেমে পাগল (?) ভদ্রমহিলার কাছে যে মিডিয়াও পৌঁছায় না। কারণ উনি প্রচার সর্বস্ব কাজের জানা পৃথিবী থেকে অন্য গ্রহেই বিচরণ করতে বেশি ভালবাসেন। মাত্র দুই তিন আগেকার কথা। ফোন করেছিলাম তাঁকে। আমার জানা এক অসুস্থ কুকুরের বাচ্চার চিকিৎসার উদ্দেশ্যে। জানি উনি না করবেন না সেই ভরসায়। তিনি জানালেন, ‘আমার কিছু ধমনী সরু হয়ে যাচ্ছে। সবে কেমো নিয়েছি। এবার একটা কুকুরকে কেমো দিতে যাচ্ছি।’ যিনি সবে কেমো নিয়েছেন তিনি কিনা চললেন কুকুরকে কেমো দিতে। আসলে দুর্গাপুর থানার অন্তর্গত একটি কুকুর যে ক্যান্সারে আক্রান্ত। তাই সেই এক কুকুর অন্ত প্রান যে নিজের টাকা ব্যয় করে কেমোর ওষুধ কিনে কুকুরটাকে কেমো দিলেন। তাঁর ভাষায়, কে টাকা দেবে বলুন তো? যেটুকু সামর্থ তাই দিয়ে নিজের জন্য ও কুকুরের জন্য কেমোর ওষুধ কিনেছি। কুকুরেরও তো বাঁচার ইচ্ছে হয়। সেটা আর কে বোঝে বলুন। তাই নিজের কাজ নিজে করে যাই রাস্তার কুকুরকে ভালবেসে। কথা বলতে গিয়ে একরাশ কষ্ট বেরিয়ে এল উনার গলা থেকে। তিনি বললেন, ‘সেই অর্থে আমার কোনও জায়গা নেই যেখানে কুকুরদের রেখে রেখে আমি তাদের সেবা করতে পারি। আমি খুব ইচ্ছে কুকুরদের জন্য একটা হোম করার। কিন্তু সামর্থ্য কৈ?’ হয়তো এটাই জীবন। বলতেই পারেন আমাদের এগিয়ে যাবার ডিজিটাল হাল হকিকৎ। তবু বড্ড বাঁচতে ইচ্ছে করে উনারও। আমাদেরও। রাস্তার কুকুরদেও। কিন্তু কতটুকু ফিরে তাকানোর অবসর পাই সরণীর ওই অবলাদের অভিমুখে? উলটে তারা আমাদের উষ্মার শিকার হয় নীরবে। আর নিভৃতে পরম সহিষ্ণুতার পরশ ছড়িয়ে দিয়ে চলেছেন রাস্তার সারমেয়দের এই প্রচারবিমুখ ঈশ্বর। এই ঈশ্বর যে নিজেই কেমো গ্রহণের বেড থেকে উঠেই শুধুই ছুতে চলেছেন এক অসহায় অবজ্ঞার কুকুরকে কেমোর ইনঞ্জেকশন দিতে... (যোগাযোগ-৯৫৯৩৪৭৪৭১২, ৭৫৮৬৮০১১৮৮)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours