arthoniti
সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজঃ সমুদ্রগর্ভ থেকে উত্তোলিত হয়ে অজস্র পথ অতিক্রম করে তবেই সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায় পেট্রোপণ্য। ক্রেতাদের চোকাতে হয় চড়া মুল্য। চলে রাজনীতি। বিক্রিজাত পণ্যের উপর কর বসে যায় পঞ্চাশ শতাংশের ধারেপাশে। টাকার অবমুল্যায়নের ধাঁধায় প্রভাবিত হয় ভারতের আভ্যন্তরিন বাজার। মূলত আরব দেশগুলির থেকে উৎপাদিত অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম তেলের দাম বিশ্ববাজারের জন্য নির্ধারণ করে ওপেক। ওপেকের দড় ওঠা নামার উপর নির্ভর করে আমাদের দেশীয় পেট্রোপণ্যের দাম। ওপেক অপরিশোধিত জ্বালানীর দাম বৃদ্ধি করলে দেশের পেট্রোপণ্যের দাম চড়া হবেই। এটাই দস্তুর। এই সারত্বত্তটা কিন্তু বিরোধীরা জেনে বুঝেও কেন্দ্রের সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার রাস্তায় হাঁটেন শুধুমাত্র সস্তার সুরসুরি কুড়াতে। অথচ যে আজ বিরোধী আগামীকাল সে শাসক হলেও বিগত দিনের নিজের বিরোধী অবস্থান ভুলে পেট্রোপণ্যের দাম বৃদ্ধিতেই সীলমোহর লাগিয়ে দেয়। ভারতীয় রাজনীতিতে এই নীতিহীন রাজনীতির সুবিধা আপাতত প্রায় সব দলই ভোগ করে থাকে। কেউ রাজ্যে বা কেউ কেন্দ্রীয় স্তরে। একটি পরিসংখ্যানেই আমরা চমকে যেতে বাধ্য। দেশ যদি অপরিশোধিত তেল ওপেকের মুল্যবাবদ আমদানি করে লিটার প্রতি ৩৫.১২ টাকা, তা এই রাজ্যে পরিশোধিত পেট্রোল হিসেবে বিক্রি হয় ৭৫.২৮ টাকা দড়ে। এর মধ্যে ডিলারের প্রাপ্তি থাকে ৩.৬১ টাকা। অপরিশোধিত থেকে শোধিত হতে ব্যয় হয় ১.০৭ টাকা। বাকি সব টাকা কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের লাগু করা কর ও জিএসটি। এই বিপুল পরিমান কর ও জিএসটির সুবিধা কিন্তু ভোগ করছে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্য সরকারগুলি। অথচ জ্বালানীর দাম বাড়লেই রাজ্যের শাসক দল নেমে পড়ে কেন্দ্রের বিরোধিতায়। যেন দাম বৃধির যাবতীয় দায় কেন্দ্রের। অথচ দাম বাড়লেই করের শতাংশের হারে রাজ্যকরের মূল্যও যে বেড়ে যায় তা নিয়ে কিন্তু স্পিকটি নট। বিভিন্ন রাজ্যের করের নির্ধারণ সীমা ভিন্নতর হওয়ায় জ্বালানীর দামও একেক রাজ্যে একেক রকম। আমাদের রাজ্যে যখন এক লিটার পেট্রোল বিক্রি হয় ৭৫.২৮ টাকায় তখন পাশ্বর্বর্তী দেশগুলিতে সেখানকার ক্রেতারা কেনেন বেশ অবাক করা দামে। পাকিস্তান, বাংলাদেশ আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কাতে যথাক্রমে লিটার পিছু বিক্রি হয় ভারতীয় মূল্যে ৫১ টাকা, ৬৯ টাকা, ৪৭ টাকা ও ৫৯ টাকা। মায়ানমারে ৪৩ টাকা ও চীনে ৭৬ টাকা। লক্ষনীয় বিষয় চীন ও ভারতেই কিন্তু পেট্রোপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। আসলে দেশের বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যার চাপ এবং মাথাপিছু আয়ের উৎস ও ব্যয়ের পরিমাপই আকাশছোঁয়া মুল্যের অন্যতম বাধ্যবাধকতা। তারসঙ্গে লাগাতার ডলারের নিরিখে টাকার অবমূল্যায়ন কেন্দ্রীয় সরকারকে এই পণ্যের কর পরিকাঠামোকে উর্ধমুখী করতে বাধ্য করিয়েছে। অন্যথায় দেশীয় কোষাগারে ব্যাপাক ঘাটতি পড়বে। এই মূল আর্থিক ত্বত্ততা বিরোধীরা জানলেও বিকল্প পথ না বাতলে শুধুই সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে রাজনৈতিক আখেড় গোছাতে। ঠিক এক বছর আগে ডলার প্রতি টাকার মুল্য ছিল ৬৪ টাকা। বর্তমানে সেই মূল্য নেমে দাঁড়িয়েছে ৬৯.৭৬ টাকা। সুতরাং বিশ্বের বাজারে ডলারের মোকাবিলা করতে দেশীয় বাজারে পেট্রোপণ্যের দাম উর্ধমুখী রাখা ছাড়া ভারতের সামনে আর কোনও বিকল্প নেই। দেশের স্বার্থ সিকেয় তুলে বিরোধীরা চিৎকার করে গলা ফাটাতে পারেন যুগ যুগ ধরে। কিন্তু সদর্থক বিকল্প নিদান দেওয়ার বেলায় চল পালাই চল। আসলে আমাদের দেশে দায়িত্বহীন বিরোধিতা বড়ই প্রকট। যা পেট্রোপণ্যের মূল্যের ময়দানে বিভিন্ন সরকার কোনঠাসা হয় কিন্তু পুরনো নীতি বদলায় না।
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours