কৃপা বসু, লেখিকা, কলকাতাঃ মানুষ কত টাকা রোজগার করে বাওয়া! দুটো করে একাউন্ট খোলে ব্যাঙ্কে। মাকে জিগ্যেস করি এত্ত এত্ত টাকা জমিয়ে ওরা কি করে মা? মায়ের বুক টনটনিয়ে কেঁপে ওঠে, অর্থের অভাবে ভাইয়ের হার্টে ফুটো সারায়নি ডাক্তার। দুম করেই ভাইয়ের খাতায় লাল কালি পড়লো, ঘরের ভেতর দু এক পশলা বৃষ্টি হলো, পাড়া থেকে একটা নাম মুছে গেল। পাশের বাড়ির ছেলেটা দশম শ্রেণীর পরীক্ষায় ফেল করলো, সেই যে দরজায় হুড়কো টেনে ঘরে ঢুকলো, তারপর তাকে আর কখনো দেখিনি ঘুড়ির পেছনে লাটাইয়ের মতো পাক খেতে খেতে দৌঁড়াতে। পরে শুনেছিলাম পাপোষের নীচে একটা সুইসাইড নোট রেখে গিয়েছিল, সেদিনও মেঘে মেঘে ঠোক্কর লেগে বেয়াদব ঝড় উঠেছিল। আচ্ছা এটেনশন প্লিজ! ক্যান ইউ টেল মি...ছায়া প্রকাশনীর বইতে শিরা কাটার যন্ত্রনা লেখা নেই কেন? বলতে পারবেন কেউ? এই শহরে কেউ কাঁদেনা, সক্কলে সক্কলকে ভালোবাসে, কেউ চিৎকার করে গলা ফাটায়না তাইনা মা? মায়ের কাছে এসব ঘ্যানঘ্যানানি মার্কা প্রশ্ন করি সারারাত। এই শহরে কারোর কোনো দুঃখ নেই, কিংবা ব্যথারা অসাড় হয়ে এসেছে, যেভাবে কমে আসে ধার চাঁদের আলো চিরে খান খান করে দেওয়া নিস্তেজ রাতের। মা বলে "নারে পাগল আম্বানির মতো সেয়ানা দালালের কাছে মানুষ তার চোখ, কান, নাক বেচে দিলেও চুপিচুপি ঘুমের ভেতর হাজার হাজার স্বপ্নের চাষ করে তারা, আম্বানিও টের পায়নি সেটা।" আমাদের আগের বারের কাজের দিদি ঘর মুছতো যত্ন করে, কিন্তু পিঠে বেল্টের দাগ গুলো মুছতে পারতো না। একদিন শুনলাম কাঠের জানালা ভেঙে বন্যা হলো ঘরে, কাজের দিদি তার বরকে পুড়িয়ে মারলো, তারপর নিজেও গায়ে আগুন দিলো। সে নাকি তার স্বামীকে ডিগবাজি খেতে খেতে বেশ্যাপাড়ার দিকে গড়িয়ে যেতে দেখেছিল, যেভাবে নরম গাল বেয়ে গড়ায় কপালের ঘাম। কিংবা ধরো দুটো চারটে সূর্য যেমন গড়ায় যুবতী মেয়ের সিল্কি ওড়না ছুঁয়ে... আর..আর তোমার মনে আছে ও পাড়ার নাজমা দির কথা! ফিক ফিক করে দাঁত বের করে হাসতো, ঝলমলানো বিকেলের মতোই উড়ে উড়ে বেড়াতো। একদিন কান্নার রোল উঠলো ওদের ঘরে, আহা কি ছন্দ কি তাল, খাপে খাপ পুরো! যেন কোনো শ্মশানে বাজছে রাক্ষুসী কীর্তন। আমরা সব জড়ো হলাম নাজমা দির বাড়ি। শুনলাম নাজমা দি পোয়াতি ছিল, পেটে কুঁড়ি ফুটেছিলো। ছেলেটির নাম জানা যায়নি, তবে যদ্দুর মনে পড়ছে দেবাশীষ দা ছাড়া এমন ভয়ংকর পবিত্র কাজ আর কারোর হবেনা। পাশের ঘরে জি বাংলা চলছিল, জি বাংলার একটা ট্যাগ লাইন আছে "জীবন মানে জি বাংলা"... তাহলে মা নাজমা দি জি বাংলা দেখেও ঘুমিয়ে পড়লো কেন গোরস্থানে? বলতে পারো... মানুষ টাকা জমিয়ে পাহাড়সমুদ্রে হানিমুন করতে যায়, রেস্টুরেন্টে খাসির মাংস খায় হাড় ছাড়িয়ে, ঢকঢক করে প্রেমিক প্রেমিকার আদর গিলে খায়। গোপনে নিম্নাঙ্গের চিকিৎসা করে, উহু কাকা শারীরিক অসুখের ছটফটানি বড় বালাই যে! কিন্তু...কিন্তু মনের চিকিৎসা কেন করেনা মা? মানুষ এত টাকা জমায়, মানুষ মানুষ জমায় না কেন? মানুষ মন জমায় না কেন? মানুষ ভালোবাসা জমায় না কেন? কেন...কেন...?


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours